পশ্চিম রাঢ়ের মানুষদের জীবন–যন্ত্রণা

লেখক
সমীর সিংহ

 রাঢ় বলতে কোন্ অঞ্চলকে বোঝায় ?

সমগ্র বাংলা বা গৌড়দেশ হ’ল প্রকৃপক্ষে বাঙালীদের নিজস্ব বাসভূমি৷ মহান্ দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন, ‘‘আমাদের এই গৌড়দেশকে সামগ্রিক ভাবে গৌড়দেশ অথবা পঞ্চগৌড় অথবা বাংলাদেশ–যে কোন একটি নাম দেওয়া যেতে পারে৷ বাঙালীস্তানও বলা যেতে পারে কারণ যে অর্থে তামিলনাড়, রাজস্থান, নাগাল্যাণ্ড, মিজোরাম নামগুলি চলছে হুবহু সেই অর্থেই গৌড়দেশকে ‘বাঙালীস্তান’ বললেও মহাভারত অশুদ্ধ হবে না৷ ওতে আঁতকে ওঠার কী আছে বরং ওই নাম এই পরিচিতিই বহন করবে যে দেশটা বাঙালীদের মাতৃভূমি৷’’ (বাঙলা ও বাঙালী)

বাঙালীস্তানের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নাম হচ্ছে গৌড় দেশ৷ এই দেশ পঞ্চ–গৌড় নামে প্রসিদ্ধ ছিল৷ কারণ এর ছিল পাঁচটি মৌলিক বিভাজন৷ সেগুলি হচ্ছে রাঢ়, সমতট, বরেন্দ্র, মিথিলা ও বঙ্গ বা ডবাক৷ সমতট হচ্ছে গঙ্গা–ব্রহ্মপুত্রের ব–দ্বীপ এলাকা৷ সমতটের উত্তরে অর্থাৎ গঙ্গা ও পদ্মার উত্তর তীরে ও কোশী নদীর পূর্বতীরে রয়েছে বরেন্দ্র৷ বরেন্দ্র ও সমতটের পূর্বদিকে অতিমাত্রায় যে নদীমাতৃক অংশ আছে তার নাম বঙ্গ৷ রাঢ় হচ্ছে ঢেউ খেলানো লাল মাটির দেশ৷ ‘রাঢ়’ শব্দটি প্রাচীন অষ্ট্রিক ভাষার শব্দ, যার মানে লাল মাটির দেশ৷ চীন এই ভূমিকে নাম দিয়েছিল ‘লাতি’, গ্রীস নাম দিয়েছিল ‘রিডি’ আর আর্যরা নাম দিয়েছিল ‘রাট্ঠ’৷

এই রাঢ়ের রয়েছে দুটি অংশ পূর্বরাঢ় ও পশ্চিমরাঢ়৷ পূর্বরাঢ়ের মধ্যে আছে পশ্চিম মুর্শিদাবাদ, বীরভূম জেলার উত্তরাংশ, পূর্ব বর্ধমান, হুগলী, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস থানা৷ পশ্চিম রাঢ় বলতে বোঝায় (১) সাঁওতাল পরগণা (২) বীরভূমের অধিকাংশ অংশ (৩) বর্ধমানের পশ্চিমাংশ (৪) ইন্দাস থানা বাদে বাঁকুড়া (৫) পুরুলিয়া জেলা (৬) ধানবাদ জেলা (৭) হাজারিবাগ জেলার কাসমার, পেটারওয়াড়, গোলা, গিরিডি, রামগড় (৮) রাঁচি জেলার পূর্বাংশ (সিল্লি, সোনাহাতু, বুন্দু, তামার) (৯) মেদিনীপুর জেলার ঝাড়গ্রাম, সদর উত্তর ও সদর দক্ষিণ মহকুমা৷

পশ্চিম রাঢ়ের অধিবাসী কারা?

বাঙালীস্তান তথা পঞ্চগৌড়ের একটি অংশ হচ্ছে ‘রাঢ়’৷ সুতরাং প্রথমেই বলা প্রয়োজন রাঢ়ের অধিবাসীরা হচ্ছে বাঙালী৷ এখানে অন্য কিছু ভাবার কোন সুযোগ নেই, যুক্তিও নেই৷ তবে বর্ত্তমানে পশ্চিম রাঢ়ে দুই শ্রেণীর অধিবাসী আছে৷ (১) যারা প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে এই অঞ্চলের বাসিন্দা ও যারা বহিরাগত কিন্তু দীর্ঘদিন বাস করার ফলে স্থানীয় অধিবাসী হয়ে গেছে৷ (২) অন্য শ্রেণীর অধিবাসী হচ্ছে ‘‘ভাসমান জনগোষ্ঠী’’৷

(১) রাঢ়ের মূল অধিবাসী হল মুণ্ডা, কোল, মাহাতো, সদগোপ, লোধা, মালপাহাড়িয়া, পাহাড়িয়া, ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈদ্য, বাগ্দী, ডোম, কৈবর্ত্ত, দুলে, বাউরী, শবর, লোহার, কুর্মী, করমালি, কিসান, গোন্দ, চের, ডাকরা প্রভৃতি৷ এরা সকলেই জাতবাঙালী ও রাঢ়ের আদি বাসিন্দা৷ শশাঙ্কের আগে পর্যন্ত এই অঞ্চলে কোন জাত–ধর্ম–বর্ণভেদ ছিল না৷ পৌরাণিক যুগের প্রসার ও রাজতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতায় পরবর্ত্তীকালে সমাজে ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈদ্য ও অন্যান্য শ্রেণীর সৃষ্টি হয়৷ যাই হোক, এই সব জাতবাঙালীদের মধ্যে বৃহত্তম জনগোষ্ঠী হল মাহাতো৷ পশ্চিম রাঢ়ে এদের সংখ্যা প্রায় আশি লক্ষ৷ এরাই প্রথম চাষবাস আবিষ্কার করেছিল, বৌদ্ধিক প্রাখর্যেও এরা ছিলেন অগ্রসরমান জনগোষ্ঠী৷ তাই এদের সকলে ‘মহাত্মন’ বলে সম্বোধন করতো৷ এই ‘মহাত্মন’ থেকে মাহাতো শব্দটি এসেছে৷

এদের সকলের ভাষা, চাল, চলন, পোষাক–পরিচ্ছদ,  জীবন সংস্কৃতি সবই প্রমাণ করে এরা জাত–বাঙালী৷ ব্রিটিশ সরকার ভেদনীতি প্রয়োগ ক’রে এদের মধ্যে কোনো কোনো গোষ্ঠীকে ‘ট্রাইব্যালস্’ ও কোনো কোনো গোষ্ঠীকে ‘সিডিউল্ড কাষ্ট’ বানিয়ে বাঙলার মূল জীবনস্রোত থেকে মানসিক দিক থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল, আর করেছেও তাই৷ ব্রিটিশরা চলে যাবার পরেও শোষক–সাম্রাজ্যবাদীর্ একই ভাবে উপরিউক্ত জনগোষ্ঠীগুলিকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে চেয়েছে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য৷

পশ্চিম রাঢ়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী হল সাঁওতাল– ওঁরাও জনগোষ্ঠী৷ দেড়শ–দুশো বছর আগে মন্বন্তরের সময় এরা মধ্যপ্রদেশ থেকে এসব অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে৷ ১৭৫০ থেকে ১৭৭২ সাল পর্যন্ত রাঢ়ে চলেছিল এক ভয়াবহ রাজনৈতিক–অর্থনৈতিক পরিস্থিতি৷ বর্গী হাঙ্গামা, ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সঙ্গে নবাবের যুদ্ধ ও মন্বন্তরে রাঢ় একেবারেই বিধ্বস্থ হয়ে গিয়েছিল৷ রাঢ়ের অনেক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে উত্তর, উত্তর–পূর্ব, পূর্ব ও দক্ষিণ বাঙমলার দিকে পা বাড়ায়৷ পশ্চিম রাঢ়ের বেশ কিছু অংশ হয়ে পড়েছিল পরিত্যক্ত এলাকা৷ এই সময় মধ্যপ্রদেশেও চলছিল খরা ও অজন্মা৷ খরা–পীড়িত সাঁওতালরা তখন ভাগ্যের অন্বেষণে অন্যত্র পাড়ি জমাচ্ছিল৷ হেষ্টিংস ও ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আনুকূল্যে তারা বাঙালীস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবেশ করে বসবাস করতে শুরু করে৷ অর্থাৎ দেড়শ বছর আগে সাঁওতালরা বহিরাগত ছিল৷ আজ আর তারা বহিরাগত নয়৷

তারা সকলেই আজ বাঙালীস্তানের স্থায়ী বাসিন্দা৷ এখন কথা হচ্ছে সাঁওতালরা যদি বাঙালীস্তানের স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে এখনও চিন্তা না করে তবে তারা সহজেই সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের এজেন্ট কংগ্রেস–কম্যুনিষ্ট সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির হাতিয়ারে পরিণত হবে৷ তাতে তাদের নিজস্ব অস্তিত্ব বিপন্ন হবে৷ তাই তাদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে ভুল পথ ছেড়ে ‘‘বাঙালীস্তানের’’ আন্দোলনের সামিল হতেই হবে৷

(২) পশ্চিম রাঢ়ের পূর্বকথিত দ্বিতীয় শ্রেণীর জনগোষ্ঠীর কথা এই প্রসঙ্গে আসবে যারা ভাসমান জনগোষ্ঠী৷ এরা প্রকৃতই বহিরাগত৷ জীবিকার সন্ধানে রাঢ়ের শিল্পাঞ্চলে ও কলকারখানায় ভিড় জমিয়েছে৷ ধনকুবের টাটার সঙ্গে সহযোগিতার সূত্রে মাড়োয়াড়ী পুঁজিপতিরা হিন্দুস্তানের নিজস্ব রাজ্যগুলি থেকে শ্রমিক কর্মচারী আমদানী করে সম্পদ শোষণের দুমুখী পথকে প্রসারিত রেখেছে৷ একদিকে স্থানীয় জনসাধারণকে চাকরী দেওয়া হচ্ছে না, অন্যদিকে বহিরাগত কর্মচারচীরা বেতন হিসেবে যে টাকা পাচ্ছে তার প্রায় সবটুকুই চলে যাচ্ছে তাদের নিজস্ব মূল অঞ্চলে৷ অর্থাৎ বেতন লব্ধ অর্থে রাঢ়ের মানুষের কোন উন্নতি হচ্ছে না৷ শুধু তাই নয় পশ্চিম রাঢ়ের সমস্ত খনিজ সম্পদকে কেন্দ্রীয় সাম্রাজ্যবাদীরা ওয়াগান বোঝাই ক’রে বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে, আর কাঁচামালের কিছুটা গুজরাট, রাজস্থান, পঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশের কলকারখানায় পাঠাচ্ছে৷ সেখানে পণ্যসামগ্রী হয়ে আবার তা বাজারে আসছে৷ এই ভাবে কাঁচামাল লুন্ঠন, আবার লুন্ঠিত কাঁচামালকে পণ্যে পরিণত করে তা রাঢ়ের বাজারে বিক্রি করে দ্বিতীয় দফায় শোষণ করছে৷ স্থানীয় মানুষ তার নিজের সম্পদকে এলাকার উন্নতির কাজে লাগাতে পারছে না৷

রাঢ়ের শিল্পাঞ্চলে বাইরে থেকে আসা এই লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ‘‘ভাসমান জনগোষ্ঠী’’ রূপে রয়েছে৷ তারা অন্য অঞ্চলের বাসিন্দা৷ পশ্চিম রাঢ়ে তারা এসেছে কেবল জীবিকার জন্যে৷ স্থানীয় মানুষ, মাটি ও সমাজ সম্বন্ধে এদের কোন আগ্রহ বা দরদ নেই৷ তাই এই অবস্থায় পশ্চিম রাঢ়ের মানুষদের উচিত (যাদের কথা আগেই বলা হয়েছে অর্থাৎ মাঝি, ডাকরা, কুইরী, মাহাতো, লোধা, সাঁওতাল, সদগোপ, মুণ্ডা, মালপাহাড়ী, ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈদ্য, কৈবর্ত প্রভৃতি) তীব্র আন্দোলন ত্বরান্বিত করে দ্বিতীয় শ্রেণীর ভাসমান জনগোষ্ঠীর বদলে রাঢ়ের সন্তানদের কর্মের ব্যবস্থা করা, সেই সঙ্গে বাঙালীর নিজস্ব অঞ্চল ‘‘বাঙালীস্তান’’ তৈরী করা৷ প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন স্থানীয় মানুষ যাতে এই আন্দোলন করতে না পারে তার জন্যে সাম্রাজ্যবাদীরা প্রচুর টাকা ঢেলে রাজনৈতিক দলগুলির দ্বারা ভেদ–বিভেদ সৃষ্টি করে চলেছে৷ এই সব দূর করে রাঢ়কে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সামিল হতেই হবে৷

পশ্চিম রাঢ় কি প্রাচীন ঝাড়খণ্ডের অন্তর্ভুক্ত?

‘ঝাড়’ শব্দটি দেশজ বাংলা শব্দ৷ এর অর্থ হল বন বা জঙ্গল৷ ‘খণ্ড’ হল সংস্কৃত শব্দ৷ ‘খণ্ড’ শব্দের অর্থ হল বিভাগ অঞ্চল বা এলাকা৷ ‘ঝাড়খণ্ড’ শব্দ একত্র করলে দাঁড়ায় জঙ্গল এলাকা৷ ‘ঝাড়খণ্ড’ নামটির উল্লেখ রয়েছে ‘‘শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত’’ গ্রন্থের সপ্তদশ খণ্ডে৷ পশ্চিম রাঢ়ের বিস্তৃত অঞ্চলকে কেউ কেউ ঝাড়খণ্ডের অন্তর্ভুক্ত করতে চান৷ এই অঞ্চল হচ্ছে সাঁওতাল পরগণা, মানভূম, সিংভূম, ময়ূরভঞ্জ, রাঁচি জেলার পাঁচ পরগণা, হাজারিবাগ জেলার গোলা, রামগড়, কাসমার, পেটারওয়াড় ও জেরিডি প্রভৃতি৷ কিন্তু এগুলি প্রাচীন কালে কোনদিনই ঝাড়খণ্ডের অন্তর্ভুক্ত ছিল না৷ পশ্চিম রাঢ়ের সীমানা পরেশনাথের পাহাড় পর্যন্ত বিস্তৃত৷ ধানবাদ জেলার টুন্ডি ও গিরিডি জেলার পেটারওয়াড়–এর মাঝামাঝি জায়গায় এই পরেশনাথ পাহাড়৷ এই পরেশনাথ পাহাড় থেকে শুরু করে ভাগীরথীর পার পর্যন্ত (বর্তমান হাওড়া) বিস্তীর্ণ অঞ্চল হচ্ছে রাঢ় অঞ্চল৷ আর এর মধ্যে পশ্চিম অংশকে বলা হতো পশ্চিম রাঢ়। রাঁচিকে কেউ কি দিল্লী বলবে? তাহলে রাঢ়? অঞ্চলকে ঝাড়খণ্ড বলা যাবে কি করে? রাঢ়ের ভৌগোলিক পরিচিতি প্রমাণ করে এ বাঙালীস্তানের অবিচ্ছেদ্য অংশ৷

ডাল্টন, রিজলা, হান্টার প্রমুখ নৃ–তত্ত্ববিদরা বাঙালীর নৃ–তাত্ত্বিক পরিচয় সম্পর্কিত গবেষণা সূত্রে সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, বিশাল বাঙলার বিচিত্র জনগোষ্ঠী মূলতঃ অষ্ট্রিক–দ্রাবিড়–নিগ্র্ সংমিশ্রণজাত ও এদের ভাষা হচ্ছে বাংলা৷ হাজার হাজার বছর আগে থেকে রাঢ়ে যে রাজ্যগুলি গড়ে উঠেছিল সেই রাজ্যগুলিতে রাজত্ব করতো এই বাঙালী জনগোষ্ঠীগুলি৷ মৌর্য যুগ থেকে ব্রিটিশ যুগ পর্যন্তও রাঢ়ে প্রায় ১৮টি সামন্ত রাজ্য ছিল৷ রাজ্যগুলি নামের শেষে ‘ভূম’ শব্দ ব্যবহার করতো৷ যেমন বীরভূম (সাঁওতাল পরগণার রাজমহল ও পাকুড় মহকুমা, বীরভূম ও কাঁদি মহকুমার রাঢ় অংশ), সিংহ পদবীধারী কায়স্থ রাজারা রাজত্ব করতেন গোপভূম (সাঁওতাল পরগণার দেবঘর ও দুমকা মহকুমা, বীরভূমের শিউরী সদর মহকুমা), ঘোষ পদবীধারী সদগোপ রাজারা রাজত্ব করতেন সামন্তভূম (সাঁওতাল পরগণার জামতুরা মহকুমা ও বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর ও আসানসোল মহকুমা), সামন্ত পদবীধারী উগ্র ক্ষত্রিয় রাজারা রাজত্ব করতেন শিখরভূম (ধানবাদ জেলা ও তার পশ্চিমে সমেতশিখর বা পরেশনাথ পাহাড় পর্যন্ত৷ এরই উত্তর ও পশ্চিমে ছিল ঝাড়খণ্ড রাজ্য৷ তাই রাঢ়কে ঝাড়খণ্ড বলা মূর্খামি ছাড়া কিছু নয়) মানভূম (পুুরুলিয়া জেলা, চাষ–চন্দকেয়ারী–বোক্, হাজারিবাগের জেরিডি, পেটারওয়াড়, কাসমার, গোলা, রামগড়) রাজা মানসিংহ দেবের নামে মানভূম বরাহভূম (পুরুলিয়া জেলার দক্ষিণাংশ অর্থাৎ বরাহবাজার, বলরামপুর, বান্দোয়ান, বাগমুণ্ডী, সিংভূমের চাণ্ডিল পটমদা, ইচাগড়, নিমডি, রাঁচির পাঁচ পরগণীয়া) আদিবরাহ ও কেশবরাহ নামে দুই ভাই রাজত্ব করতেন সিংভূম (সিংভূমের মধ্য ও পশ্চিমাংশ) সিংমুণ্ডা রাজারা রাজত্ব করতেন ধলভূম (সিংভূমের ধলভূম মহকুমা ও মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম মহকুমা) রাজারা ধবলদেও পদবী ব্যবহার করতো ভঞ্জভূম (ময়ূরভঞ্জ জেলা ও কেওনঝড়ের কিছু অংশ) এছাড়া মল্লভূম, সেনভূম, শবরভূম প্রভৃতি৷ বাঙালীস্তানের এই সব সামন্ত রাজ্যের সীমানা কখনো কখনো পরিবর্ত্তিত হয়েছে কিন্তু রাঢ়ের সার্বিক ভৌগোলিক পরিবেশ ও মানচিত্রের কখনো পরিবর্তন হয়নি৷ সেই রাঢ়ের অস্তিত্ব আজও আছে৷ কিন্তু তাকে টুকরো টুকরো ক’রে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে বিহারে–ওড়িষ্যায়৷ .......... এর উদ্দেশ্য মূলতঃ দু’টি (১) রাঢ়ের বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদকে অবাধে লুন্ঠন করা (২) বাঙালী নামধেয় জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশকে নিজস্ব ভাষা–সংস্কৃতি থেকে উৎখাত ক’রে তার মেরুদণ্ডকে ভেঙ্গে দেওয়া, যাতে অবাধে শোষণ করা যায়৷ আজ তাই রাঢ়ের মানুষদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে সামিল হয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে মজবুত করতেই হবে৷ (ক্রমশঃ)

 

Tags