শিবপূজা করে মিলনের মহান বাণী শোনালেন কশ্মীরের মুসলিম ভাইয়েরা

সংবাদদাতা
প্রবীর সরকার
সময়

সম্প্রতি সারা দেশে শিবরাত্রির পবিত্র তিথিতে শিব বন্দনা হয়ে গেল৷ সেই পবিত্র দিনে কশ্মীরের পণ্ডিতগণ যাঁরা হিন্দু তাঁরা ঝিলমের তীরে (সুম্বল শহরের গাঁ ঘেঁষে বহে চলা) হিন্দু মন্দিরে শিবের বন্দনা করতেন৷ কিন্তু নব্বই দশকের গোড়ায় সন্ত্রাসবাদের রক্তচক্ষুতে ভীত-সন্ত্রস্ত হিন্দু পণ্ডিতগণ জন্মভূমি ত্যাগ করে চলে যান৷ এখন এই মন্দিরে কেউ আসেন না৷ মুসলিম ভাইয়েরা এবারে মন্দির চত্বর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে শিবের পূজা করেন৷ তাদের সমাগমে মন্দির চত্বর প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে কশ্মীরী পণ্ডিতদের সবথেকে বড় উৎসব শিবরাত্রি৷ স্থানীয় কন্ট্রাক্টর ইমতিয়াজ আহমেদ শিবরাত্রি উৎসবের প্রার্থনার অগ্রভাগে ছিলেন ও শিবলিঙ্গে জল ঢেলে ফল-মিষ্টি নিবেদন করেন৷ স্থানীয় মুসলিম ভাইয়েরা প্লাকার্ড হাতে কশ্মীরী পণ্ডিত সম্প্রদায়কে নিজেদের ঘরে ফেরার বার্তা দিয়েছেন৷ শ্রী আহমেদ বলেন, ঐতিহ্যকে সম্মান করেই মন্দিরের পূজা করা হয়েছে৷ জনগণের মধ্যে আখরোট বিতরণ করা হয় স্থানীয় মঞ্জুর আহমেদ বলেন, কশ্মীরী পণ্ডিতেরা আমাদের শরীর ও আত্মার অঙ্গ৷ ওদেরকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ আমরা তাদের এখানে ফিরে আসার বার্তা দিলাম---আপনারা ফিরে আসুন, আমরা পাশে আছি৷ বিশেষ দ্রষ্টব্য যে, যখন কশ্মীরকে বের করে নেবার নিরন্তর ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত পাকিস্তানী সরকার ও জঙ্গীরা---এমনকি পাকিস্তানপন্থী ভারতের অন্তর্গত কশ্মীরের কিছু সংখ্যক মানুষেরা৷ তখন সত্যিই যারা মানবতাবাদী, আসল কশ্মীরী ভাই, তারা আহ্বান দিচ্ছেন কশ্মীরের মাটির মানুষ কশ্মীরী পণ্ডিতদের, যাঁরা প্রাণের দায়ে জন্মভূমি ত্যাগ করে উদ্বাস্তু হয়ে কশ্মীরের বাইরে সরকারী উদ্বাস্তু শিবিরে দিন গুজরান করছেন তাঁদের দেশে ফিরে আসতে৷
বর্তমান বিজেপি সরকার নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, কশ্মীরী পণ্ডিতদের নিজ ঘরে ফেরানো হবে৷ কিন্তু নির্বাচন কবেই শেষ হয়েছে অথচ কশ্মীরী পণ্ডিতেরা আজও উদ্বাস্তু হয়ে দিনযাপনের গ্লানি বহন করছেন ও তাদের কশ্মীরে ফেরার কোনও ব্যবস্থা সরকার করতে সক্ষম হননি৷ এ ব্যাপারে কশ্মীরের রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রের সঙ্গে যৌথভাবে পরিকল্পনা করে কশ্মীরী পণ্ডিতদের ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে৷ কারণ নিরাপত্তার অভাব হেতুই অনেকেই নিজ জন্মভূমিতে ফিরে যেতে সাহস পাচ্ছেন না৷ তবু এখানকার মুসলিম ভাইয়েরা যে এক সুন্দর নজির সৃষ্টি করেছেন তা অবশ্যই প্রশংসনীয় ও সারা দেশের কাছে ঐক্য-সংহতির পবিত্র নিদর্শন হিসেবে শিক্ষণীয় বার্তা বিশেষ৷