ফাঁসীর মঞ্চে গাইলেন যিনি জীবনের জয়গান

লেখক
পথিক বর

একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি,

হাসি হাসি পরব ফাঁসী দেখবে ভারতবাসী৷’

এই গানটি আজও অনেক বাঙালীর রক্তে আগুন ধরায়৷ ১৯০৫ সাল৷ সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ বাঙলাকে দুর্বল করতে ভাগ করে দু’টি আলাদা রাজ্য ঘটন করে৷ প্রতিবাদে গর্জে ওঠে সারা বাঙলা৷ বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে পথে নাবেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও৷ আন্দোলনকে দমন করতে সাম্রাজ্যবাদী বিদেশী শাসকও দমন-পীড়ন ও অত্যাচারের আশ্রয় নেয়৷ এরই মাঝে বাঙলার একদল দামাল তরুণ ত্যাগের মন্ত্রে দীক্ষা নেয় অত্যাচারী শাসককে তারই ভাষায় জবাব দিতে৷ সেদিনের সেই অত্যাচারী শাসকদের একজন ছিলেন ম্যাজিষ্ট্রেট কুখ্যাত কিংসফোর্ড৷ এই কিংসফোর্ডকে উপযুক্ত জবাব দিতে তৈরী হলেন বিপ্লবী তরুণ দল৷ কিংসফোর্ড তখন মজফরপুরে৷ কিশোর ক্ষুদিরাম বসু আর এক কিশোর প্রফুল্ল চাকীকে সঙ্গে নিয়ে মজফরপুরে পৌঁছলেন অত্যাচারী শাসককে মুখের মত জবাব দিতে৷ জবাব তারা দিয়েছিলেন৷ কিন্তু ভুলবশতঃ কিংসফোর্ড বেঁচে যায়৷ মারা যান দুই ইংরেজ মহিলা৷ প্রফুল্ল চাকী ধরা পড়ার আগেই নিজের হাতের রিভলবার দিয়েই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷ ধরা পড়েন ক্ষুদিরাম৷ যথারীতি অত্যাচারী শাসকের বিচারের প্রহসনে ফাঁসীর আদেশ হয় ক্ষুদিরামের৷ ১৯০৮ সালের ১১ই আগষ্ট সেই আদেশ কার্যকর হয়৷ প্রত্যক্ষদর্শী ক্ষুদিরামে উকিলের বর্ণনা থেকেই জানা যায় ফাঁসীর মঞ্চে ওঠার আগে ক্ষুদিরাম এতটুকু বিচলিত ছিলেন না৷ বরং হাসতে হাসতে তিনি ফাঁসীর মঞ্চে ওঠেন৷ দেশের জন্য আত্মত্যাগের, বলিদানের পথ দেখিয়ে গেলেন ক্ষুদিরাম৷ পরবর্তীকালে সেই পথ ধরেই দেশের জন্য জীবন বলিদান দিয়ে যায় আরও শত-সহস্র তরুণ৷ তাঁদের আত্মত্যাগ ও বলিদানেই দেশ স্বাধীন হয়৷ কিন্তু আজ একদল ক্ষমতালোভী, ধূর্ত, কপট নেতারা সেই ত্যাগ ও বলিদানকে ব্যঙ্গ করে দেশের কর্ণধার হয়ে বসেছে৷ তাই আসুন ক্ষুদিরামের বলিদানে দেশবাসীর প্রার্থনা হোক---আর এক বার ফিরে আসুক ক্ষুদিরাম, আর একবার জেগে উঠুক জালাবাদ, বুড়িবালাম৷ নোতুন করে উদয় হোক চট্টগ্রামের সূর্য৷ আর একবার দুর্নীতিপরায়ণ ধূর্ত শাসকের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিক মহাকরণের অলিন্দ৷

আত্মত্যাগে মহান, দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ হে মহান ক্ষুদিরাম লহ প্রণাম৷