যোগ একদিবসের জন্যে নয়   সমগ্র জীবনের সুদৃঢ় ভিত্তি

লেখক
মোহন সরকার

যোগ একটা দিবসের জন্যে নয়৷ যোগ সমস্ত দিবসের জন্যে---যোগ সারা জীবনের জন্যে৷

যোগ কী?

 জীবনের অপূর্ণতা থেকে আনবার জন্যে জীবনে যা করণীয় তারই শিক্ষার নাম যোগ৷ একটা চারাগাছকে  বিজ্ঞান সম্মতভাবে বলি পরিচর্যা করা অর্থাৎ ঠিক নিয়ম মেনে জল, সার দেওয়া, বেড়া দেওয়া, ইত্যাদির মাধ্যমে চারাগাছটিকে বিকশিত করে পত্রে ফুল ফলে ভরিয়ে তোলার বিজ্ঞানই হ’ল যোগ৷

‘যোগা’ নয়, ‘যোগ’

অনেকে বলেন, ‘যোগা’, আর তা  বলতে বোঝেন  কিছু আসন-প্রাণায়াম, যার সাহায্যে কিছু রোগ নিরাময় হয় বা নানান্ শারীরিক, কসরৎ দেখিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়া যায়---যাকে বলে জিমনাস্টিকস্৷ ২৪শে জুন বিভিন্ন মঞ্চে যোগাসনের প্রতিযোগিতা হয়, বিভিন্ন শারীরিক কসরৎ প্রদর্শন করা হয়৷ দর্শকবৃন্দ হাততালি দেয়৷ 

আসলে ‘যোগা’  বলে কিছু হয় না৷ ভারতীয় ‘যোগ’  বিদেশে উচ্চারণ বিকৃতির মাধ্যমে হয়ে গেছে ‘যোগা’৷ আমরা ওদের কাছে ওই ভুল উচ্চারণটাই শিক্ষা লাভ করে নিজেদের পান্ডিত্যের বাহাদুরি  দেখাই৷ যেমন,আমাদের ‘কলিকাতা’ শব্দ---ব্রিটিশরা ঠিকমত উচ্চারণ করতে পারত না, বলত ‘ক্যালকাটা’৷  আমরাও  এতদিন সেই ‘ক্যালকাটা’ বলতাম৷ যাহ হোক, কয়েক বছর হল ‘ক্যালকাটা’কে আবার ‘কলকাতা’ করা হয়েছে৷ ‘মুম্বাইকে’ ব্রিটিশরা ভুল করে উচ্চারণ করত ‘বোম্বে’৷ আমরা তাই বলতে অভ্যস্ত হয়েছিলুম, এখন ভূল সংশোধন করে আবার ‘মুম্বাই’ বলছি৷

যোগও  তাই৷ ‘যোগা’ নয়, ‘যোগাটা’ যোগের বিকৃত উচ্চারণ, ‘যোগ’ কথাটাই শুদ্ধ৷

যোগের ইতিহাস

যোগ বলতে কেবল আসন বা তার সঙ্গে প্রাণায়াম নয়৷  যোগের আদি স্রষ্টা ছিলেন আদি গুরু সদাশিব৷ এখানে উল্লেখ্য, সদাশিব, অন্যান্য অনেক দেব দেবতার মতো কাল্পনিক দেব দেবতা নয়, আজ থেকে প্রায় আণুমানিক সাত হাজার বছর পূর্বে এক বিরাট পুরুষ পৃথিবীতে আবিভূর্ত হয়েছিলেন৷ তাঁর নিবাস ছিল হিমালয়ের কৈলাসে৷ তিনি মানব জীবনকে সাার্থক করার জন্যে এই যোগ সাধনার আবিষ্কার করেছিলেন৷ পরবর্তীকালে  অষ্টাবক্রমুনি, যাগ্যবল্ক প্রভৃতি মুনি এই যোগের চর্র্চ ও প্রসার ঘটান৷  ঋষি পতঞ্জলি এই যোগের ওপর দর্শন রচনা করেন, যা পতঞ্জলি দর্শন নামে খ্যাত৷ এমনিভাবে বহু যোগী -মুনি-ঋষি এই যোগকে  নানাভাবে  সমৃদ্ধ করেছেন৷

যেমন মহাযোগী  মৎস্যেন্দ্রনাথ  যে নোতুন একটি যোগাসন প্রবর্ত্তন করে যোগকে সমৃদ্ধ করেছিলেন সেই আসনটির নাম মৎস্যেন্দ্রাসন৷

শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী ও অষ্টাঙ্গিক যোগ

 যোগীশ্বর শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী এই যোগকে যুগোপযোগী করে বিশ্বমানবের কল্যাণে সর্বত্র প্রচারের জন্যে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ‘আনন্দমার্গ প্রচারক সঙ্ঘ’কে দায়িত্ব দিয়েছেন৷ মার্গগুরুদেবের সেই দায়িত্ব মাথায় নিয়ে মার্গের শত শত আচার্য, আচার্যা, অবধূত ও অবধূতিকারা বিশ্বের ১৮২টি দেশে এই যোগসাধনা প্রচার করে চলেছেন৷

 সাধারণভাবে যোগ সাধনা অষ্টাঙ্গিক, অর্থাৎ এই যোগের ৮টি অঙ্গ---যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধ্যান, ধারণা  ও সমাধি৷     (ক্রমশঃ)