সাম্রাজ্যবাদী চীনের আগ্রাসন রুখতে  হবে

লেখক
আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূ্ত

আজকের সারা পৃথিবীর ভোগবাদী তথা পুঁজিবাদী ও জড়বাদী দুনিয়া একটা জীবন্ত আগ্ণেয়গিরির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ যে কোনো মুহূর্তে ভয়ঙ্কর বিষ্ফোরণ ঘটতে পারে৷ ধবংস হয়ে যেতে  পারে এই মদগর্বী সভ্যতা৷ সবাইকে মহান্ ভারতের আধ্যাত্মিক মানবতাবাদভিত্তিক তথা নব্যমানবতাদী আদর্শের কাছে নতজানু  হয়ে দীক্ষিত হতে হবে৷ এছাড়া বাঁচবার কোনো উপায় নেই৷ বিশ্বের তাবড় মনীষীরা  ভারতের এই সুমহান্ ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন৷ সুপ্রাচীনকাল থেকেই কেবল আধ্যাত্মিকতার জন্যে নয় জ্ঞান-বিজ্ঞান সর্বক্ষেত্রেই এর ঔজ্বল্য বিশ্ববাসীকে আকৃষ্ট করেছে৷ তার সঙ্গে  সঙ্গে ঈশ্বরের কৃপায় এদেশের নানান্ সম্পদের প্রাচুর্যও ছিল বিশ্ববাসীর আকর্ষণের অন্যতম প্রধান কারণ৷ স্বাধীনতার পর থেকেই  আমরা দেখেছি কম্যুনিষ্ট লাল চীনের সরকার ভারতের প্রতি ঈর্ষনীয় দৃষ্টিতে সব সময়ই তাকিয়ে আছে৷ ঈর্ষাভরে ও ভারতের সম্পদ ও ভূমি দখলের  বাসনায় বারে বারে লালচীন  ভারতের দিকে তাদের আগ্রাসী হাত বাড়িয়েছে৷ ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরুর সঙ্গে মুখে  ‘হিন্দী চীনী ভাই ভাই’ শ্লোগান দিতে দিতে পেছন থেকে ভারতের বুকে ছুরি  হেনে চরম বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয় দিয়েছে৷ ১৯৬২ সালে চীনের ভারত আক্রমণের স্মৃতি এখন অমলিন৷ ভারতের সেনাবাহিনী দেশের নিরাপত্তার জন্যে আপ্রাণ লড়াই করলেও ভারতের কিছু কিছু অংশ ওরা এখনও দখল করে রেখেছে৷ হিমালয় অঞ্চলের ‘আকসাই চিন’ (অক্ষয় চিহ্ণ) এলাকায় ভারতের ৩৭ হাজার ২৪৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা এখনও চীনের দখলে৷ অরুণাচলের ওপর এখনও ওরা দাবী পরিত্যাগ করেনি৷

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদী ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর ৬ বার চীন সফরে  গিয়েছেন৷ বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে চীনের  প্রেসিডেন্ট জি জিনপিংয়ের সঙ্গে কখনও বা দোলনায়  দুলেছেন, কখনও বা নিরিবিলিতে রিসর্টে বসে একান্তে ভাববিনিময় করেছেন৷ বাইরে বন্ধুত্ব দেখালেও জিনপিং মনের মধ্যে বিষ লুকিয়ে রেখেছিলেন৷ তারই জাজ্বল্যমান প্রমাণ হল গত ১৫ই জুন হঠাৎ করে বরফাবৃত লাদাখে ভারতের ভূখণ্ডের ভেতরে প্রবেশ করে ভারতের জওয়ানদের ওপর চীনা সৈন্যের অতকির্ত হামলা৷ হিংস্র চীনা বাহিনীর কাঁটা লাগানো রডের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে বরফের চেয়েও ঠাণ্ডা গালওয়ান নদীতে পড়ে জমে গিয়ে ভারতের ২০ জন বীর জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে৷ আরও অনেকে হতাহত৷ ভারতের জওয়ানদের সঙ্গে লড়াইয়ে বহু চীনা সৈন্যও হতাহত৷ ভারতীয় জওয়ানদের হাতে কি অস্ত্র ছিল না? কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর এই প্রশ্ণের উত্তরে কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছেন, সীমান্ত বাহিনীর সঙ্গে  অস্ত্র থাকে৷ গালওয়ানের জওয়ানরাও তা  রেখেছিলেন, কিন্তু ১৯৯৬ ও ২০০৫-এর চুক্তি ছিল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার দু’দিকে দু’কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত কেউ আগ্ণেয়াস্ত্র ব্যবহার করবেনা৷

এখন চীনের এই বিশ্বাসঘাতকতার জবাব দিতে ভারত সবরকমের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে৷ লাদাখের সীমান্ত পেরিয়ে হানায় তৈরী ভারতীয় যুদ্ধবিমানও৷ এখন চীনের প্রতি উদারতা বা ক্ষমা প্রদর্শন নয়, সামরিক বাণিজ্যিক ও কুটনৈতিকভাবে চীনকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতেই হবে, বুঝিয়ে দিতে হবে যে, ভারত দুর্বল নয়৷ চীনকে এমন শিক্ষা দেওয়া হোক যাতে ভবিষ্যতে আর ভারতের দিকে হাত বাড়াতে সাহস না করে৷  তার সঙ্গে সঙ্গে এও আমরা বলতে চাই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কুটনৈতিকভাবেও চীনকে  কোনঠাসা করতে হবে৷

চীন থেকে করোনা বাইরাসের সৃষ্টি৷ এই করোনা বাইরাস চীনের ল্যাবের সৃষ্টি কিনা এ ব্যাপারে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ আছে৷ সে ধরণের কিছু কিছু তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে৷ তাই এ ব্যাপারে চীনের ওপর বহুদেশে ক্ষুদ্ধ৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের  প্রতি চীনের এই আগ্রাসী ভূমিকাও অধিকাংশ দেশ ভাল চোখে  দেখছে না৷ এই পরিস্থিতিতে সমস্ত দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে  তাদের কুটনৈতিক সমর্থন সংগ্রহ করার ব্যাপারেও যেন ভারত উদ্যোগী হয়৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদীর অভ্যন্তরীণ নীতির ব্যাপারে নানান্ মতবিরোধ থাকলেও সাম্রাজ্যবাদী চীন বা অন্য কোনো রাষ্ট্রের আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে সকলের একমত হওয়া উচিত ও সরকারকে পূর্ণ সমর্থন করা প্রয়োজন৷ ভারতের সমুন্নত আধ্যাত্মিক মানবতাবাদী সংসৃকতি ও ঐতিহ্য রক্ষা পেলে সারা পৃথিবী রক্ষা পাবে৷ তাই ভারতকে জড়বাদী সাম্রাজ্যবাদী বহিঃশত্রুর হাত থেকে সর্বতোভাবে রক্ষা করা প্রতিটি ভারতবাসীর তথা মানবতাবাদীর পবিত্র কর্তব্য৷