স্বচ্ছতার কাঁচটা ক্রমশঃ ঝাপসা হয়ে গেছে

লেখক
জ্যোতিবিকাশ সিন্হা

ভারতবর্ষের নির্বাচন কমিশন কর্ত্তৃক ১০ই মার্চ রবিবার ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা হয়ে গেছে৷ টিভি, রেডিও, সংবাদপত্রে এখন শুধু নির্বাচনী সংবাদের রমরমা৷ ৫বছর আগে ২০১৪ সনের নির্বাচনের প্রাক্কালে  সুন্দর ভারত গড়ার আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে, আচ্ছে দিনের স্বপ্ণ দেখিয়ে নরেন্দ্র মোদিজির নেতৃত্বে এনডি.এ সরকার ভারতবর্ষের প্রশাসনে আসে৷ দেশের তরুণ ও যুব সমাজের জন্যে বছরে ২ কোটি চাকরী,  বিদেশে গচ্ছিত  এদেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল পরিমান কালো টাকা উদ্ধার করে এনে প্রত্যেক দেশ বাসীর ব্যাঙ্ক একাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা জমা দেওয়া, দেশের শিল্প ও কৃষির অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটিয়ে ‘‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’’ এর মাধ্যমে সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, জাল নোট ও কালোবাজারির মূলোৎপাটন করে দেশের অর্থনীতিতে সুস্থিতি আনয়নের মত অনেক রঙীন প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাসের বন্যায় ভেসেছিল দেশের আপামর জনগণ--- মন খুলে ভোট দিয়ে নির্র্বচিত করেছিল মোদিজির দলকে৷ ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর পরই গান্ধীজির ব্যবহৃত চশমার মতো  এক চশমাকে স্বচ্ছতার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরে স্বচ্ছ ভারত গড়ার সংকল্প নিয়ে স্বচ্ছতা অভিযান চলল বেশ কিছুদিন ৷  মন্ত্রী-সান্ত্রী,পেটমোটা থেকে হাড়গিলে  সর্বস্তরের সরকারী কর্মী-আধিকারিক, কর্র্পেরেট সেক্টারের শুটেড-বুটেড কর্মকর্তা-কর্ত্রীগণ, ক্রীড়াজগৎ-সিনেমাজগৎ, সাহিত্য শিল্প সংসৃকতি ও  অন্যান্য জগতের দিকপাল, প্রখ্যাত-অখ্যাত  সেলিব্রিটিগণ হাতে ঝাড়ু নিয়ে রাস্তার ধুলো উড়িয়ে স্বচ্ছতা উৎসব পালন করলেন ক্যামেরার সামনে৷ ঝাড়ুর ধূলোয় স্বচ্ছ চশমার কাঁচ ঝাপসা হয়ে গেলেও মনের ধূলোর আস্তরণ যেমন ছিল তেমনই রইল৷ ফলে  দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ ভারতের স্বপ্ণ  যে তিমিরে ছিল, তা আরও অন্ধকারাচ্ছন্ন হ’ল৷

২০১৪ সনের মাঝামাঝি থেকে ২০১৬ সনের আধাআধি পর্যন্ত কেটে গেল মোদি সরকারের দু’বছর৷ কিন্তু এই সময়কালে দেশের উন্নয়ন, বেকার সমস্যার সমাধান  বা অর্থনীতি  কোন ক্ষেত্রেই  খুব বেশি কিছু হের ফের হলো না৷ যুব সমাজ ও দেশবাসীর মধ্যে ধীরে ধীরে এই সরকার সম্পর্কে অবিশ্বাস ও আশাভঙ্গের ক্ষোভ জমতে শুরু করল৷ এর মধ্যে ২০১৬ সালের ১৮ই সেপ্ঢেম্বর ভোর বেলা উরি সেনা ছাউনিতে জঙ্গী হামলা হয় ও ১৭জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হন৷ এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ২৯শে সেপ্ঢেম্বর গভীর রাতে ভারতীয় সেনা নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তান অধিকৃত কশ্মীরের পাঁচটি জঙ্গী ঘাটিতে ‘‘সার্জিক্যাল এট্যাক’’ চালায় ও সেনার এই অপারেশনকে নিয়ে সরকার ব্যাপক কৃতিত্বমূলক প্রচার চালাতে থাকে৷ বিশেষজ্ঞদের মতে এ ধরণের সার্জিক্যাল অপারেশন ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে ইতোপূর্বে বহুবার করা হয়েছে কিন্তু এগুলোকে প্রচারের বিষয় করা হয়নি---কারণ এই ধরণের কার্যকলাপ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাধারণ অঙ্গ হিসেবেই বিবেচিত৷ যাইহোক, এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রচারের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের জিগির তুলে বেশ কিছুদিন দেশের জনগণের বিক্ষোভকে ধাঁমা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়৷

এর কিছুদিনের মধ্যেই ২০১৬ সালের ৮ই নবেম্বর রাত্রি ১২টার পর থেকে সরকারী নির্দেশে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল বলে ঘোষিত হল৷ উদ্দেশ্য হিসেবে জানাল হল ১) কালো টাকার নিয়ন্ত্রণ,২) জালনোটের প্রসার নির্মূলীকরণ,৩) দেশের সুরক্ষা--- কারণ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে জঙ্গী গোষ্ঠীরা জালনোটের সাহায্যে ভারতবর্ষের জঙ্গী কাজকর্ম ও একটি সমান্তরাল অর্থনীতি চালাত৷ কিন্তু নোট বাতিলের ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ দিশেহারা হয়ে এ.টি.এম, ব্যাঙ্ক, পোষ্টফিসের সামনে লাইন দিলেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জরুরী প্রয়োজনের টাকা সংগ্রহ করার জন্যে৷ বেশ কয়েকজনের লাইনে দাঁড়িয়ে মৃত্যুর ঘটনাও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে৷  নগদের অভাবে ছোট মাঝারি ব্যবসায়ীর ব্যবসা বন্ধ হয়েছে,  দিনমজুরদের মজুরীর অভাবে বেকারত্ব গ্রাস করেছে,  হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প  মুখ থুবড়ে পড়েছে, কয়েকলক্ষ মানুষ বেকার হয়েছে, লক্ষ লক্ষ  মানুষ অনাহারে অর্দ্ধাহারে দিন কাটাতে বাধ্য হয়েছে৷  অর্থনীতির বিশেষজ্ঞদের সাবধান বাণীকে উপেক্ষা করে তাদের বিদ্রুপ ও কটাক্ষ করা হয়েছে৷ এরফলে দেশে যে মন্দা ও অর্থনীতিতে  বিরূপ প্রভাব পড়েছিল তার ক্ষত এতদিনেও পুরোপুরি নিরাময় হয়নি৷ দেশের জিডিপি ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার প্রায় দুই শতাংশ কমেছে৷ পরবর্তীকালে হিসেব করে দেখা গেছে বাজারে যে পরিমাণ ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট চালু ছিল  তার প্রায় সবটাই ব্যাঙ্কে ফিরে এসেছে৷ সুতরাং  কালো টাকার তত্ত্ব প্রমাণিত হয়নি৷ দ্বিতীয়তঃ বাজারে নূতন ২০০০ ও ৫০০ টাকার নোট চালু হলেও  সেগুলোর  জাল নোটও  ছড়িয়ে পড়েছে৷ তৃতীয়তঃ জঙ্গী কাজকর্মে ভাটা পড়েনি,  তা’ পরবর্তী ঘটনাক্রমের দ্বারাই প্রমানিত হয়৷ উল্টে দেশের অর্থনীতির চূড়ান্ত ক্ষতি হয়েছে, যা বিশেষজ্ঞদের  আশংকা ছিল, কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়েছে,মানুষের যন্ত্রণা ও দুর্দশা বেড়েছে৷ অতিসম্প্রতি  একটি  তথ্য জানার অধিকার আইনের ভিত্তিতে আবেদনের জবাবে, রিজার্ভব্যাঙ্কের  অবস্থান ও ভূমিকার বিষয়ে জানানো হয় যে  নোট বাতিলের অব্যবহিত পূর্বেই  আর.বি.আই থেকে আপত্তি জানিয়ে বলা হয়েছিল ---নোটবন্দীর ফলে দেশের অর্থনীতি মার খাবে ও কালো টাকার নিয়ন্ত্রণেও এই সিদ্ধান্ত বিশেষ কার্যকরী হবে না৷ তবুও সরকারের চাপে  রিজার্ভব্যাঙ্ক নোটবন্দিতে রাজি হয়েছিল৷ তথ্যাভিজ্ঞ মহলের অভিমত,সরকারের নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আসল কারণ ছিলো উত্তর প্রদেশের তৎকালীন নির্বাচন৷ এটা সর্বজনবিদিত যে, নির্বাচনের সময় নগদ কালো টাকার ব্যাপক খেলা চলে৷  সরকারের নিজের দলের হাতে থাকা বড় নোটকে ছোটো নোটে রূপান্তরণ ও অন্যান্য কাজে লাগিয়ে নিজেদের অর্থশক্তিকে মজবুত রেখে বিরোধীদের বড় নোটের সঞ্চয়কে অর্থহীন করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে  এই নোট বাতিলের প্রয়োজন হয়৷ ফলে বিরোধী দলগুলি রাতারাতি ভিখারীতে পরিণত হয় ও তাদের হাতে থাকা বড় নোটের সঞ্চয়  নির্বাচনের কাজে লাগাতে অসমর্থ হয়৷

নোটবন্দির পরে আসে জি.এস.টি যার হার ও আনুষঙ্গিক বহু বিষয় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে  পরিবর্তিত হয়েছে৷ জি.এস.টির হিসাব, তার রিপোর্ট জমা ও অন্যান্য অসুবিধার কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা বিস্তর ঝামেলার সম্মুখীন হয়েছেন, যা এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়েনি৷  এরফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের কর্মসংস্থান৷ এন.এস.এস.ও-এর সমীক্ষার ফল অনুযায়ী ২০১৭-১৮ সালে দেশের বেকারত্বের হার ৬ শতাংশের উপরে উঠেছিল যা গত ৪৫ বছরে সর্বাধিক৷ একটি বেসরকারী সংস্থা সি.এম.আই.ই-(সেন্টার ফর মনিটারিং ইন্ডিয়ান ইকনমি)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৯ সালের বেকারত্বের হার হয়েছে ৭.২ শতাংশ৷ অর্র্থৎ বেকারত্ব ক্রর্মবর্দ্ধমান হারে বেড়েই চলেছে৷ দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে বিজয় মাল্য , নীরব মোদি, মেহুল চোক্সির  দল হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্ক জালিয়াতি করে ফেরার হয়েছে ও বিদেশে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ অনাদায়ী ঋণের চাপে ধুঁকতে থাকা দেশের সরকারী ব্যাঙ্কগুলিকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পুনরুজ্জীবনের জন্যে দেওয়া হচ্ছে যা সাধারণ মানুষের করের টাকা৷ এই অর্থে দেশের বহুবিধ উন্নয়ন হতে পারত৷ ফলশ্রুতি হিসেবে শিল্প কৃষি সর্বক্ষেত্রেই যথেষ্ট উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না৷ কিছুদিন আগেই দেশের নানান স্থানে কৃষক বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছে৷ অপ্রয়োজনীয় কিছু মূর্ত্তি স্থাপনে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে, যা কোনভাবেই মানুষের কোন উপকারে লাগবে না৷ এই বিপুল অর্থে সাধারণ মানুষের স্বার্থে শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্যে ব্যবহার করা যেত৷ এছাড়া বেশ কিছুদিন থেকে সংবাদপত্রে ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে ফ্রান্স থেকে রাফাল যুদ্ধ  বিমান ক্রয় সংক্রান্ত  সংবাদ--- যার সারমর্ম হচ্ছে, ভারতের এক ব্যবসায়ীর পকেটে বিশাল অঙ্কের টাকা ঢোকানোর লক্ষ্যে রাফালের দামে বড় ধরনের কারচুপি করা হয়েছে৷ আর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকারের কর্তা ব্যষ্টির নাম৷ এমনকি কয়েকদিন আগে সুপ্রিম কোর্টে এও জানানো হয়েছে যে রাফাল সংক্রান্ত ফাইল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে চুরি হয়ে গেছে৷ বিরোধী দলগুলি এই রাফাল বিষয়ে বহু প্রশ্ণ সামনে এনে সরব হয়েছেন, কিন্তু সরকারপক্ষ এই সমস্ত প্রশ্ণের বিষয়ে ধোঁয়াশা জিইয়ে রেখেছে, স্পষ্ট উত্তর দিতে টালবাহানা করছে৷

একদিকে জনগণের বহুবিধ হতাশা জনিত ক্ষোভ, কর্মসংস্থানের অভাব, বেকারত্ব,উন্নয়নের ঘাটতি---অন্যদিকে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগ, এইসব মিলে বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা দ্রুত তলানিতে নেমে এসেছে, যার প্রমাণ পাওয়া গেছে সাম্প্রতিক অতীতে কয়েকটি  রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে৷ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সামাজিক বিভাজন ও বিদ্বেষের রাজনীতি,  স্বঘোষিত গোরক্ষকদের অতিসক্রিয়তায় দেশের বিভিন্নস্থানে গণপ্রহার ও হিংসা-সন্ত্রাসের বাতাবরণ৷ জাত-পাত,ভাষা-ধর্মমত, গোষ্ঠী সম্প্রদায়গত বিভেদ, বিদ্বেষমূলক অসহিষ্ণুতা ও ভয়ের পরিবেশকে  উৎসাহিত করার ঘটনায় যুক্ত হচ্ছে রাজনৈতিক নেতা নেত্রীগণ৷ ফলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমশঃ অগ্ণিগর্ভ হয়ে উঠছে৷

দেশের আভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতিতে গত ১৪ই ফেব্রুয়ারী ঘটে যায় কশ্মীরের পুলওয়ামার অবন্তীপোরায় সি.আর.পি জওয়ানদের কনভয়ে গাড়ী বোমার হামলা যার পেছনে ছিল পাকিস্তান পন্থী জইশ-ই-মহম্মদ নামক জঙ্গী গোষ্ঠী৷ এই ঘটনায় ৪৯জন সি.আর.পি মারা যায়৷  সংবাদে প্রকাশ, জঙ্গীহানার সম্পর্কে গোয়েন্দা বাহিনী গত ৮ই ফেব্রুয়ারী একটি সতর্ক বার্র্ত  জারি করে৷ তথাপি কোন অজ্ঞাত কারণে সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও জঙ্গীহানা ঘটে গেল৷ এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ২৬শে ফেব্রুয়ারী ভোররাত্রে ভারতীয় বায়ুসেনার ১২ টি মিরাজ যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের সীমায় ঢুকে জঙ্গী সংঘটন জইশ-ই-মহম্মদের একটি বড় ঘাঁটির উপর বোমা বর্ষণ করে৷ অনেক জঙ্গী নিহত হয়৷ এরপরে ভারত-পাকিস্তানের সীমান্ত পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ও দুইদেশের যুদ্ধবিমান ধবংস ও তৎপরবর্তী ঘটনাক্রমের ফলে এক যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়৷ দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলই ভারতীয় সেনাদলের পদক্ষেপকে সমর্থন করে৷কিন্তু ইতোমধ্যেই এই এয়ার স্ট্রাইককে নিয়ে সরকার পক্ষে নোংরা রাজনীতি করার অভিযোগ ওঠে৷ দুই দেশের এই যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক  সুবিধা গ্রহণের জন্যে প্রচারের বিরুদ্ধে  বিরোধীদল গুলি প্রতিবাদ করে৷ বর্তমানে দেশে জাতীয়তাবোধ, দেশপ্রেম,দেশপ্রেমিক ও দেশ বিরোধীর নূতন সংজ্ঞা নির্র্ধরণের প্রচেষ্টা চলছে, যা সর্বতোভাবে নিন্দনীয়৷ রাজনৈতিক দলগুলি তাদের দলীয় স্বার্থের উদ্দেশ্যে যে কোনো বিষয়কে ব্যবহার করে আর এই কারণেই দেশবাসীর মধ্যে বিভিন্নভাবে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা হয়৷ যেহেতু নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গেছে তাই এই সুযোগ গুলিকে কাজে লাগাতে সব দলই তৎপর---কেউ এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে রাজি নয়৷

এমতাবস্থায়  দেশবাসীকে অত্যন্ত সতর্কতা ও সুবিবেচনার মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করতে হবে৷ ---আর এটাই দেশের নাগরিকদের পবিত্র সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য৷ কোন স্বচ্ছতার চশমা,ভাঁওতাবাজী, রাজনৈতিক চমক, আত্মপ্রচারের ঢক্কানিনাদে দেশের কোনো মঙ্গল সাধিত হয় না৷ ধাপ্পাবাজি ও দুর্নীতির ধোঁয়াশায়  সব স্বচ্ছতার চশমাই ঝাপসা হয়ে যেতে বাধ্য৷ তাই মানুষের প্রকৃত কল্যাণ করতে গেলে প্রথমে চাই উন্নত সামাজিক ও অর্থনৈতিক দর্শন যা মানুষকে সত্যিকারের মানুষ তৈরী করে শোষণহীন সমাজের পথনির্দেশনা দেবে৷ এই দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে চাই চরম নীতিবাদী আপসহীন সংগ্রামী, দৃঢ় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত  আধ্যাত্মিকতায় সমুন্নত নেতৃত্ব৷ এই সকল সদবিপ্রদের পরিচালনাতেই শোষণহীন মানবসমাজ রচিত হবে৷ এই সমাজে কোনোরকম সংকীর্ণতা, জাত-পাত-ধর্মমত সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ থাকবে না৷ মহান দার্শনিক শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার প্রবর্তিত ‘‘প্রাউট’’ (প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব)-ই বর্তমান পৃথিবীর মানুষকে সুন্দর সমাজ ব্যবস্থার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে---  যার মূল বক্তব্যই হলো, মানুষের সমাজ এক ও অবিভাজ্য--- হরর্মে পিতা,গৌরী মাতা, স্বদেশভুবনত্রয়ম্৷