২০২১শে বাঙ  লা দখলের আশা নেই  তাই বাঙ লা ভাঙার চক্রান্তে মেতেছে বিজেপি

লেখক
মনোজ দেব

নোট বাতিল থেকে জি.এস.টি, নাগরিক আইন থেকে কৃষি আইন একের পর এক জনস্বার্থ বিরোধী কার্যের ফলে মোদী ম্যাজিক উধাও৷ একান্ত অনুগত ছাড়া কথার জাদুতে সব মানুষকে বেশীদিন ভুলিয়ে রাখা যায় না৷ কেন্দ্রীয় সরকারের ভাষানীতি,শিক্ষানীতি সবক্ষেত্রেই বাঙলার প্রতি বঞ্চনা ও উপেক্ষার ছাপ স্পষ্ট৷ সর্বভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তির পরীক্ষায় গুজরাটী ভাষা স্থান পায় অথচ বাংলা ভাষা পায় না৷ বিজেপির প্রতি মোহভঙ্গ হচ্ছে বাঙালীর৷ মোদির মহিনী মায়া আর  কাজ দেবে না৷ এমত অবস্থায় ২০২১শে বাঙলা দখলের আশা ছেড়ে দিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব৷ তবে বঙ্গীয় ক্যাডারকুল ও রাজ্য নেতৃত্বকে চাঙ্গা রাখতে কথা-বার্র্তয় সে কথা প্রকাশ করছে না, বরং বাঙলা দখলের আশাই জিইয়ে রাখছে৷ আর  এই কাজে রাজ্যপালকেও মাঠে নামিয়েছে৷ এই মুহূর্তে ভারতবর্ষে আইন শৃঙ্খলারক্ষায় একেবারে বিপর্যস্ত নাজেহাল অবস্থা উত্তর প্রদেশের যোগীরাজ্যে৷ কিন্তু সেখানে যে একজন রাজ্যপাল আছেন মনেই হয় না৷ আর এখানে যে কোন ঘটনায় রাজ্যপালের অতিসক্রিয়তা ও বাচনভঙ্গী কেন্দ্রীয় শাসক দলের প্রতি আনুগত্যেরই প্রকাশ৷

বাঙলা দখল করতে এসে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা যে কতটা বিব্রত গোর্খাল্যাণ্ড নিয়ে বৈঠক ডেকে বার বার বিজ্ঞপ্তি বদল করাতেই বোঝা যায়৷ ৫ই অক্টোবর প্রথম বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল গোর্খাল্যাণ্ড নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকার কথা৷ তাও রাজ্যসরকারকে উপেক্ষা করে সরাসরি জেলা শাসককে ডাক৷ কিন্তু এই নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় রাজ্য সরকারের সঙ্গে৷ আবার বাঙলা ভাঙ্গার চেষ্টা হলে পথে নাববে বলে হুমকি দেয় আমরা বাঙালী নেতৃবৃন্দ৷ বেগতিক বুঝে বিজ্ঞপ্তিজারির একদিন পরেই নূতন করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বৈঠক অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করে দেওয়া হয়৷ এই বাতিল শব্দটিই বিজেপির রাজ্যনেতাদের বিশেষ করে দেশদ্রোহী ও খুনের আসামী বিমল গুরুং-এর ঘনিষ্ঠ দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিষ্ঠার মুখে কালি লেপে দেয়৷ তাই পরে বাতিল শব্দটি বাতিল করে স্থগিত শব্দটি বসিয়ে দেওয়া হয়৷ কিন্তু তাতেও রাজ্য নেতারা সন্তুষ্ট হয়নি৷ তাই আবার সংশোধন করে গোর্খাল্যাণ্ডের পরিবর্তে জিটিএ সংক্রান্ত বৈঠক করার কথা বলা হয়৷

দার্জিলিং পশ্চিমবঙ্গের ক্ষুদ্র একটি অংশ৷ এখানকার আদি বাসিন্দা লেপচা ভুটিয়া, যারা মূলত কোচ বংশীয় জাত বাঙালী৷ গোর্খারা নেপাল থেকে আগত৷ ওই অঞ্চলের ক্ষুদ্র একটি জনগোষ্ঠী৷ ১৯৫০ সালে ভারত নেপাল চুক্তি অনুযায়ী নেপালীরা দার্জিলিঙে জীবিকা অর্জন করতে পারবে কিন্তু নাগরিকত্ব পাবে না৷ পরবর্তীকালে ভারত সরকারের বদান্যতায় বিদেশী গোর্র্খরা আজ ভারতীয় নাগরিকের সমস্ত সুযোগ পাচ্ছে৷ বিমল গুরুং ভারত বিদ্বেষী চীনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দার্জিলিংকে আর একটি লাদাখে পরিণত করতে চায়৷ শুধুমাত্র বাঙলার সরকারকে বিব্রত করতে বিজেপি সেই গুরুং-এর সঙ্গে হাত মেলায়৷

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীরা কেউ বোকা নয়৷ তাঁরা ভালোভাবেই জানেন দার্জিলিঙে বিমলগুরুংদের নিয়ে বেশী মাতামাতি করলে বাঙালী মানসিকতায় আঘাত দেওয়া হবে৷পশ্চিমবঙ্গের ভূমিপুত্র ও বৃহত্তম জনগোষ্ঠী বাঙালীর সমর্থন হারাবে৷ এমন কি দার্জিলিং জেলার সমতলের ভিন্রাজ্যের অনেপালী বাসিন্দারাও গোর্র্খল্যাণ্ড আন্দোলন সমর্থন করে না৷

সামনে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বোট৷ এবার লড়াই মূলতঃ তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির৷ এই সময় পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী ভূমিপুত্রদের  বোট হারাবার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও কেন রাষ্ট্রদ্রোহী বিমলগুরুংকে সঙ্গে নিয়ে আবার গোর্র্খল্যাণ্ড ইস্যুকে সামনে আনছে৷

আসলে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বুঝে গেছে ২০২১ শে বাঙলা দখলের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে৷ মমতা ব্যানার্জীকে হঠানো এবারও সম্ভব নয়৷ তাই তারা পশ্চিমবঙ্গে এবার অন্য খেলায় নেমেছে৷ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটা অংশের স্বভাবসিদ্ধ বাঙালী বিদ্বেষী মনোভাব আছে৷ মারাঠা দস্যু ভাস্কর পণ্ডিতের সময় থেকেই প্রায় ৩০০ বছর ধরে পশ্চিম ভারতের একটি অংশ বাঙালী বিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করে আসছে৷

বাঙলা দখলের আশা যখন নেই তখন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কী চাইছেন গোর্খাল্যাণ্ডকে ইস্যু করে পশ্চিমবঙ্গে আবার অশান্তির আগুন জ্বালতে? সেই অশান্তির আগুন পাহাড় থেকে সাগর পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়ে বাঙলায় রাষ্ট্রপতি শাসনের পরিবেশ তৈরী করা৷ তখন  প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে বোট পিছিয়ে দেওয়া যাবে৷ রাষ্ট্রপতি শাসনে নিজের মত করে বোট করা যাবে৷ বাঙলা দখলের সামান্য আশা থাকলেও মুর্খের মত এভাবে গোর্খাল্যাণ্ড ইস্যুকে সামনে আনতো না বিজেপি নেতৃত্ব৷