ত্রিপুরার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সার্বিক কল্যাণ প্রসঙ্গে আমরা বাঙালীর বক্তব্য

লেখক
এইচ.এন.মাহাতো

ত্রিপুরার মূল সমস্যাটা কী? তার সমাধান কোথায়? কারোর না জানার ফলে আজ ত্রিপুরার রাজনৈতিক দলগুলি (কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি) সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে রেখেছে৷ আর স্থানীয় বাঙালী ও জনজাতির মধ্যে লড়াই বাধিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে৷ ভারতের ছোট্ট একটি অঙ্গ রাজ্য ত্রিপুরা বনজ সম্পদের  আকর তার সঙ্গে  অনেকগুলি ছোট ও বড় নদী৷ এই নদীগুলোকে বাঁধ দিয়ে বহুমুখী কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ সব নৌ পরিবহন, মৎস চাষ, ক্যানেল তৈরী করে প্রতি ইঞ্চি জমিতে জলসেচের ব্যবস্থা করে অর্থনৈতিক  সাবলম্বী করতে কোনো অসুবিধাই ছিলনা৷ ত্রিপুরার মোট জমির পরিমাণ ১০৪৯১ বর্গ কিলোমিটার, মোট জনসংখ্যা ৩৬ লাখ ৭১হাজার ৩২ জন (২০১১ সালের গণনার হিসাবে জনজাতি প্রায় ৩০ শতাংশ ও বাঙালী-প্রায় ৭০ শতাংশ) এই সংখ্যায় স্থানীয় মানুষের বেঁচে থাকা ও অর্থনৈতিক  উন্নয়ন  করারপক্ষে যথেষ্ট৷ তবুও রাজনৈতিক নেতারা  মানুষকে পাইয়ে দেওয়ার নেশায় মাতিয়ে বাঙালী ও জনজাতির মধ্যে বিভেদ বাধিয়ে ভাতৃত্বের সম্পর্ক নষ্ট করেছে, মানুষকে কলের পুতুলের মত নাচিয়ে চলেছে ও ত্রিপুরাকে ধবংসের স্তুপের ওপর দাঁড় করিয়ে রেখেছে৷ এর শেষ কোথায়?

এক একটা ভোট আসে, চলেও যায়৷ মানুষের মানবিক মূল্যবোধকে মূল্যায়ণ না দিয়ে, অর্থনৈতিক বা সামাজিক কোন সমস্যার সমাধান না করে জাতি দাঙ্গা লাগিয়ে বা নেতায় নেতায় দল দাঙ্গা ছাড়া কোন কিছুই সাধারণ মানুষকে দিতে পারছে না৷ এর ফল স্বরূপ  আজ এদল গদিতে বসে, আবার ভোট আসে অন্য দল গদিতে বসে, নেতারা  সুযোগ বুঝে আবার দলও পাল্টায় শুধুমাত্র পিঠ বাঁচানোর জন্য৷

ত্রিপুরাবাসীরা একটা কথা  ভালো জানে, সেটা হ’ল আগামীতে ‘আমরা বাঙালী’ দলকে আনতেই হইবো, এবারটা অমুককে সরাই অমুককে আইনা লই৷ এতে ত্রিপুরার মানুষ যে তিমিরে ছিলো সেই তিমিরই পড়ে রইলো৷ তার বঞ্চনার অবসান হয়নি৷

ত্রিপুরার কর্মসংস্থানের উন্নয়ণে কৃষি বা শিল্প নিয়ে কোন রাজনৈতিক দলের এখনো পর্যন্ত সুষ্ঠু  পরিকল্পনা না হওয়াতে  প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনজীবনে কিছু রাস্তা হলেও খাদ্যভাব, পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন জীবনের স্বাদ সহ শিক্ষার আলো খুব কম মানুষই পেয়েছে৷ এখনো অশিক্ষা, গোঁড়ামি, কুসংস্কার  জর্জরিত হওয়া স্থানীয় মানুষ নেতাদের কথায় চলতে গিয়ে মেরুদণ্ডহীনতা ও হীনমন্যতায় ভুগছে৷

‘আমরা বাঙালী’ দল ত্রিপুরাতে বিগত কয়েক দশক ধরে একটা কথা বলে এসেছে --- ত্রিপুরার সমস্যা বাঙালী বা জনজাতির মধ্যে জমি বা লোকসংখ্যার  সমস্যা নয়৷ সমস্যা হোলো অর্থনৈতিক লুটপাট, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, যাহা ত্রিপুরার উন্নয়নকে স্তব্ধ করে রেখেছে৷ এই রাজনৈতিক দলগুলো কেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল৷ তাই হিন্দিসাম্রাজ্যবাদীদের্ নিজেদের ভুলগুলোকে ঢাকতে  নতুন নতুন  আইনে  জমি হস্তান্তর, এ.ডি.সি আরো  কত গুলো আইন তৈরী করে বাঙালীকে জব্দ করতে চাইছে৷ সারা পৃথিবীর ইতিহাস জানে ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলে বেশির ভাগ মাটি বাঙালীস্তানের৷ আজ হোক বা কাল হোক---আগামীতে বাঙালী জাতিসত্তা তাঁর হৃতগৌরব ফিরে পাবে ও নিজের মাতৃভূমি বাঙালীস্তান গড়ে নেবে৷ আমরা বাঙালী দল বিশ্বাস করে প্রাউট তত্ত্ব (প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব)৷ মানুষ জাতির সকল সমস্যার সমাধান প্রাউটে আছে৷ দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর দর্শনে সামাজিক অর্থনৈতিক তত্ত্বে বলেছেন যে মানুষ যে অঞ্চলে বসবাস করবে তাকে সেই অঞ্চলের উন্নয়ন,  তার আর্থিক ও সাংসৃকতিক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলবে ও কোনপ্রকার  অর্থ ও সম্পদের  বহীস্রোত ঘটাবেনা৷ তারাই হবে সেই অঞ্চলের নাগরিক, স্থানীয় বাসিন্দা৷ স্থানীয় সরকার সেখানকার জনসাধারণের জীবন ধারণের নূ্যনতম চাহিদা অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে৷ স্থানীয় কাঁচামালের পূর্ণাঙ্গ সদ্ব্যবহার করে ১) কৃষিজাত শিল্প ২) কৃষি সহায়ক শিল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে৷ স্থানীয় মানুষকে বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন শিল্প ও কৃষি কর্মে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে৷ তাদের দ্বারা  সমবায় তৈরী করে গ্রামীণ অর্থনীতি কে শক্তিশালী করে মানুষকে অর্থনৈতিক গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে হবে৷ তখন মানুষ আর রাজনৈতিক দাদাদের গোলামী করবে না৷ ত্রিপুরার বনজ সম্পদ, কাঁঠাল, আনারস, রাবার, আলু, ধানের তুষ  দিয়ে ছোট বড় শিল্প গড়ে শিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিতদের কাজে লাগানো যাবে৷ লুঙ্গাগুলিতে মৎস্য চাষ, সঙ্গে হাঁস ও জলজ উদ্ভিদ লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতির সুযোগ আছে৷ শ্রী সরকার আরো বলেছেন, ব্লক ভিত্তিক পরিকল্পনা অনুযায়ী কর্মের  সুযোগ বাড়াতে হবে৷ ধর্মনগরের পরিকল্পনা বিলোনিয়ায় চলবে কী- না তাহা আধ্যাত্মিক ও নীতিবাদীরাই বিচার বিবেচনা  করবেন৷ সবশেষে তিনি বলেছেন যাহা কিছু পরিকল্পনা হবে স্থানীয় মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করে, সকলের হিত ও কল্যানের জন্যে৷