শোষণমুক্ত বিশ্ব  কোন পথে?

লেখক
মন্ত্র আনন্দ

আমার কিছু শুভানুধ্যায়ী আমাকে সঙ্কীর্ণ বাঙালীয়ানা ছেড়ে ভারতীয় হবার পরামর্শ দিয়েছেন৷ আমি রাজি, কিন্তু কতকগুলি কিন্তু   আছে, তার সঠিক জবাব পেলে তবেই৷ ভারতে থেকে বাঙালী বলাটা সঙ্কীর্ণ হলে, পৃথিবীতে থেকে ভারতীয় বলাটা কি আর একটু বড় সঙ্কীর্ণতা নয়? আবার সৌরমণ্ডলের মধ্যে থেকে শুধু পৃথিবীর কথা ভাবা আর একটু বড় সঙ্কীর্ণতা৷ আবার সৌরমণ্ডল লাখ লাখ সৌরমণ্ডলের একটি৷ তাই সব সঙ্কীর্ণতা ছেড়ে আমাদের মহাবিশ্বের নাগরিক হতে হবে৷ তখন আমার শুভানুধ্যায়ী বন্ধুদেরও হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্থান বলা ছাড়তে হবে, কি রাজী?

এবার কবি কবিগুরুর কথায় আসি--- ‘‘এই বৃহৎ সত্তার মধ্যে একটা ক্ষুদ্র সত্তা আছে, তাকে বলে জাতিক সত্তা৷ মানুষকে মানুষ করার ভার এই সত্তার ওপর৷’’ এই বৃহৎসত্তা যদি হয় মহাবিশ্ব, তবে ক্ষুদ্র জাতিক সত্তা হল বাঙালী৷ তার একটা নৃতাত্ত্বিক পরিচয় আছে, নিজস্ব লিপি আছে, শব্দ ভাণ্ডার আছে, ভৌগোলিক সীমানা আছে, পোশাক আছে, খাদ্যাভ্যাস, রীতিনীতি এক কথায় একটি জনগোষ্ঠীর যা যা গুণ থাকা দরকার, তার সবগুলো তো আছেই, আরো কিছু বেশি আছে৷ বাঙালী তার আত্মপরিচয় ভুলে গেছে বলেই এই অধঃপতন৷ তাই বাঙালীকে মানুষ হতে হলে আগে জাতিসত্তাকে বাঁচিয়ে তুলতে হবে৷ তারপর শুধু ভারত নয়, শুধু মানুষও নয়, বিশ্বের সমস্ত মানুষ, পশু, পাখী, তরুলতা সবাইকে নিয়ে চলবে বাঙালী৷ বিশ্বের সমস্ত জড় ও জীব সবাই তার আত্মীয়৷ তাই এই জাতিসত্তাকে বাদ দিয়ে ভারতীয় হওয়া যায় না৷ এই জাতিসত্তাকে বাদ দিয়ে ভারতের সমস্ত জনগোষ্ঠীকে ভারতীয় নামের খামারে পুরে দ্বিপদ জীব বানিয়ে শোষণের এক নির্মম কৌশল পঁুজিপতি শোষক গোষ্ঠীর৷ আমি আগে ভারতীয় এই প্রচার যারা করছে, তারা জেনে বা না জেনে শোষকের হাতই শক্ত করছে৷

ভারতবর্ষ মানে কংগ্রেস নয়, বিজেপি নয়, সিপিএম নয়, রাম নয়, বাম নয়, ডান নয় ভারতবর্ষ মানে বাঙালী, অঙ্গিকা, ভোজপুরী , তামিল,তেলেগু, বুন্দেলী, বাঘেলী, ডোগরি, বিদর্ভ, পঞ্জাবি প্রভৃতি ৪৪টি জনগোষ্ঠী৷ আমরা প্রাউটিষ্টরা প্রতিটি জনগোষ্ঠীকে তথা ওই জনগোষ্ঠীর অধূ্যষিত এলাকাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক শোষণমুক্ত করতে চাই৷ এই লক্ষ্যে প্রতিটি জনগোষ্ঠী আন্দোলন করুক---এটাই আমরা চাই৷ আমাদের নীতি হ’ল ‘আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধির পথ ধরে বিশ্বৈকতাবাদের প্রতিষ্ঠা’৷ এই ৪৪টি জনগোষ্ঠীর সংহতিই ভারতের সংহতি৷ মনে রাখতে হবে ভারতবর্ষ একটি ফুল নয়, ৪৪টি ফুলের একটি মালা৷ ভারতবর্ষকে সুন্দর করে গড়তে হলে এই ৪৪ টি ফুলকেই  সুন্দর করে গড়তে হবে৷ ‘‘আমরা বাঙালী’’র আন্দোলনের লক্ষ্য তাই৷

যারা বাঙালীয়ানা ভুলে, ভারতীয় হতে চায় তারাই দেশকে ধবংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে৷ ‘‘আমরা বাঙালী’’র আন্দোলনই ভারতের সংহতিকে দৃঢ় করবে, অর্থনীতিকে এক মজবুত ভিতের উপর দাঁড় করাবে, প্রতিটি মানুষের মুখে তুলে দেবে ক্ষুধার অন্ন, যোগাবে পরণের বস্ত্র, শিক্ষার উপকরণ, করবে চিকিৎসার সুব্যবস্থা, যোগাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই৷ তাই অলীক ভারতীয় স্বপ্ণ না দেখে মজবুত ভারত গড়তে, শোষণমুক্ত নতুন বিশ্ব গড়তে ‘‘আমরা বাঙালী’’র হাতে হাত মেলান৷ আমরা বাঙালী কোন সঙ্কীর্ণতা নয়৷ মহান দার্শনিক ঋষি শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকারের নব্যমানবতাবাদ ভিত্তিক প্রাউট তত্ত্বের বাস্তবায়ন করে’ শোষণমুক্ত বিশ্ব গড়ার পথই‘আমরা বাঙালীর পথ৷ অন্য কোন পথ নেই৷ ৭২ বছরেও যদি ওই সব শোষকের হাতের পুতুল দলগুলোকে না চিনতে পারেন আর কবে চিনবেন? দেশ শেষ হয়ে গেলে?