রক্ত  মাখা পায়ে

লেখক
সুকুমার সরকার

২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ ষোড়শ লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি মঠ-মন্দিরে প্রণাম করে ভোটার লড়াইয়ে নেমেছিলেন৷ জয়ী হয়ে সংসদের সিঁড়িতে মাথা ঠুকে সংসদে  প্রবেশ করেছিলেন পাঁচ বছরের জন্য দেওয়া প্রতিশ্রুতির বোঝা মাথায় নিয়ে৷ সেই প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ নরেন্দ্র  দামোদর দাস  মোদি  দেখলেন চারিদিকে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠেছে! কৃষক বিদ্রোহ, চাকরি না পাওয়া বেকার  যুবকদের  বিদ্রোহ, ক্ষুদ্র  ব্যবসায়ীদের  বিদ্রোহ৷ ভিতরে বাহিরে যখন কোথাও  দাবানলের মতো, কোথাও তুষের মতো জ্বলে উঠতে  শুরু করেছে৷ তখন তাঁর ছাপান্ন ইঞ্চি বুকের ছাতি চুপসে৷ লোকসভা নির্বাচন৷ এবার যে লড়াইয়ের কোনো প্রতিশ্রুতি নেই৷ বিভিন্ন রাজ্যের  বিধানসভা ভোটে একের পর এক হারাতে হচ্ছে ক্ষমতা৷ দিল্লির  মসনদ কি তবে অধরা থেকে যাবে! প্রমাদ শুনলেন  নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী!

সেন্টিমেন্ট! সেন্টিমেন্ট চাই ! তে ছিল রাম মন্দির গড়ার হিন্দুত্বের সেন্টিমেন্ট! সেন্টিমেন্ট কোথায়? রামমন্দির নির্র্মণের সেন্টিমেন্ট আদালতের  হাতে জিম্মি৷ সুতরাং মন্দিরের সেন্টিমেন্টে কাজ হবে না৷ দেশের মানুষকে মোহগ্রস্ত করার জন্য  কোনো জাতীয় সেন্টিমেন্ট চাই! তৈরি করলেন প্রেক্ষাপট ! পাকিস্তানী জঙ্গি ইসু  ছিলই৷ যোগ করলেন নতুন মাত্রা! সেনা কনভয়ে হামলা হ’ল৷ নিহত  হলেন  বিয়াল্লিশ জন জওয়ান ! হামলার দায় স্বীকৃতি হলো পাকিস্তানি মদদপুষ্ট লস্করে তৈবার দ্বারা৷ শোকে মুহ্যমান  আপামোর  ভারতবাসী! প্রতিকার চাই! বদলা চাই! দিলেন সব দেশ৷ এমনকি চীনও ৷ ভারতীয় জনমানসের চির শত্রু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেন্টিমেন্ট দানা বাঁধতে লাগলো মোদির পক্ষে ! চুপসে যাওয়া ছাপান্ন ইঞ্চির ছাতি ফুলে উঠলো! শুরু হলো সার্জিক্যাল স্ট্রাইক! রাতের অন্ধকারে  পাকিস্তানের অরণ্যে মাটির ঘরের জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরে  বিমান হামলা চালালো ভারতীয় বায়ুসেনা৷ আহত নিহতের  সংখ্যার  হিসেবের চেয়ে বড় হয়ে  হয়ে উঠল হামলা করার সাহসের৷ মোদিই পারেন!  মোদিই পারবেন! পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিতে  মোদিই একমাত্র ব্যষ্টি৷ আর কে আছে? কেউ নেই! ভোট বৈতরণী পার হওয়ার  জন্য এইটুকু যথেষ্ট ছিল৷ পার হয়েছেন! তবে এই বৈতরণী পার হতে এবার মন্দিরের চরণামৃত পান করে আসেননি৷ এবার  তাঁকে আসতে হয়েছে ভারতমাতার সৈনিকদের রক্তে পা ভিজিয়ে৷ সেই রক্তে  ভেজা পা নিয়ে এবারের ভোট যুদ্ধে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ইঞ্চি ইঞ্চি  ভারতবর্ষের  মাটি৷ আবার ঢুকতে হবে সাংসদ নামক পবিত্র মন্দিরে৷ রক্তের পাপ যে তাঁকে  স্থলন করে আসতে হবে৷ ভোটের  ফল তো একজিট পোলই বলে দিয়েছে৷ তাই নিশ্চিন্ত তিনি! নিজ অঙ্গ ছেদন করে মহাশংকর  তেল বিক্রি করার মতো, নিজে দেশের সৈনিকদের বলির পাঁঠা করে ভোটের বৈতরণী পার হবার পারাণির কড়ি চুকাতে এবার তিনি ছুটলেন দেবতার মন্দিরে৷ কেদার বদরিনাথ৷ হাজার হোক সংসদকে তিনি মন্দির মনে করেন৷ সেই মন্দিরে রক্ত ভেজা  পায়ে ঢোকেন কী করে!