পশ্চিম বাঙলার বাজেট অর্থাৎ ব্যয়মাত্রিক মরুভূমিতে এক পশলা বৃষ্টির মত

লেখক
প্রভাত খাঁ

তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মাননীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ত্তমানে ২০২১ এর অগাষ্ট মাস থেকে ২০২২ এর মার্চ পর্য্যন্ত যে বাজেট রাজ্যবিধানসভায় পেশ করে পশ্চিম বাঙলার সাধারণ মানুষের মুখে হাসি একটু ফোটালেন সেটাকে মান্যতা দিতেই হয়৷ এই বাজেটে জোর দেওয়া হয়েছে কৃষি,শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও গ্রামোন্নয়ণে৷ ২০২০-২১ এর তুলনায় ২০.৭৫ শতাংশ বাড়িয়ে মোট ৩ লক্ষ, ৮ হাজার ৭২৭ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার৷

রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় এই বাজেট পেশ করলেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ দেখা গেল তৃণমূল যে প্রতিশ্রুতি নির্বাচনীকালে দিয়েছিল সেইগুলির মান্যতা দিয়েছে৷

সমীক্ষায় দেখা গেল বাম আমলের শেষ বাজেট ২০১০-১১ সালের বাজেটের চেয়ে কৃষি খাতে, স্কুলশিক্ষা খাতে, উচ্চশিক্ষা খাতে,  স্বাস্থ্য খাতে, পানীয় জল সরবরাহ খাতে বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে যদিও টাকার মূল্যমান ১০ বছরে বহুগুণ কমেছে৷ জিনিসের দাম এমনই বাড়ানো হয়েছে তা হলো একটি সাধারণ তেলেভাজার দাম ৫ টাকা!

এক নজরে দেখা যাক কোন খাতে কতটা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে--- কৃষিখাতে  ৯হাজার ১২৫ কোটি, কর্ষক বন্ধুর বরাদ্দ দ্বিগুণ হয়ে ২ হাজার কোটি টাকা৷ স্কুলশিক্ষার বরাদ্দ ৩৫ হাজার ১৭০ কোটি ৬৭ লক্ষ, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের জন্য ২৫০ কোটি, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রোড ট্যাক্স মকুব৷ অক্টোবর পর্যন্ত জমি, বাড়ি রেজিষ্ট্রেশনের ক্ষেত্রে সকল রেট/বাজার দরে ১০ শতাংশ ছাড়, স্ট্যাম্প ডিউটিতে ছাড় ২ শতাংশ৷

স্বাস্থ্যে বরাদ্দ হয়েছে ১৬ হাজার ৩৬৮ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা৷

কোভিড মোকাবিলায় ১ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা

পঞ্চায়েত, গ্রামোন্নয়ণে ২৩ হাজার ৯৮৩ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা৷

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে বরাদ্দ ১০ হাজার কোটি টাকা৷

তপসিলি জাতি ও উপজাতির মহিলারা পাবেন মাসে ২ হাজার টাকা, অন্যরা ৫০০ টাকা৷

 বিনামূল্যে সকলকে খাদ্য শস্যের জন্য ১ হাজার ৪ কোটি টাকা৷ গত ১০ বছর মমতার শাসনকালে কেন্দ্রের সরকার বিশেষ করে বিজেপির শাসনের ৭ সাত বছর কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রাপ্য টাকার যে অংশ হয়, তার হাজার হাজার কোটি টাকা যেহেতু পশ্চিম বাংলা বিরোধী দলের দ্বারা শাসিত তাই বঞ্চিত হয়েছে কেন্দ্রের দ্বারা৷ তাতে সমস্যা সংকূল পশ্চিম বাঙলার মানুষ রাজ্য সরকারের দ্বারা যতটা সেবা পাওয়া দরকার ছিল সেটা থেকে বঞ্চিত হয়েছে টাকার অভাবে৷ বার বার  টাকা চেয়েও কেন্দ্র মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মানুষের কাছে তৃণমূলকে হেয় করতে৷ তাই ২০২১-এর নির্বাচনে সবদিক থেকে তৃণমূল হঠাতে কেন্দ্রের বিজেপির নেতৃত্ব পশ্চিম বাঙলাকে জয় করতে প্রাণপণ চেষ্টা করে৷ তারা যেভাবে রাজ্যের নির্বাচনে জয় লাভে রাজশক্তিকে কাজে লাগায় অনৈতিকভাবে বাঙলার জনগণ তার সমুচিত জবাব দিয়ে বুঝিয়েছেন৷ তাই মমতা তৃতীয়বার নির্বাচনে জয়ী হয়ে তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন বাজেটে৷

রাজ্যের বণিক শিল্প মহল এই বাজেটের প্রশংসা করেছেন৷ কারণ চরম অনটনে সরকার জনগণের সেবা দেবার ব্যবস্থা করেছেন, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেননি৷ আর সকল মহলও কিছুটা আশান্বিত হয়েছেন৷

তবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন--- এই বাজেট দিশাহীন৷ এই বাজেট সাধারন মানুষের স্বার্থবাহী নয়৷ তবে চরম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে , করোনায় পশ্চিম বাঙলা যেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাপনের  গ্লাণি বহন করে চলেছেন তাতে এই বাজেটে কতটা যে মানুষের আর্থিক  সংকট ঘুচবে সেটা মহাকালই বলতে পারেন৷

তবে সারা পশ্চিম বাঙলার চরম দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও অসহায় দিন আনা  দিন খাওয়া মানুষ ও কলকারখানা বন্ধ থাকায়  শ্রমিকদের যে জীবন যন্ত্রণা সমাধানে ঐকান্তিক প্রচেষ্টার আশু প্রয়োজন৷ রাজ্যের অর্থনৈতিক দুরবস্থাটা শোচনীয় তবে এই বাজেট অসহায় জনগণকে কিছুটা সাহায্য করবে বলেই মনে হয়৷ তবে রাজ্যের চরম দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করাটা রাজ্য সরকারের প্রাথমিক কর্ত্তব্য৷ সেটার কিন্তু বড়ই অভাব প্রশাসনের৷

আর কেন্দ্র সরকার তো জন্ম থেকেই বেচারাম হয়ে দেশটা সর্বনাশের পথেই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন৷ এটা যে কবে রক্ষা পাবে সেটাই বড় চিন্তার বিষয়! রাজ্যকে স্বনির্ভর হতে হবে ব্যাপকভাবে ব্লকভিত্তিক সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমে৷ এদিকে অবশ্যই রাজ্য সরকার নজর দিক৷ মাসিক অর্থ সাহায্য সাময়িক কিছু সুবিধা হবে তাতে স্থায়ী আর্থিক অভাব দূর হওয়া অসম্ভব৷

চরম বেকারত্ব রাজ্যে দুর্নীতিকেই প্রশ্রয় দেয়৷ এটাকে দূর করতে  আন্তরিক হতে হবে স্থায়ী আর্থিক অভাব দূরীকরণের মধ্যে দিয়ে৷ এই ব্যায়মাত্রিকায় আয়ের উৎস কী তা জানা গেল না৷ তাই এই ব্যয়মাত্রিকা কী  ডেফিসীট ব্যায়মাত্রিকা? তাই সরকারকে খুবই কৃচ্ছসাধন করতে হবে মানুষ এর কল্যাণে৷