সমগ্র বাঙালী জাতিকে বাঙলা ভাগের চক্রান্তের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে হবে

লেখক
প্রবীর সরকার

দার্জিলিংয়ের গোর্খারা হ’ল নেপালের অধিবাসী৷ তারা নেপালী৷ নেপাল যেহেতু স্বাধীন রাষ্ট্র তাই তারা ‘নেপালল্যাণ্ড’ আন্দোলন করার দাবী না তুলে গোর্খাল্যাণ্ড গড়ার দাবী তুলছে দীর্ঘকাল ধরে৷ এই কাজে মদত দিয়ে আসছে বিশেষ করে কমিউনিষ্ট দল৷ কমিউনিষ্টরা বিচ্ছিন্নতাবাদী ও হিংসাশ্রয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতে রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনেক দিন থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ তাই বাম শাসনকালে জ্যোতি বসুর আমলে এরা রাজ্য সরকারের মদতে সুবাস ঘিসিংকে নেতা বানিয়ে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ গড়ে তোলে৷ সরকারী ভাবে গোর্খা পার্বত্য পরিষদ গঠন রুখতে আমরা বাঙালীর পক্ষ থেকে তীব্র বিরোধিতা করা হয় রাজভবনের সামনে৷ আমরা বাঙালীর পক্ষ থেকে ব্যারিষ্টার নীহাররঞ্জন দত্ত মজুমদার গোর্খা পার্বত্যপরিষদের বিরুদ্ধে মহামান্য আদালতে মামলা রুজু করেন৷ কিন্তু সেদিন সকাল ৯-টা ৩০ মিনিটেই গোর্খা পার্বত্য পর্ষদে সই-সাবুত হয়ে যাওয়াতে মহামান্য আদালতে মামলা খারিজ হয়ে যায়৷ তখন আমরা বাঙালী দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শ্রীশঙ্কর গঙ্গোপাধ্যায়৷ সুবাস ঘিসিং বহাল তবিয়তে জি এন এল এফ প্রধান হয়ে শাসন চালান৷ কিন্তু সরকারী অনুদানের টাকা যা দার্জিলিংয়ের উন্নয়নের জন্যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার দিয়েছিলেন, সেই অনুসারে সঠিক কাজ না হওয়াতে নানা অনিয়মের দরুণ দলে বিদ্রোহ হয়৷ সুবাস ঘিসিংকে সরিয়ে বিমল গুরুং পাহাড়ের ক্ষমতায় আসেন৷ বিমল গুরুং সুবাস ঘিসিংয়ের খুব কাছের মানুষ ছিলেন ও দলের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নেতাও ছিলেন৷ সেই সুবাদে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা গড়ে নতুন করে আন্দোলন চালিয়ে যান৷ গোর্খাল্যাণ্ডের দাবী নিয়ে বিমল গুরুং ও সাকরেদরা পাহাড়ে চরম অশান্তির সৃষ্টি করেন৷ ঘন ঘন বনধ্ ডাকায় দার্জিলিংয়ে আয়ের প্রধান উৎস পর্যটন শিল্প চরমভাবে মার খায়৷

এদিকে পশ্চিমবাঙলায় রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়৷ বামেদের রাজনৈতিক পতন ঘটল ও রাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় এল৷ তৃণমূল নেত্রী বিমল গুরুংকে সন্তুষ্ট করতে একধাপ এগিয়ে গোর্খাল্যাণ্ড টেরিটোরিয়াল এ্যাডমিনিষ্ট্রেশন (জি.টি.এ) উপঢৌকন দেন৷ জি.টি.এ.-র সঙ্গে ‘গোর্খাল্যাণ্ড’ কথাটি জুড়ে দেওয়া মমতার একেবারে ঠিক কাজ হয়নি৷ কেননা, দার্জিলিং কোনও যুক্তিতেই গোর্খাদের ল্যাণ্ড নয়৷ গুরুং অন্ততঃ বাহ্যত এতে সন্তোষ প্রকাশ করেন৷ পাঁচ বছরের জন্যে জি.টি.এ. গঠিত হয়েছিল৷ বর্তমানে এর মেয়াদ শেষ হতে চলেছে৷ আবার জুলাইয়ে জি.টি.এ.-র নতুন করে নির্বাচন হওয়ার কথা৷

জি.টি.এ তৈরী হওয়ার পর রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় ২০০০ কোটি টাকা দার্জিলিংয়ের উন্নয়নের জন্যে বরাদ্দ করেছিল৷ কিন্তু অদ্যাবধি জি.টি.এ.-র পক্ষ থেকে তার কোনও ইয়ূটিলাইজেশন সার্টিফিকেট অর্থাৎ খরচের হিসেব দেওয়া হয়নি৷

মমতার পক্ষ থেকে জি.টি.এ.র হিসেবপত্র অডিট করার প্রক্রিয়া শুরু করতেই গুরুং অন্য মূর্ত্তি ধরেছেন৷ তার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র সুকলে বাংলা ভাষা পড়াতে হবে৷ গুরুং এরও চরম বিরোধিতা করতে শুরু করে৷ মমতা এ মাসের গোড়ায় দার্জিলিংয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন ও দার্জিলিংয়ের উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করেন৷ এর মধ্যে দার্জিলিংয়ে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে৷ লেপচা, ভুটিয়া প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্যে পৃথক বোর্ডও তৈরী করেছেন৷

বিমল গুরুং এসবের ফলে নিজের জনপ্রিয়তা হারানোর ও ক্ষমতা চলে যাওয়ার ভয়ে আবার নতুন করে হিংসাত্মক আন্দোলন শুরু করেছেন৷ আবার শ্লোগান তুলেছেন গোর্খাল্যাণ্ড চাই, অন্য কিছু নয়৷ আর এই দাবীতে একটানা বনধ্ ডেকে সারা দার্জিলিং জুড়ে সরকারী সম্পত্তি নষ্ট, ভাঙচুর, অগ্ণিসংযোগ প্রভৃতিতে মোর্চা অনুগামীদের লেলিয়ে দিয়েছেন৷

কিন্তু এইভাবে জঙ্গী আন্দোলনের কাছে রাজ্য ও কেন্দ্রকে মাথা নত করলে চলবে না৷ দার্জিলিং বাঙলার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ বিদেশ থেকে এসে বিদেশী রাষ্ট্রের মদতে বাঙলার মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলবে না৷ কঠোরভাবে এই আন্দোলনকে দমন করতে হবে৷ সমস্ত বাঙালী জাতিকে বাঙলা ভাগের চক্রান্তের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে হবে৷