সময়োচিত কিছু কথা

লেখক
বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়

আমরা কেউ ভালো নেই সকলেই এক দুঃসহ অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছি  একদিকে করোনা আতঙ্ক, অন্যদিকে  অর্থনীতির বেহাল অবস্থা ছাত্রছাত্রা থেকে বেকার যুবক-যুবতী, কর্মচারী সবাই ঘোর অনিশ্চয়তার  মধ্যে দিন কাটাচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ মহামারীর কারণে বেশিরভাগ মানুষই প্রায় ঘরবন্দী প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে স্বচ্ছন্দে কেউ বেরোতে সাহস পাচ্ছেন না মানুষের মধ্যে পারস্পরিক মেলামেশা, ছোটোদের খেলাধুলো সবই প্রায় বন্ধ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সকলেরই ব্যাহত সরকার আনলক ঘোষণা করলেও সংক্রমণ বৃদ্ধির ভয়ে অনেকেই প্রয়োজন ছাড়া  বাড়ির বাইরে বেরোতে চাইছেন না এর উল্টো ছবিও চোখে পড়ছে মাস্কবিহীন কিছু আহাম্মককেও রাস্তাঘাটে বা বাজারে  দেখা যাচ্ছে যারা স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের ও অন্যদের বিপদ ডেকে আনছে

সুকল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ৬ মাসের উপর বন্ধ ছাত্রছাত্রাদের পড়াশোনা শিকেয় উঠেছে এমনকি এবছর বিভিন্ন পরীক্ষায় সব বিষয়ের পরীক্ষা না নিয়েই ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে দীর্ঘদিন কলেজ যেতে না পারায় ছাত্রছাত্রাদের মধ্যে গভীর হতাশা দেখা দিয়েছে আবার নীচু ক্লাসের পড়ুয়ারা পড়াশোনার ব্যাপারে এতটাই অমনোযোগী হয়ে পড়েছে যে বাবা-মায়েরাও তাদের সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারছেন না কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস চালু করলেও সর্বত্র তা সম্ভব হয়নি এর উপরে অনেক পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্যের হঠাৎ রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেইসব পরিবারগুলিতে অন্ধকার নেমে এসেছে বেসরকারী ক্ষেত্রে কাজ করত এমন অনেককেই হয় ছাঁটাই করে দিয়েছে নতুবা বাধ্য করেছে অর্ধেক বেতন নিতে বিভিন্ন পেশার রোজগার হীন মানুষদের মধ্যে অনেককে সব্জি বা ডিম বিক্রি করতে, আবার কেউ কেউ রাস্তার ধারে বসে ফল বেচছে দেখছি এ সব কিছু নিয়ে বিভিন্ন পরিবারের অভ্যন্তরীণ যে খবর আসছে আমাদের কাছে তা মোটেই সুখকর নয় আট থেকে আশি বিভিন্ন বয়সীরাই নানান কারণে হতাশাগ্রস্ত সমীক্ষায় জানা গেছে বহু মানুষ বর্তমানে মনোরোগের শিকার অভাবের তাড়নায়, অবসাদে কেউ কেউ আত্মহননের পথ ও বেছে নিচ্ছে বেকার যুবক যুবতীদের অবস্থা চিন্তা করলে তো শিউরে উঠতে হয়! নিয়োগ তো দূরের কথা, নিয়োগের পরীক্ষাগুলোও প্রায় সব বন্ধ আছে যে সমস্ত শিক্ষিত যুবক যুবতী গৃহ শিক্ষকতা বা টিউটোরিয়াল হোম চালিয়ে উপার্জন করছিলেন তাও একপ্রকার বন্ধ তারাও প্রায় রোজগার হীন এখন অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক-কর্মচারী বা বিভিন্নক্ষেত্রের শিল্পী ও কলাকুশলী সকলেই গভীর সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন শুধুমাত্র মহামারীর কারণেই যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এমন সংকটজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা কিন্তু নয় এই ঘটনার অনেক আগে ছাঁটাই শুরু হয়েছিল কলকারখানা বন্ধ হতে শুরু হয়েছিল দেশ যে অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদগণ বার বার কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্কও করেছিলেন

২০১৪ সালে শুনেছিলাম দেশে বছরে দুকোটি বেকারের চাকরি বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে! ভেবেছিলাম যাক এবার বুঝি যুবক-যুবতীদের কিছু একটা হিল্লে হতে চলেছে

কত কোটির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলো সে তথ্য অবশ্য আমার কাছে নেই, তবে বর্তমানে দেশে বেকারত্বের সংখ্যা যে সর্বাধিক সে পরিসংখ্যান সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে আমাদের রাজ্য তো আর দেশের বাইরে নয়, তাই এখানেও অবস্থা কমবেশি একইরকম এখন সরকারি দপ্তরের নিয়োগ বেশিরভাগ চুক্তিভিত্তিক ও তা  অবসরপ্রাপ্তদের জন্য ফলে বেকার ছেলে মেয়েদের অবস্থা খুবই করুণ

বেকারত্বের সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এক  ধবংসাত্মক খেলায় নামিয়েছে এই সমস্ত সবুজ নবীন প্রাণকে এদের ভুল  বুঝিয়ে নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলছে ভাইয়ে ভাইয়ে লড়াই লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে এদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে অনেক সময় আবার যারা একটু বেশি সচেতন তারা এই সমস্ত দল বা নেতাদের এড়িয়ে চলে

 সর্বজনের হিতের ভাবনা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কাজ করছে কিনা তা ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে অনুরোধ করব ছাত্র যুবদের দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল কী বলেছে যে তারা ১০০ শতাংশ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দেবে আসলে তাদের কাছে এমন কোনো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নেই যে তারা এ বিষয়ে গ্যারান্টি দেবে মানুষের সামগ্রিক দুঃখ দুর্দশা দূর করতে হলে শুধু ভোট দেওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার থাকলে হবে না, চাই অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা অর্থাৎ সকল মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ভারতের মত এমন সম্পদশালী দেশে কেমন ধরণের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করলে সকলস্তরের মানুষের কর্মসংস্থানের  নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব সে ব্যাপারে মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার প্রবর্তিত প্রাউটতত্ত্বে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে ছাত্র-যুব সহ সকল স্তরের মানুষের কাছে  আবেদন জানাই প্রাউটতত্ত্ব সম্বন্ধে জানুন ও শোষণমুক্ত ভারত গড়ে তোলার কাজে হাত লাগান