স্বাধীনতার ৭২ বছর পরেও দেশবাসীর নূ্যনতম প্রয়োজনপূর্ত্তির নিশ্চিততা অধরা একমাত্র সমাধান প্রাউট

লেখক
জ্যোতিবিকাশ সিন্হা

‘‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে

কত প্রাণ হ’ল বলিদান,

লেখা আছে অশ্রুজলে’’

কত প্রাণ হ’ল বলিদান,

লেখা আছে অশ্রুজলে’’

সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের অপশাসন, অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতনের করাল গ্রাস থেকে মাতৃভূমি ভারতবর্ষ তথা দেশবাসীকে মুক্তি দানের আত্যন্তিকী আকাঙ্ক্ষায় স্বাধীনতা সংগ্রামের বেদীমূলে শত শত বীর বিপ্লবী আত্মবলিদান দিয়েছেন, চরম ত্যাগ স্বীকার করেছেন, শত-সহস্র দুঃখ-যন্ত্রণা- নির্যাতন, কারাবাস, দ্বীপান্তর বরণ করে নিয়েছেন৷ দেশমাতৃকার মুক্তি আন্দোলনে আগষ্ট মাসের ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ৷ ১৯০৮ সালের ১১ই আগষ্ট অগ্ণিযুগের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ‘বন্দেমাতরম্’ ধবনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে হাসতে হাসতে ফাঁসীর দড়ি গলায় বরণ করে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন৷ শহীদ ক্ষুদিরামের আত্মবলিদান লক্ষ লক্ষ দেশবাসী, ছাত্র-যুবার মনে দেশপ্রেমের দীপশিখা প্রজ্জ্বলিত করতে সমর্থ হয়েছিল যার অভিঘাতে ইংরেজ শাসকের সিংহাসনের ভিত কেঁপে উঠেছিল৷ ১৯৪২ সালের ৯ই আগষ্ট ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরুদ্ধে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সূচনা হয় যা পরবর্তীকালে ব্যাপক আকার ধারণ করে সমগ্র ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ ১৯৪৫ সালের ১৮ই আগষ্ট ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্র, পৌরুষের বজ্রকৌস্তুভ, স্বদেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর রহস্যজনক অন্তর্ধান---কারণ রূপে জানানো হয়েছিল জাপানের ‘তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনা’র বিষয় যা আজও অজানা রহস্যে ঘেরা৷ কয়েকটি তদন্ত কমিশনের মাধ্যমেও এই রহস্য উন্মোচিত হয়নি বা এই বিমান দুর্ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণ ও পরিণতি সম্পর্কে অকাট্য প্রমাণ সন্দেহাতীত রূপে উপস্থাপিত করা যায়নি৷ ১৮৭২ সালের ১৫ই আগষ্টে  জন্মগ্রহণ করেন বাঙলার আর এক কৃতী সন্তান শ্রী অরবিন্দ ঘোষ৷ তিনিও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ও মুরারিপুকুর বোমা মামলার মূল ষড়যন্ত্রকারী রূপে কারাবাস করেন৷ তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে আই.সি.এস. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ইংরেজদের গোলামী করবেন না বলেই অশ্ব-চালনা পরীক্ষার দিন অনুপস্থিত ছিলেন৷ পরবর্তীকালে সংসার ত্যাগ করে তিনি আধ্যাত্মিক জগতে পূর্ণ আত্মনিয়োগ করেন ও ঋষি অরবিন্দ নামে পরিচিত হয়েছিলেন৷ আবার ১৯৪৭ সালের এই আগষ্ট মাসেই ব্রিটিশ শক্তি অখণ্ড ভারতবর্ষকে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দুইটি রাষ্ট্রে বিভক্ত করে পাকিস্তান ও ভারত নামক রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দের হাতে রাজনৈতিক শাসনভার স্থানান্তরিত করে বিদায় নিয়েছিলেন৷ ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট পাকিস্তান ও ১৫ই আগষ্ট ভারত নামক দুইটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করে৷

আধ্যাত্মিক চেতনা, মিলন ও সম্প্রীতির ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ বিশাল দেশ এই ভারতবর্ষের জনগণ সুপ্রাচীন কাল থেকেই সুখে-শান্তিতে মিলেমিশে আনন্দময় জীবনযাপন করতেন৷ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রশাসক দ্বারা (মোগল, পাঠান, পর্তুগীজ, ফরাসী, ইংরেজ) এই দেশ শাসিত হলেও ভারতবাসীগণ সর্বাপেক্ষা বেশী অত্যাচারিত, শোষিত, নির্যাতিত হন ইংরেজ আমলে৷ ধূর্ত ব্রিটিশ শাসকেরা শুধুমাত্র এদেশের ধন-সম্পদ লুণ্ঠন করেই ক্ষান্ত হয়নি---সুদীর্ঘ লালিত মৈত্রীর ঐতিহ্যের মূলেও কুঠারাঘাত করেছে৷ নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী কায়েমী স্বার্থকে অক্ষুণ্ণ্ রাখতে দেশবাসীর মধ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায়, জাতি, বর্ণ, গোষ্ঠীগত ভেদাভেদকে উস্কে দিয়েছে, হিংসায় ইন্ধন যুগিয়েছে ও শেষ পর্যন্ত দেশটাকে টুকরো টুকরো করে ধবংসের পথে ঠেলে দিয়েছে৷ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান দুইটি রাষ্ট্রের সৃষ্টির পর লোক বিনিময়ের সময় লক্ষ লক্ষ দেশবাসীর রক্তের নদী বয়ে গেছে, কয়েক কোটি মানুষ স্বজন-স্বভূমি হারিয়ে সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় উদ্বাস্তু হিসেবে জীবন কাটাতে বাধ্য হয়েছে৷ ভারতের পশ্চিম প্রান্তে পঞ্জাবী উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হলেও পূর্বের বাঙালী উদ্বাস্তুদের সমস্যার সমাধান আজও হয়নি, বরং তাদের দুর্দশা দিনকে দিন আরও বেড়েছে৷ দেশভাগের ক্ষত বুকে নিয়ে রাজনৈতিক স্বাধীনতার ৭২ বছর পরেও ভারত, বিশেষতঃ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও বাঙালী জনগোষ্ঠী ক্রমশঃ সমস্যার অচলায়তনে নিষ্পেষিত হয়ে চলেছে৷

১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্টে স্বাধীনতা লাভের পর ৭২টি বছরে ভারতের বুকে প্রভূত পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে, গঙ্গা-যমুনার স্রোত বেয়ে বহু জল বয়ে গেছে, তথাকথিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দেশের কেন্দ্রীয় ও রাজ্যগুলির শাসন পরিচালনা করেছে৷ পুঁজিবাদী অর্থনীতি, সাম্যবাদী অর্থনীতি, মিশ্র অর্থনীতির দ্বারা ভারতীয় অর্থনীতিকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেওয়ার পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে---অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের সোপান বেয়ে উন্নত দেশের তক্মা পাওয়ার পথে ভারতবর্ষ এগিয়ে চলেছে৷ এতসব পরিবর্তনের মধ্যেও ভারতবর্ষের সব মানুষ আজও দু’বেলা ভরপেট খেতে পায় না, অনাহার-অর্ধাহার লক্ষ লক্ষ মানুষের নিত্যসঙ্গী, বহু মানুষ পেটে খিদে নিয়ে ঘুমোতে যায়৷ এখনও দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ অশিক্ষা-কুশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত৷ কুসংস্কার, ভাবজড়তার মায়াজালে আজও তারা আবদ্ধ৷ বিজ্ঞানের এই অগ্রগতির যুগে অগণিত ভারতবাসী ওঝা, গুণীন, ঝাড়ফুঁকের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে---থাকতে বাধ্য হয়৷ কারণ সকলের জন্যে শিক্ষা ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা হয়নি৷ হাতুড়ে ডাক্তার, ভুয়ো ডাক্তার, কবিরাজদের হাতেই তাদের জীবন-মরণ৷ লক্ষ লক্ষ দেশবাসী আজও গৃহহীন---রেললাইন ও রাস্তার ধারের অস্থায়ী চালা বা ঝুপড়ি, রেলষ্টেশনের ঘুপচি কোণ, উড়াল পুলের নীচে ফাঁকা জায়গা শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় শত শত লোকের আশ্রয়স্থল৷ লজ্জা নিবারণের জন্যে প্রয়োজনীয় নূ্যনতম বস্ত্রও বেশীরভাগ সময় অনুপস্থিত৷ পরিস্রুত পানীয় জলের অভাবে বিবিধ রোগের সংক্রমণ নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার৷ অর্থাৎ জীবন-ধারণের জন্যে সর্বনিম্ন প্রয়োজন অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষা থেকে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ আজও বঞ্চিত৷ অথচ এরই পাশাপাশি বিশাল বিশাল সুদৃশ্য অট্টালিকা, আলো-ঝলমলে বিলাসী জীবন-যাপনের প্রভূত ব্যবস্থাপনা, বহুমূল্য খাদ্য-পানীয়ের অঢেল আয়োজন ও অপচয় দেশের উন্নতির  বিজ্ঞাপন রূপে বিরাজমান৷ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিক দিয়ে ভারতবর্ষ আজ যথেষ্ট উন্নত৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে, রাস্তাঘাটে আধুনিক প্রযুক্তির যানবাহন যাতায়াত করে, পাতাল রেল ও অতি দ্রুতগামী রেল ব্যবস্থা চালু হয়েছে, পারমাণবিক ক্ষেত্রেও ভারত বেশ উন্নত, পারমাণবিক অস্ত্রও দেশের অস্ত্র ভাণ্ডারে মজুত (প্রয়োজনে যে কোনও সময় সেগুলি ব্যবহার করতে ভারত সক্ষম), মহাকাশ প্রযুক্তিতেও ভারত বর্তমানে অনেকটাই উন্নতি সাধন করেছে৷ অতি সম্প্রতি চন্দ্রযান-২ মহাকাশে উৎক্ষেপন করা হয়েছে ও সেই চন্দ্রযান আর কয়েকদিনের মধ্যে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করবে৷

এত উন্নতি সত্ত্বেও লক্ষ লক্ষ ভারতবাসীর নূ্যনতম প্রয়োজনপূর্ত্তির অভাব, কর্মসংস্থানের অভাব, কোটি কোটি বেকার, অর্থনীতিতে মন্দার লক্ষণ, মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নিম্নাভিমুখী গতির কারণ কী? গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে নিম্নলিখিত কারণগুলি লক্ষ্য করা যায়---

(১) দেশের মানুষ রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেলেও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পায় নি৷ পরাধীন ভারতবর্ষে ইংরেজরা যে মানসিকতা নিয়ে বিভাজন সর্বস্ব নীতিতে দেশ শাসন করত, স্বাধীনতা উত্তরকালে দেশীয় প্রশাসকরাও একই নীতির ধারক ও বাহক৷

(২) স্বাধীনতার পূর্বে পুঁজিপতিরা যেমন দেশের অর্থনীতিকে পরিচালিত করত, স্বাধীনতার পরেও সেই পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষার জন্যে তাদেরই অঙ্গুলী হেলনে অর্থনীতি পরিচালিত হয়েছে (ভারতীয় অর্থনীতিকে পুঁজিবাদী সাম্যবাদী বা মিশ্র অর্থনীতি যে নামেই ডাকা হোক না কেন তা মূলত পুঁজিবাদী অর্থনীতিরই নামান্তর)

(৩)  নৈতিকতা বর্জিত পুঁজিপতি, শিল্পপতি ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের মিলিত দুষ্টচক্রের হাত থেকে দেশ বেরিয়ে আসতে পারেনি৷

(৪)  দেশের অর্থনীতি মুষ্টিমেয় ব্যষ্টি বা গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত থাকার কারণে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে ধনী ব্যষ্টিগণ ও তারা আরও সম্পদশালী হয়েছে৷ অপরদিকে নিম্নবিত্তেরা বঞ্চিত ও শোষিত হয়ে ক্রমশঃ দরিদ্রতর অবস্থায় পতিত হয়েছে৷ সম্পদের এই অসম বণ্টনের কুফলে দেশবাসীর এই করুণ অবস্থা৷

(৫)  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দেশ উন্নতি করলেও এগুলিকে কাজে লাগিয়ে ভারতের প্রভূত প্রাকৃতিক (বনজ, জলজ, খনিজ, কৃষিজ) ও মানব সম্পদের সর্বাধিক উপযোগ গ্রহণ করা হয়নি ও দেশবাসীর সার্বিক কল্যাণে নিস্বার্থভাবে ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হয়নি৷

(৬)  দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতা তথা নৈতিক শিক্ষার মান উন্নত করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি৷

পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার মূল কারণ হচ্ছে কেন্দ্রীভূত অর্থনীতির ফলে এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ পুঁজিবাদীদের সীমাহীন মুনাফার লোভে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বঞ্চনা ও শোষণ৷ সাধারণ মানুষের ভালমানুষী ও অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে ওই সব শোষকের দল মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের বিভেদাত্মক মনোভাবের সুড়সুড়ি দিয়ে তাদের শোষণ যন্ত্রকে কায়েম রাখতে প্রয়াসী হয়৷ এই কারণেই মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার সাধারণ মানুষকে দুঃখ যন্ত্রণার হাত থেকে পরিত্রাণের জন্যেই ‘প্রাউট’ (Prout—Progressive Utilization Theory) দর্শনের প্রবর্ত্তন করেন৷ প্রাউট দর্শনের মূল কথা হ’ল বিকেন্দ্রিত অর্থনীতি ও গণ অর্থনীতি৷ এই অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি থাকবে জনগণের হাতে৷ ব্লকভিত্তিক স্থানীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে ‘‘স্বয়ং-সম্পূর্ণ সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চল’’ গড়ে তুলতে হবে৷ কোনও অঞ্চলের স্থানীয় জলবায়ু, আবহাওয়া, প্রাকৃতিক সম্পদ, কৃষি ও শিল্পের কাঁচামাল, মানব সম্পদ ইত্যাদির উপলব্ধতার ওপর নির্ভর করে সেই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে ও তার রূপায়নের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করা যাবে৷ এর ফলে সাধারাণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে৷ সমগ্র ব্যবস্থাটি পরিচালিত হবে সমবায়ের মাধ্যমে (উৎপাদন সমবায় ও উপভোক্তা সমবায়)৷ কৃষি ও শিল্প উভয় ক্ষেত্রেই উন্নত প্রযুক্তি ও প্রাপ্ত সম্পদের সর্বাধিক উপযোগ গ্রহণ করা হবে৷ শিল্পের ক্ষেত্রে একেবারে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পগুলি ব্যষ্টিগত উদ্যোগে চলবে ও অতি বৃহৎ শিল্প স্থানীয় সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে৷ শিল্পগুলি কৃষিভিত্তিক শিল্প ও কৃষি সহায়ক শিল্প হিসেবে গড়ে উঠবে৷ এছাড়া সমস্ত শিল্প সমবায়ের মাধ্যমে পরিচালিত হবে৷ স্থানীয় স্তরে প্রথমে অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য উৎপাদন করে সাধারণ মানুষের নূ্যনতম প্রয়োজনপূর্ত্তির নিশ্চিততা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে৷ পরবর্তীকালে আরও অন্যান্য সামগ্রীর ব্যাপক উৎপাদনের মাধ্যমে সর্বনিম্ন প্রয়োজনের মানকে উন্নত করা হবে৷ এই প্রক্রিয়ায় স্থানীয় মানুষের একশত শতাংশ কর্ম সংস্থান ও ক্রয়ক্ষমতা সুনিশ্চিত করা হবে৷ প্রাউটের নীতি হ’ল ‘আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধির মাধ্যমে বিশ্বৈকতাবাদের প্রতিষ্ঠা’৷ এইভাবে ছোট ছোট স্থানীয় অঞ্চলগুলি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বনির্ভর হয়ে উঠলে পরবর্তীকালে এই ছোট ছোট অঞ্চলগুলি মিলে একটি বৃহত্তর স্বয়ংসম্পূর্ণ অঞ্চল গড়ে তোলা সম্ভব হবে৷ এই সমাজ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ থাকবে নীতিবাদী, আধ্যাত্মিকতায় সমুন্নত, আপোষহীন বলিষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী সদ্বিপ্রদের হাতে ও এই ব্যবস্থার ভিত্তি হবে আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিকতা৷ ফলে বিশ্বপিতার দান সকলের যৌথ সম্পত্তি সমগ্র পার্থিব সম্পদকে সকলের কল্যাণে ঠিকভাবে সর্বাধিক উপযোগ করে সুষম বণ্টন করতে পারলে বর্তমানের ভারতবর্ষ বা অন্য যেকোনও স্থানের আর্থিক-সামাজিক ও সকল সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে৷