যত রঙ্গ এই বঙ্গে

লেখক
জ্যোতিবিকাশ সিনহা

২০২১ সনের সূচনা বিভিন্ন দিক দিয়ে অত্যন্ত অর্থবহ৷ সমগ্র ২০২০ সাল ধরে অতিমারি করোনার মারণ তাণ্ডবের পর এই বছরেরই  প্রথম মাস জানুয়ারির ১৬ তারিখে ভারতে করোনা-প্রতিষেধক  প্রয়োগের আনুষ্ঠানিক শুভারম্ভ করেন দেশের প্রধানমন্ত্রী শ্রীযুক্ত নরেন্দ্র মোদী৷ অবশ্য জানুয়ারি মাসটি সারা বিশ্বে তথা বঙ্গদেশসহ ভারতবর্ষে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে৷ এই মাসেরই প্রথম দিন পৃথিবীর সব দেশে ইংরেজী দিনপঞ্জী মতে বছরের প্রথম দিন হিসেবে স্বীকৃত৷ এছাড়াও এই দিনটিকে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ‘‘কল্পতরু দিবস’’ হিসাবে পালন করা হয়৷ ১৮৮৬ সালের ১লা জানুয়ারি উত্তর কলকাতার কাশীপুর উদ্যানবাটীতে  শ্রীরামকৃষ্ণ কল্পতরুরূপে  ভক্তগণকে আশীর্বাদ করেন৷ আবার এই ১লা জানুয়ারিতেই মহাসম্ভূতি তারকব্রহ্ম শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী প্রতি বৎসর ধর্মমহাচক্রের ব্যাসাসনে উপবিষ্ট হয়ে ভক্তগণ ও সমগ্র সৃষ্টির কল্যাণে ‘‘বরাভয়’’ মুদ্রায় আশীর্বাদ প্রদান করতেন যার ফলে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে বিশেষ তরঙ্গের প্রবাহ সঞ্চারিত হতো৷

এই জানুয়ারি মাসেরই ১২ তারিখ স্বামী বিবেকানন্দের পুণ্য জন্মদিন৷ এই দিনটিও বাঙলা তথা ভারতবর্ষে যথোপযুক্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করা হয়৷ বাঙালী জাতির গর্ব যুবা সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দই ভারতবর্ষের সনাতন ধর্মের মহত্ত্ব, মাহাত্ম্য ও বিশ্বপ্রেমের বাণী সমগ্র বিশ্বের সম্মুখে সর্বপ্রথম তুলে ধরেন শিকাগো বিশ্বধর্মসম্মেলনে৷ জানুয়ারি মাসেরই ২৩ তারিখ বাঙলা, ভারত তথা পৃথিবীর ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় দিন৷ এই দিনটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে এক ক্ষণজন্মা যুগপুরুষ পৌরুষের বজ্রকৌস্তভ, উল্কার অনলশিখা, রাজনীতির জ্বলন্ত ধূমকেতু, আপোষহীন সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক, স্বদেশ প্রেমের অত্যুজ্বল জ্যোতিষ্ক, অকুতোভয় মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী ও আজাদহিন্দ বাহিনীর  সর্বাধিনায়ক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নাম৷ সুভাষচন্দ্র একটি আদর্শ জীবনবোধ, মানবপ্রেম তথা বিশ্বপ্রেমের প্রতিভূ দেশমাতৃকার পরাধীনতার শৃঙ্খলমোচন আন্দোলনের মূর্ত বিগ্রহ ,ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অসম্ভবকে সম্ভব করার এক বিরলতম দৃষ্টান্ত৷

আবার ২৬শে জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস---১৯৫০ সালের এই দিনেই বাবাসাহেব আম্বেদকরের নেতৃত্বে রচিত স্বাধীন ভারতের সংবিধান কার্যকর করা হয় ও ভারতবর্ষ একটি সার্বভৌম প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়৷

প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতবর্ষের সংবিধানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলির সুরক্ষা ও রাষ্ট্র নির্র্মণে নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ সুনির্দিষ্ট করা৷  এছাড়াও প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সারা দেশের সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্যগুলির প্রাদেশিক সরকার ঘটন  করে সমস্ত জনপ্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রীসভার সকল সদস্যকে ভারতীয় সংবিধানের নামে শপথ নিয়ে নিরপেক্ষভাবে শাসনকার্য পরিচালনার  অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হয়৷ এর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো সামগ্রিক জনকল্যাণ, সমাজ ও মানুষের সার্বিক উন্নয়ন ও সকল নাগরিকের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা৷

৩০শে জানুয়ারী জাতীয় কংগ্রেসের তৎকালীন অবিসংবাদী নেতা গান্ধীজির (মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী) মৃত্যু দিবস৷ ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারী আততায়ীর গুলিতে গান্ধীজী নিহত হন৷

উপরিবর্ণিত জানুয়ারি মাসের দিনগুলি সাধারণত ঃ যথাযথ মর্যাদা ও শ্রদ্ধা সহকারে পালন করা৷ এই বৎসর অর্থাৎ ২০২১ সনে পশ্চিমবঙ্গে  বাঙালী মনীষীগণের জন্মদিন বা অন্যান্য উৎসব অনুষ্ঠান পালনের বিষয়ে এক অন্য মাত্রা সংযোজিত হয়েছে৷ ২০২১ সনে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা ও নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতের নির্বাচন কমিশন সবরকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে তৎপর  হয়েছেন৷ তাই রাজনৈতিক দলগুলোর নির্র্বচনী প্রস্তুতির তৎপরতাও লক্ষণীয়৷ শাসক, বিরোধী সব দলই জনগণের  সমর্থন পাওয়ার জন্যে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করছে ও বাঙালী আবেগের সঙ্গে  যুক্ত মনীষীগণের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে একদল অপর দলকে টেক্কা দেওয়ার নিরন্তর চেষ্টা করে চলেছে৷ বিশেষতঃ পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ও কেন্দ্রের শাসকদল তথা পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দল বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি) নামক  দলের মধ্যে এই বিষয়ে চলেছে উৎকট ও উগ্র প্রতিযোগিতা৷ এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বাঙালী মনীষীকে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের  জন্যে সরকারী অনুষ্ঠানের  ব্যবস্থা করা হচ্ছে (যা সাধারণ ক্ষেত্রে সচরাচর ঘটে না)---- বত্তৃণতা-বক্তব্যের সময় অবাঙালী নেতা নেত্রীগণ বিকৃত উচ্চারণে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও মনীষীগণের রচনা থেকে উদ্ধৃতির মাধ্যমে বঙ্গপ্রীতি দেখানোর চেষ্টা করছেন৷ শুধু তাই নয়, এই বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে বিভিন্ন খাতে পশ্চিমবঙ্গের জন্যে বরাদ্দের বহর বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যার দ্বারা প্রমাণ করা যায় যে কেন্দ্রীয় সরকার ও শাসকদল বিজেপি বাঙলার মানুষের কত আপনজন৷

পশ্চিমবঙ্গের সরকারও তাদের বাজেট বরাদ্দে কল্পতরু হয়েছে ও ঢালাওভাবে প্রতিশ্রুতির ঝাঁপি উজাড় করে দিয়েছে৷ যাইহোক নির্র্বচনপূর্ব প্রতিশ্রুতি ও নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরবর্তী কার্যক্রম বা নীতি রূপায়নের বাস্তবতার মধ্যে বিস্তর ফারাক৷ কেন্দ্রীয় সরকারে আসীন বিজেপি দলের নেতৃবৃন্দ অসম  ও ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে বাঙালীদের জন্যে বিবিধ প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে  দিয়েছিলেন, ডবল ইঞ্জিন সরকারের (কেন্দ্র ও রাজ্যে একই দলের সরকার) মাধ্যমে রাজ্যবাসীকে স্বর্গরাজ্য উপহার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন৷ কিন্তু ক্ষমতা দখল করার পরবর্তী চিত্র ও বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণতঃ ভিন্নরকম৷ যে বাঙালীদের বোটে (ভোটে) মন্ত্রী-সান্ত্রীরা নির্বাচিত হয়েছেন তাদেরই সর্বনাশের নীলনকশা রচনা করে রাজ্য থেকে বাঙালী বিতাড়নের চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ নির্বাচিত সরকারের দ্বারাই  বাঙালীরা ক্রমাগত নির্যাতিত, নিপীড়িত,লাঞ্ছিত, বঞ্চিত হয়ে চলেছেন৷ কোথাও রিয়াংদের দ্বারা বাঙালীদের ধনসম্পদ লুণ্ঠন, বাঙালী হত্যা, মহিলাদের  মান-সম্মান নষ্ট করা  কোথাও লক্ষ লক্ষ বাঙালীকে নাগরিকপঞ্জীর তালিকা-বহির্ভূত করে অনাগরিক ঘোষণা, ডিটেনশন ক্যাম্পে বাঙালীদের অত্যাচার, লাঞ্ছনা---স্থায়ী ও মূল বাসিন্দা বাঙালীদের ঘুসপেচিয়া বাংলাদেশী তকমা দিয়ে বিতাড়নের চক্রান্ত, ইত্যাদি ঘটনাক্রমের দ্বারা বাঙালী জাতিকে ধবংস করে দেওয়ার ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে৷ তাই ঘরপোড়া গোরু হিসেবে বাঙালীদের মনে এই প্রশ্ণ জাগা স্বাভাবিক, যারা আজ বাঙালী প্রেমে গদগদ হচ্ছে, বাঙালীদের  কষ্ট -দুর্দশায় কাতর হয়ে কুম্ভীরাশ্রু ঝরাচ্ছে, সোণার বাংলা গড়ার ঝুরি ঝুরি প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছোটাচ্ছে, অবাঙালী নেতানেত্রীরা  পশ্চিমবঙ্গে আনাগোনা বাড়িয়েছে, তথাকথিত দলিত, কর্ষক, দরিদ্রদের  সঙ্গে ভোজনপর্ব চালিয়ে যাচ্ছে৷ নির্বাচন যজ্ঞ মিটে যাওয়ার পর তাদের আর দর্শন পাওয়া যাবে তো? আর সত্যিই যদি বিজেপি দল পশ্চিমবঙ্গের শাসন ক্ষমতা দখল করতে পারে তবে বাঙালীদের ঘর-দোর, সম্পত্তি সম্মান অক্ষত থাকবে তো! নাকি অবাঙালীদের দৌরাত্ম্য ও এন.আর.সি তথা সি.এ.এ-র দৌলতে অসমের বাঙালীদের মতো পিতৃপুরুষের জন্ম-ভিটের দলিল দস্তাবেজ, কাগজপত্র যোগাড়ের উদ্দেশ্যে ছোটাছুটি আর অনিশ্চিত ভবিতব্যের ভয়ঙ্কর দিনগুলোর জন্যে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীদেরও তৈরী থাকতে হবে!

আমরা পশ্চিমবঙ্গবাসীগণ এতদিন জগন্নাথ ঠাকুরের রথযাত্রার কথা জানতাম৷ বঙ্গবোটের  বাজারে এখন আমরা নাড্ডা, শাহ,মোদী ঘোষ ঠাকুরদের রথযাত্রা দেখতে পাচ্ছি৷ পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শাসকদলের হয়ে গত দশ বছর যাবৎ ক্ষমতাসীন থেকে যাবতীয় মধু চেটেপুটে খাবার পরে দলবদল কতিপয় নেতার হঠাৎ বিবেক জাগ্রত হয়েছে ও সদ্য ত্যাগ করা দলের অন্যান্য নেতা নেত্রীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে সাঙ্গপাঙ্গসহ ওইসব রথযাত্রার শরিক হয়ে জয় শ্রীরাম ধবনি মুখরিত ‘‘পরিবর্তন যাত্রা’’য় সামিল হয়েছেন৷ কে জানে, এই যাত্রা শেষ পর্যন্ত বঙ্গসংসৃকতির শ্মশান যাত্রায় পরিণত হবে কি না! বাংলা ও বাঙালীর সুদীর্ঘলালিত মৈত্রী ও মিলনের ঐতিহ্য রয়েছে৷ বাংলার সংসৃকতি -প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসার সংসৃকতি৷ অতিথি বৎসল বাঙালী জাতি যুগে যুগে বহিরাগতদের আপন করে নিয়েছে৷ বহিরাগতদের অনেকেই বঙ্গসংসৃকতির সঙ্গে নিজেদের সংসৃকতি মিলিয়ে  নিয়ে পারস্পরিক আদানপ্রদান এর মাধ্যমে  সুখে শান্তিতে একসঙ্গে বঙ্গদেশে বসবাস করেছেন৷ আবার অনেকে স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে বাংলা ও বাঙালীর প্রভূত ক্ষতি সাধন করেছে৷ তবে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ, অরবিন্দ-রবীন্দ্রনাথ , রামমোহন-বিদ্যাসাগর, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, নেতাজী সুভাষচন্দ্রের উত্তরাধিকার বহনকারী বাঙালী জাতি সেইসব ক্ষতিকে ছাপিয়ে গিয়ে নিজস্ব সংসৃকতির আলোকে উদ্ভাসিত হয়েছে৷ তাই আজ বাঙালী জাতিকেই নিজের জাতিসত্তার মর্যাদারক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে ও অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সচেতনভাবে শুভবুদ্ধির পথে এগোতে হবে যাতে কোনো চটকদারী প্রচার  ও প্রলোভনের চমকে বাঙালী জাতি বিপথচালিত না হয়৷ প্রকৃত ধর্ম, সত্য ও ন্যায়ের পথে দৃঢ় পদক্ষেপে বাঙালী যেন তথাকথিত মেকী ও বিভাজন তোষণের  রাজনীতির কুনাট্য-কুরঙ্গের যবনিকাপাত করে বাঙালী জাতির সম্মানকে স্বমহিমায় সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে এই হোক ঐক্যবদ্ধ বাঙালীগণের একমাত্র শপথ ও অঙ্গীকার৷

 

হে ঈশ্বর এদের রক্ষা করো ধান্দাবাজদের হাত থেকে

এদেশের রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের কথাবার্র্ত্ত শুনলে মনে হয় তাঁরা সত্যই বহুল প্রচলিত শব্দ ‘‘রাজনীতির’’ প্রকৃত অর্থও তাৎপর্যটার মর্য্যাদা ও গুরুত্ব কি বুঝেছেন? মনে হয় হয়তো জানেন৷

কিন্তু শব্দটিকে নিছক  সংকীর্ণ স্বার্থে ব্যবহার  করে থাকেন ইচ্ছাকৃতভাবে শ্রোতাদের বিভ্রান্ত করতে৷ তাই জনৈক ইংরেজ  লেখক ঠাট্টা করে বলেছেন---‘‘রাজনৈতিক নেতাদের স্মৃতিশক্তি বড়ই কম৷’’ কথাটা মনে পড়লো এই কারনেই যে এদেশের  ছোটো বড় রাজনৈতিক দলগুলির মাননীয় নেতা ও নেত্রীগণের অধিকাংশই হলেন ধনীদের দ্বারা পুষ্ট ও তাঁদেরই সেবাদাস৷ তাঁদের স্বার্থে তাঁরা ভারতের মতো বহুভাষাভাষীর দেশে রাজনীতির ব্যবসায় মত্ত৷ নিজেদের স্বার্থে একদিন যে কাজ করেছেন সেই কাজটাকে লোকচক্ষে অস্বীকার করতে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে তাঁদের কোন লজ্জা হয় না৷ আজ সিঙ্গুরে  আন্দোলন করে যে দল ক্ষমতায় আসীন সেইদলের বর্ত্তমান দলছুট নেতা যিনি কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত দলে যুক্ত ও একজন নেতা তিনি দেশের বিখ্যাত এক ধনী গোষ্ঠী সিঙ্গুরে ফেরাতে বর্ত্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে উমেদারী করতে আগ্রহী৷ কারণ ঐ ধনী গোষ্ঠী তাঁদের আন্দোলনে সিঙ্গুর ত্যাগ করেন৷

কিন্তু সেই সময় বামের শাসন ছিল এই হতভাগ্য, পশ্চিম বাংলায়৷ এই পশ্চিম বাঙলার বুকে কিন্তু চিরকালই নোংরা দলবাজিটাই মুখ্য ভূমিকায় বর্ত্তমান৷ তাই যে নেতা অত্যন্ত দুঃখ পাচ্ছেন বলে কেঁদে ভাসাচ্ছেন এটা তার এক নোতুন চাল ছাড়া কিছুই নয়৷ কারণ সেই ধনী  ব্যবসাদার এই রাজ্য ত্যাগ করে বর্ত্তমান প্রধানমন্ত্রীর জন্মভূমি গুজরাটে গমন করেন ছোট মোটর গাড়ী কারখানা গড়েন৷ ধনী ব্যবসাদারগণ যে এদেশের নেতাদের ধান্দাবাজি বোঝেন না তাতো নয়, কারণ তাঁরা তাঁদের দলীয়  রাজনৈতিক নেতাদের,চরিয়েই কারবার করেন৷

এদিকে বর্ত্তমানে এ যে রাজ্য সরকার পশ্চিম বাঙলায় শাসনে আছেন তাঁরা সিঙ্গুর এলাকায় ঐ অঞ্চলে কর্ষকদের নাকি জমি বন্টন করে দিয়েছেন তাঁরা (কর্ষকরা) নাকি নোতুন উদ্যমে ভূমি সংস্কারকে তাঁদের মতো করে ঐ পরিত্যক্ত এলাকায় আর্থিক উন্নয়নে স্বচেষ্ট৷ তাই বলি ধান্দাবাজিটাই হলো রাজনৈতিক দলগুলোর আর বোটে জিততে হতভাগ্য গরিব বোটারদের দলে টানতেই মনে হয় এটা এক নোতুন চাল কি নয়?

তাছাড়া সারা ভারতে তো জাতীয় দলগুলির রফাদফা করে বসেছে ধান্দাবাজ ঐসব স্বার্থান্ধ নেতারা৷ বর্তমানে ভারতে জনগণ দলছুটদের দাপটেই দিশেহারা ও শ্বাসরুদ্ধ৷ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তো প্রায় দেউলিয়ার দশায়৷ মোট ১৫ বছরের শাসনে বিজেপি দল জনতার দলছুট দল সারা ভারতে কতটা দেশের উন্নতি ঘটিয়েছে তার ফিরিস্তি কি দিতে প্রস্তুত? মনে হয় না৷ তাই দেশবাসী আজ অত্যন্ত সংকটের মধ্যে আছেন৷ রাজনৈতিক দলগুলির তো বর্তমান ভয়ংকর করোনায় কাতর দেশবাসীদের সঠিক সেবা দিতে তো দেখা যাচ্ছে না! নেতাদের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স কিন্তু  বেড়েই চলেছে আর হতভাগ্য দেশবাসী চরম বেকার সমস্যা, চরম দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে, রোগ যন্ত্রনায় কাতর৷ প্রায় একবছর তো সারা ভারতের জনগণ ঘরবন্দী৷ দেশ যেন কারাগারে রুদ্ধ! এক ফোঁটা ওষুধ পাওয়া যায় না৷ প্রায় দায়ী ওষুধের দাম আকাশ ছোঁয়া৷ শুধু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি৷

আর করোনার মধ্যে বোটে গদী সামলাতে আর পশ্চিম বাঙলাকে ‘‘সোনার বাঙলা’’ করতে বিজেপি এ রাজ্যে জয়ে আগামী ২০২১ এর নির্বাচনে যেন মুক্ত কচ্ছ হয়েই করোনার মধ্যে বিধি নিষেধ না মেনে বড়ো বড়ো ময়দানে আর জেলায় জেলায় হাজার হাজার লোক জমায়েত করে চলেছে৷ বাহির থেকে কেন্দ্রের  বিজেপির মন্ত্রীদের দলীয়  নেতাদের এনে সারা রাজ্যকে যেন চষে বেড়াচ্ছে৷  এ কেমন গণতন্ত্রের এ কেমন আইন শৃঙ্খলা রক্ষার নিদর্শন? রাজনৈতিক দল মানে কি অন্যদল ভাঙ্গানো ছলবল কৌশলে যন্ত্র? আর রাস্তায় শুধু আন্দোলনের  বিরুদ্ধে বিষোদগার করা৷ দলের কি কোন সেবামূলক  কাজ নেই? দেখেশুনে মনে হয় এদেশের গণতন্ত্রটাই যেন ধনীদের তল্পীবাহক রাজনৈতিক দলগুলোর নির্লজ্জ গদীর লড়াই৷ হায় হতভাগ্য দেশ! কবে যে তুমি শাপমুক্ত হবে সেটি সকলের পিতা সেই পরম পুরুষই জানেন৷

১৩৩ কোটি হতভাগ্য সন্তানদের হে প্রভু তুমি রক্ষা করো এদের হাত থেকে এমন নেতাদের  তুমি শুভ বুদ্ধি দাও যাতে তাঁরা সত্যই হত দরিদ্রদের কিছুটা সেবা দিয়ে বাঁচার পথকে সুগম করেন৷