উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ করে কেন্দ্রীয় সরকার গণতন্ত্র রক্ষার প্রতিশ্রুতি পালন করুন

লেখক
প্রভাত খাঁ

অসমে বাঙালীদের ওপরে বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তান, পূর্ব বাঙলা থেকে যে সব হিন্দু উদ্বাস্তু হয়ে কয়েক দশক পূর্বে অসমে এসেছেন তাঁদের ওপর সংকীর্ণ রাজনৈতিক কারণে অসমে এমনকি পূর্ব ভারতের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যগুলিতে একনাগাড়ে ভয়ঙ্কর অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে৷ গত কংগ্রেসী আমলে স্থানীয় সরকারগুলি যেভাবে অত্যাচার করত আজও সেইভাবে অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে৷ তার কোন প্রতিকার হওয়া তো দূরের কথা, বরং অত্যাচার আরও তীব্রতর হচ্ছে৷ অত্যন্ত দুঃখের কথা এ ব্যাপারে প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবাঙলার শাসক ও রাজনৈতিক দলগুলিও যেন মুখে কুলুপ এঁটে আছে৷ ইয়ূএনও একটি নোটিশ সারা পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলোকে জ্ঞাত করে দিয়েছেন---তা হল কোন মানুষ যাতে নাগরিকহীন হয়ে না থাকে প্রত্যেক ব্যষ্টি যেন কোন না কোন রাষ্ট্রের নাগরিক হন৷ অসমে প্রকৃত বাঙালী ভোটারদের ডি-ভোটারের নামে তাঁদের ওপর অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছে৷ প্রশাসন তাদের আটকে রেখে মিথ্যা নানাধরণের মামলা দিচ্ছে৷ সকলেই জানে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগ হয়৷ তখন দুই রষ্ট্রের কর্ণধারগণ চুক্তি করেন যে যদি কোন নাগরিক অখণ্ড ভারতবর্ষের এক রাষ্ট্র ছেড়ে অন্য রাষ্ট্রে যান, তাহলে তিনি সেই রাষ্ট্রের নাগরিক হবেন৷ উদ্বাস্তু কেউই থাকবেন না৷ কিন্তু দেখা গেল তংকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে লক্ষ লক্ষ পরিবার অত্যাচারিত হয়ে ভারতে আসেন৷ তাদের আর দুর্ভাগ্যের শেষ হল না৷ তারা আজও উদ্বাস্তু আছেন৷ ওপার বাঙলায় হতভাগ্য বাঙালী অমুসলমানদের জমি-জমা কেড়ে নিয়ে ভিখারী করে তাদের তাড়ানো হচ্ছে৷ আজও তারা প্রাণের দায়ে ভারতে আসছেন জন্মভূমি ত্যাগ করে৷ তাদের ওপর অত্যাচারের খড়্গ আজও মাথায় ঝুলছে৷ কেন এটা হচ্ছে? ইংরেজ আমলে বাঙলার বিশেষ এলাকা অসমে যুক্ত হয়৷ তখনই অধিকাংশ বাঙালী হিন্দু, মুসলমান স্থায়ীভাবে অসমের বাসিন্দা হন৷ তারাও অনেকে এই নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন৷ এর কারণে অসমে কোথাও কোথাও বাঙালীর সংখ্যাধিক্য সেটা কমাতে ও অসমিয়াদের সংখ্যা বাড়াতেই একটা ষড়যন্ত্র বাঙাল খেদা আন্দোলনটা হল৷ নিছক নোংরা দলীয় রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ মাত্র৷ গণতন্ত্রে যদি আজও এটা চলে ও ইচ্ছা করে শাসনে যারা আছেন তাঁরা যদি গোষ্ঠী বিশেষের ওপর অত্যাচার চালান, তাহলে গণতন্ত্র শব্দটা কি আর বেঁচে থাকে৷ সবার ওপরে মানবিক মূল্যবোধ মানুষের ওপর একনাগাড়ে নির্যাতন কী মেনে নেওয়া যায়৷ অসহ্য হয়ে ওঠায় তাই দেখা গেল কলকাতার বুকে সম্প্রতি ১লা এপ্রিল একত্রে ১২টি সংঘটন প্রতিবাদ মিছিল করছে৷ যে ৪২ জন উদ্বাস্তু নেতাদের মিথ্যা মামলায় আটক রাখা হয়েছে তাঁদের সুবিধা দানের দাবীতে এ্যাশোসিয়েশন ফর রিফিউজি ইন ইণ্ডিয়া আর পি আমরা বাঙালী, আম্বেদকর চেতনা মঞ্চ সহ ১২টি সংঘটন৷ কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় তিন বছর আগে  প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনার৷ তাতে আছে যারা ওপার বাঙলা থেকে নানান কারণে এপারে ভারতে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন তাদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে৷ মিছিলে যোগদানকারীরা ও নেতাগণ সেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করার দাবী জানান৷ 

মিছিলেতে অসংখ্য মানুষ যোগদান করেন৷ আমরা দাবী জানাই গণতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব সংশোধন আইন পাশ করে অন্ততঃ গণতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষা করুন৷ অত্যাচারিত বাঙালী জনগোষ্ঠীকে বাঁচার সুযোগ দিন৷ একথা ভুলে গেলে চলবে না যে বাঙলা বিশেষ করে অখণ্ড বাঙলা ও অখণ্ড ভারতবর্ষের বুকে বাঙালী জনগোষ্ঠীই প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলনে এগিয়ে আসে৷ ধীরে ধীরে সারা ভারতবর্ষ সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে৷ তাই মহামতি গোখলে বলেছিলেন---বাঙলা যা আজ ভাবে, ভারত দুদিন পরে তা ভাবে ৷সেই বাঙলার জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ হতভাগ্য অমুসলমান বিশেষ করে হিন্দুরা উদ্বাস্তু হয়ে পথের কাঙাল হয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নির্যাতীত, শোষিত ও অপমানিত হয়েছে পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে৷ এই হতভাগ্য বাঙালীদের করুণ দুর্দশার এটাই মূল কারণ৷ তাই তাদের রক্ষার জন্যে ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ হওয়াটা বিশেষ প্রয়োজন৷ মনে রাখা দরকার নতুন বাঙলাদেশ হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে৷ কিন্তু ওঠানকার কট্টর মুসলমান জঙ্গীরা হিন্দুদের ওপর এখনও অত্যাচার চালাচ্ছে৷ সরকার তাদের রক্ষা করতে সক্ষম হচ্ছেন না নানা কারণে৷ তাই মানবতার কারণে সবদিক বিচার করে ভারত সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ করে উদ্বাস্তুদের প্রাণ রক্ষা করুন৷ তাছাড়া যারা অসমও ওই সমস্ত এলাকায় স্থায়ী বাসিন্দা বহু বছর ধরে সপরিবারে বসবাস করছেন তাঁরাও যদি অহিন্দু হন, তাঁরা যাতে নাগরিকত্ব পেয়ে শান্তিতে বাস করতে পারেন সেটাই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের দেখাটা মানবতার মধ্যেই পড়ে৷ সকল মানুষ ঈশ্বরের সন্তান৷