শোষিত পশ্চিম বাঙলায় সোনার বাঙলা গড়ার ডাকটাই জনগণের সঙ্গে প্রতারণা

লেখক
প্রভাত খাঁ

ধনীদের দ্বারাই শষ্য শ্যামলা বঙ্গভূমি যা একদিন সোনার বাঙলা ছিল তাকে হত দরিদ্রে পরিণত করা হয়েছে৷ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ‘‘বণিকের মানদণ্ড দেখা দিল পোহাল শর্বরী রাজদণ্ডরূপে৷ ইংরেজ বনিকরাই সোনার বাঙলাকে শ্মশানে পরিণত করে৷ আর তাকে সাহায্য করেছিল এদেশের মীরজাফর ধনীরাই! হঠাৎ শোনা যাচ্ছে  দেশের ধনীদের পৃষ্টপোষক বিজেপি দল করুণা পরবশ হয়ে রক্তশূন্য ক্ষত বিক্ষত এক টুকরো পশ্চিম বাঙলাকে সোনার বাঙলা গড়বে তাই দলে দলে পশ্চিম বাঙলার মাটিতে  পা রাখছেন বাঙলার বাহির থেকে এসে৷ ২০২১ সালের রাজ্যে সাধারণ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকে করোনায় আক্রান্ত এরাজ্যে লোক জমায়েৎ করার বিধিনিষেধ অমান্য করে মিটিং মিছিল করে চলেছেন৷ সেই সমাবেশে এ রাজ্যের এই দলের অনুগামী ও কিছু  দলছুট নেতানেত্রীগণ সদর্পে হুঁংকার দিচ্ছেন বর্ত্তমান রাজ্য সরকারকে গদীচ্যুত করে তাঁরাই নাকি সোনার বাংলা (?) গড়বেন৷ বিজেপির বর্ত্তমান যেদল আছে সেটার কাঠামোতে আকৃতি দান করেন অঞ্চল থেকে কিছু দলছুট নেতাকর্মীগণই৷ তাঁরা এ রাজ্যের জনগণের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে দেবেন সবদিক থেকে৷ প্রতিমাসেই বিজেপির বড়ো বড়ো নেতা এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্বভারতীয় দলের সভাপতিগণ আসছেন পশ্চিম বাঙলার রাজ্য শাসন কব্জা করতে৷ সেই উদ্দেশ্য ‘‘সোনার বাঙলা গড়ার ডাক’’৷ কিন্তু বিজেপি তো সারা ভারতের শাসন ক্ষমতায় এসেছে৷ আর্থিক ও সামাজিক সার্বিক উন্নতি ঘটাতে সেটাই অদ্যাবধি সারা ভারতের কতটুকু উন্নতি ঘটিয়েছেন ঐসব নেতা নেত্রীগণ তার ছবি কি আশান্বিত করেছে ভারতকে? অর্থনৈতিক অবস্থাতে ভারতের স্থান তলানিতে৷ চরম বেকার সমস্যায় সারা দেশ কাতর, চরম দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে কোটি কোটি ভারতবাসী-মৃতপ্রায় রক্তশূন্য! কলকারখানা সবই প্রায় বন্ধ৷ বর্ত্তমানে করোনায় সারাদেশ আতঙ্কগ্রস্থ, এক ফোঁটা প্রতিষেধক জনগণ পাননি অদ্যাবধি৷ হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন! ভারত বর্ত্তমানে চরম সংকটের মধ্যে রয়েছেন৷ দলমত নির্বিশেষে সবাইকে আজ প্রাণে বাঁচার জন্যে এক হয়ে কাজ করতে হবে৷ তা না করে গদীর লোভে কেন্দ্রের শাসক দল বাঙলাকে (প.বাঙলাকে) সোনার বাঙলা পরিণত করতে মনে হয় খুব বেশী আগৃহশীল হয়ে পড়েছেন৷ এর  আসল উদ্দেশ্যটা যে কী সেটা পোড় খাওয়া বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী তা বুঝে ফেলেছেন৷

বর্তমানে ভারত নাকি নেপাল, পাকিস্তান, বাংলাদেশের চেয়ে জীবন যাত্রার মানের দিক থেকে পশ্চাতে৷ এটাই নাকি আন্তর্জাতিক  সমীক্ষায় প্রকাশিত৷ কিন্তু আকাশ অভিযানে ও অন্য বিষয়ে সরকার  প্রচুর অর্থ ব্যয় করে চলেছেন বহিঃজগতে প্রচার পেতে৷ এ কেমন শাসন গণতন্ত্রে! বাঙলার মানুষ কিন্তু সোনার বাঙলা গড়বে সময়  হলে নিজেরাই৷ কারণ বাঙালী জনগোষ্ঠী স্বাধীনতায় সবচেয়ে বেশী প্রাণ দিয়েছেন৷ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, ঋষি অরবিন্দ, কাজী নজরুল ইসলাম,স্বামী বিবেকানন্দ, রাজা রামমোহন রায়, ঠাকুর রামকৃষ্ণ, আরো অনেকেই এই বাঙলার তথা  সন্তান যাঁরা সম্মানে বাঙলাকে উজ্বল করেছেন৷ আজও অনেকে বাঙলায় আছেন তাঁরা ভাবছেন বাঙলা তথা ভারতকে কিভাবে আর্থিক সামাজিক দিক থেকে উন্নত করা যায়৷ শুধু মেকী বোটে গদী নিয়ে আলাউদ্দীনের আশ্চর্য প্রদীপ এর মতো সোনার বাঙলা গড়বো চুষিকাঠি ধরিয়ে যে উদ্দেশ্য সফল হবে না৷ এই পশ্চিম বাঙলায় সেটা বাঙালীরা হাড়ে হাড়ে বোঝেন ও তাঁরা জানেন রোগে কোন ওষুধ লাগে৷ দীর্ঘ ৭৩ বছরে এই অত্যাচারিত, শোষিত, লাঞ্ছিত হতদরিদ্র রাজ্যবাসী জানেন বাঙলা চিরকালই বামঘেঁসা, তাই  বাঙলায় শ্লোগান পাল্টানোটাই বাঞ্ছনীয়৷

তবে এরাজ্যে বর্তমানে দলত্যাগের হিড়িক পড়েছে একটা৷ কিছু নেতার মধ্যে হঠাৎ করে নীতিবোধ জেগে উঠেছে! তবে সচেতন বাঙালীরা এদের উদ্দেশ্য বুঝে ফেলেছে৷ এই দল ভাঙাভাঙীটা বাঙালী ঘৃণা করে৷ তাই মীরজাফর শব্দটা এখানে ব্যবহার করা হয়৷