‘রাওয়া’র উদ্যোগে নৈহাটী ঐকতান মঞ্চে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী অবদানের ওপর আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

নৈহাটী ঃ ২১ নভেম্বর, ২০১৮ বুধবার সন্ধ্যায় নৈহাটীর ‘ঐকতান’  মঞ্চে বিশ্ববন্দিত মহান দার্শনিক ও কালজয়ী সঙ্গীতগুরু শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার যিনি ধর্মগুরু শ্রীশ্রীআনন্দমর্ত্তিজী নামে সমধিক পরিচিত, তাঁরই ভাব-ভাষা-সুর ও ছন্দে সমৃদ্ধ প্রভাতসঙ্গীতের ৩৬ বছর পূর্ত্তি উপলক্ষ্যে রেণেশাঁ আর্টিষ্টস্ এ্যাণ্ড রাইটার্স এ্যাশোসিয়েশন কাঁকিনাড়া ও নৈহাটী শাখা আয়োজিত প্রভাত সঙ্গীত অবলম্বনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হ’ল৷ সরসী সাহার পরিচালনায় প্রভাত সঙ্গীত ‘আজ এগিয়ে চল সকল মানুষ ভাই’ অবলম্বনে  উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করেন ‘নৃত্যাঞ্জলী কলামন্দির’-এর শিল্পীবৃন্দ৷ অনুষ্ঠানের সভাপতি আচার্য মন্ত্রেশ্বরানন্দ অবধূত, কেন্দ্রীয় প্রকাশন সচিব, আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘ, প্রধান অতিথি ডঃ অরুণ ঘোষ, প্রাক্তন অধ্যাপক বাংলা বিভাগ, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ অতিথি আচার্য রবীশানন্দ অবধূত আনন্দমার্গ কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য ও উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ভুক্তিপ্রধান শ্রীসন্তোষ বিশ্বাস প্রমুখ মার্গগুরুদেবের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধানিবেদন করেন৷ ‘রাওয়া’ সদস্যাবৃন্দ তাঁদের ব্যাচ ও পুষ্পস্তবক দিয়ে বরণ করেন৷ স্বাগত ভাষণ দেন বিশিষ্ট প্রাউটিষ্ট শ্রীজয়ন্ত দাশ৷

রাওয়া শিল্পী অবধূতিকা আনন্দ অভীষা আচার্যা, পার্থপ্রতীম মুখার্জী ও নিরঞ্জনা রায় পরিবেশিত প্রভাত সঙ্গীত দর্শকমণ্ডলী কতৃক প্রশংসিত হয়েছে৷

বিশিষ্ট বেতার ও দূরদর্শন শিল্পী প্রবীর মজুমদার পরিবেশিত প্রভাত সঙ্গীতগুলি দর্শকবৃন্দকে মুগ্ধ করেছে৷

প্রভাত সঙ্গীতগুলির সঙ্গতে ছিলেন তবলায় ইণ্টার ন্যাশনাল তবলা বাদক প্রণব আঢ্য, কী বোর্ডে মদন দাশ, অক্টোপ্যাডে গোবিন্দ ভট্টাচার্য৷

প্রভাত সঙ্গীত অবলম্বনে একক নৃত্য পরিবেশন করেন ২০১৮ সালের প্রভাত সঙ্গীতের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় ‘গ’ বিভাগের রাওয়া রত্ন প্রাপক শিবম্ দেবনাথ, সায়ন্তণী চক্রবর্তী ও প্রভাত সঙ্গীত অবলম্বনে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে শিবম্ নৃত্য একাডেমীর ছাত্রাবৃন্দ (নির্দেশনায় স্বরূপা ভট্টাচার্য), মৌমিতা বিশ্বাসের পরিচালনায় নৈহাটী আনন্দমার্গ স্কুলের ছাত্রাবৃন্দ যথেষ্ট পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে৷

প্রধান অতিথি ডঃ অরুণ ঘোষ মহাশয়ের বক্তব্যের বিষয় ছিল মানব কল্যাণের আনন্দমূর্ত্তিজীর অবদান৷ তিনি বলেন---শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী লেখাগুলো পড়ে বোঝবার চেষ্টা করছি, অনুভব করার চেষ্টা করছি৷ এই অবক্ষয়িত সমাজে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী সমাজের দুর্বল জায়গাগুলি লক্ষ্য করেছেন ও সেখানটায় পূর্ণ করে দিয়েছেন৷ বিভিন্ন সময়ে আমি তাঁর প্রবচনগুলো পড়েছি, তাতে দেখেছি শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যতের দিকেও তিনি অঙ্গুলী নির্দেশ করেছেন৷ প্রভাত সঙ্গীত শুণেছি, তাঁর প্রবচনগুলি, সব জায়গায়তে তিনি নব্যমানবতাবাদের কথাই বলেছেন৷ মানবতার সার্বিক মুক্তির কথাই বলেছেন৷ প্রচলিত ধর্মগুরুরা ধর্ম কথাটিকে এমনভাবে কলুষিত করেছেন যে তাদের ধর্মগুরু বলতে ধর্মকে অবমাননা করা হয়৷ ধর্ম থেকে মানুষকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে৷ বিশিষ্ট বাতিথি আচার্য রবীশানন্দ অবধূত, তাঁর বক্তব্যের বিষয় ছিল --- ‘সামাজিক-অর্থনৈতিক অবক্ষয়৷’ তিনি বলেন বর্তমানে ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় বিশ্বায়নের নামে ধনিক শ্রেণী গরীবদের শোষণ করছে৷ সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবক্ষয়ের হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করতে প্রাউটের পথ ধরেই আমাদের এগোতে হবে৷  প্রাউট প্রবক্তা তার মধ্য দিয়েই সার্বিক সমস্যা সমাধানের পথ দেখিয়েছেন৷ তিনি সবাইকে ‘প্রাউট’ দর্শন সম্পর্কে জানবার জন্যে আহ্বান জানান৷

সভাপতির ভাষণে আচার্য মন্ত্রেশ্বরানন্দ অবধূত বলেন---মানবিক মৌলবোধগুলি যখন হারিয়ে যায় তখনই ধর্ম ধর্মমতে চলে যায়৷ মানুষের জীবনের দু’টো দিক রয়েছে৷ আত্মগত দিক ও বস্তুগত দিক.....

তাই মানুষের সমাজেরও দুটো দিক রয়েছে৷ সাবজেক্টিভ ও অবজেক্টিভ৷ শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী সমাজ জীবনের যে ছ’টি দিক দিয়েছেন যা দিয়ে অন্যান্য সমস্ত দর্শনকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন৷ তাঁর লক্ষ্য হ’ল এক মানব সমাজ গড়া৷ মানব সমাজকে একটি পথ ধরেই যেতে হবে৷ অন্যথায় তা সম্ভব নয়৷ আমরা ভাগ্যবান, আমরা এই সময়ে আনন্দমূর্ত্তিজীকে পেয়েছি, আপনারাও ভাগ্যবান, আপনারা এগিয়ে আসুন, আনন্দমার্গকে জানুন, বুঝতে চেষ্টা করুন জীবনের মানেটা কি৷

সভাপতির ভাষণের পর অনুষ্ঠানের বিশেষ আর্ষণ ছিল ‘গন্ধর্ব সিং মর গয়া’ এই নাটকটি৷ রচনা শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার৷ নাট্যরূপ আচার্য ত্র্যম্বকেশ্বরানন্দ অবধূত৷ নির্দেশনা---আচার্য তন্ময়ানন্দ অবধূত, পরিবেশনা---লাবণ্য নাট্যগোষ্ঠী (খড়দহ)৷ নাটকটি উপস্থাপনা, অভিনয় যথেষ্ট প্রশংসার যোগ্য ছিল৷

সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শ্রী গৌরাঙ্গ ভট্টাচার্য, সহযোগিতায় প্রীতি রায়৷