ফুটবলার শৈলেন মান্না ইতিহাসের ইতিহাস

সংবাদদাতা
ক্রীড়াপ্রতিনিধি
সময়

পাড়ার ছোট্ট এক চিলতে মাঠে খেলার পর ক্ষুদ ফুটবলাররা বিশ্রাম নিচ্ছিল৷ এমন সময় একজন বলে উঠল---এত খেটে কি হবে, চান্স তো পাবোই না, চাকরিও পাবো না, টাকাও কামাতে পারবো না৷ অন্য জন জবাব দিল---অতশত ভেবে লাভ নেই রৃে আমাদের কাজ ভাল খেলা৷ সেই কাজটাই ভালোভাবে করতে হবে৷ ঠিক সেই সময় ওদের কোচ আসলেন, বললেন---তোদের কথা আমি পাশ থেকে শুনেছি৷ আমাকে দেখ, আমি কি দামী খেলোয়াড় হতে পেরেছি? অনেক টাকাও রোজগার করতে পারিনি জীবনে৷ কিন্তু তাই বলে কি খেলা থেকে হারিয়ে গেছি৷ তোদের শেখাই, এটাই নেশা এটাই আনন্দ৷ যাইহোক আমার খুব পরিচিত সুব্রত ভট্টাচার্যের সঙ্গে কাল কথা হচ্ছিল৷ সুব্রত ভট্টাচার্য অনেক দক্ষ খেলোয়াড়, ভালো কোচ আর সবচেয়ে বড় কথা উনি খুব ভালো মানুষ৷ এই যে মোহনবাগান আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হ’ল সে ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বললেন---খেলোয়াড়রা নিজেদের উজার করে দিয়েছে, তাই সাফল্য এসেছে৷ কথায় কথায় তিনি শৈলেন মান্নার প্রসঙ্গে বলছিলেন---শৈলেন মান্না যথার্থই শতাব্দীর সেরা ভারতীয় ফুটবলার৷ মান্নাদার মত ইতিবাচক মানসিকতাসম্পন্ন খেলোয়াড় হওয়া প্রয়োজন৷ তাঁর লক্ষ্যই ছিল ভালো খেলে যাওয়া৷ টানা ১৯ বছর দাপটের সঙ্গে ফুটবল খেলেছেন৷ ১৯৬০ সালে যখন তিনি অবসর নেন তখনও তিনি ভালো খেলছেন৷ আসলে নতুনদের সুযোগ দেওয়া ও ফর্মে থাকতে থাকতেই অবসর নেওয়ার কথা তিনি অনেক আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলেন৷ ভারতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে দুবার এশিয়াড, অলিম্পিক ও আরো বেশ কিছু আর্ন্তাতিক স্তরে নিজেকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে দলের সকলকে উদ্বুদ্ধ করেছেন৷ তাঁর দুর্দান্ত ফ্রি-কিক, দূরপাল্লার শট ছিল অসাধারণ৷ একবার শৈলেন মান্নার জোড়ালো শটে এক ইংরেজ গোলকিপারের হাতই ভেঙ্গে যায়৷ কিন্তু মানুষটা ছিলেন একেবারেই বিনয়ী৷ খেলার ছাড়ার পর দূর-দুরান্তে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি যেতেন৷ মোহনবাগানের হয়ে দীর্ঘদিন খেলেছেন কিন্তু কখনো টাকা-পয়সা নিয়ে তাঁর সঙ্গে বচসা হয়নি ক্লাব কর্তাদের৷ একসময় তিনি মাসে ১৫ টাকা পেতেন৷ তখনকার দিনে তাই দিয়েই তাঁর জীবিকা নির্বাহ হয়ে যেত৷ অতি সাধারণ জীবনযাপন করে গেছেন চিরকাল৷ যতটুকু সম্মান পেয়েছেন তাতেই খুশী থেকেছেন৷ মোহনবাগান ক্লাব জোর করে এই মহান খেলোয়াড়কে যাতায়াতের ভাড়া দিতেন৷ একসময় তিনি তা নেওয়াও বন্ধ করে দেন৷ তিনি শুধু বলতেন---যা পেয়েছি তাতেই আমি খুশী৷ আসলে তিনি মানুষের হৃদয় জয় করতে পেরেছিলেন৷ এটাই তাঁর কাছে বড় পাওনা৷ শৈলেন মান্না আজ আমাদের কাছে ইতিহাসের ইতিহাস৷