অন্ধ বাঙালী বিদ্বেষ দেশের অখণ্ডতা বিপন্ন করবে

লেখক
এইচ. এন. মাহাতো

ভারত সরকারের অন্ধ বাঙালী বিদ্বেষ দেশকে সর্বনাশের পথে নিয়ে যাচ্ছে৷ ত্রিপুরার দিকে তাকালেই সেটা স্পষ্ট হয়ে যাবে৷ ত্রিপুরার কাঞ্চনপুরের জাম্পুই পাহাড়ে মিজোরাম পুলিশ (এম আর.পি) জমি দখলের  নামে গ্রামে প্রবেশ করলে স্থানীয় টি.এস.আর বাহিনীর দ্বারা প্রতিহত হয়৷ তবে এটাই প্রথম নয়৷ এর আগে মিজোরাম থেকে আসা কয়েক হাজার ব্রু-রিয়াং-রা বছরের পর বছর আনন্দবাজারের সংলগ্ণ অঞ্চল জুড়ে বসতি স্থাপন করে বসে আছে৷ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে তাদের খাওয়া ও দৈনন্দিন জীবনের সকল খরচ সরকার বছরের পর বছর বহন করে চলেছে৷ তাদের জন্য এই খরচ বাঙালীর পকেট কেটে বহন করা হচ্ছে৷ কারণ একমাত্র ত্রিপুরার ভূমিপুত্র বাঙালীরাই সরকারকে কর দেয়৷ ত্রিপুরার কোন জনজাতিকে কর দিতে হয় না, শুধুমাত্র বাঙালীর করের টাকায় ও কেন্দ্রীয় খয়রাতীতে ত্রিপুরা সরকার চলে৷ অথচ মিজোরাম থেকে আসা শরণার্থীরা রাজনৈতিক নেতাদের সাহায্যে নিয়ে কয়েক শতক বছর ধরে যে বাঙালী জনগোষ্ঠী শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে আসছে  তাদের ওপর বারবার আক্রমণ করেছে,বাড়ি ঘর, দোকান পাট লুটপাট   ও অগ্ণি সংযোগ করে অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা করছে তৎসহ বারবার গৃহহীন করছে৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে থানায় অভিযোগ  করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আইনি ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি৷ এমনকি কিছু স্থানীয় রিয়াং অথবা অন্যান্য জনজাতিরা মিজোরামের অনুপ্রবেশকারী রিয়াংদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ, কারণ তাদের গবাদি পশু, ছাগল বা অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সম্পদ দিনের আলোতেই লুটপাট করে নিয়ে যায়৷ পুলিশ অথবা স্থানীয় প্রশাসনকে বললে কোনপ্রকার আইনি ব্যবস্থা এখনো পর্যন্ত নেননি৷ এছাড়াও ওই রিয়াং শরনার্থীদের ক্যাম্প থেকে চীনা বা অন্যান্য দেশের অস্ত্র পুলিশ উদ্ধার করলেও তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো ব্যবস্থা সরকার নিচ্ছেন না শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে ও বাঙালী বিদ্বেষী হওয়ার জন্য৷

গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত বর্তমান কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার বাঙালী জাতিসত্তাকে নির্মূল করার জন্য ওই রিয়াং শরনার্থীদের কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে ত্রিপুরাতে পুর্নবাসনের আয়োজন করতে গিয়ে ল্যাজে গোবরে হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে৷

মিজোরাম কেন বলবো, উত্তর পূর্বাঞ্চালের সব কয়েকটি রাজ্য সরকার বাঙালী বিদ্বেষী৷ এর পিছনের ইতিহাসটা আমাদের জানা দরকার৷ ৩০ সালের আগে উত্তর পূর্বের এই অঞ্চলগুলো ছিলো বাঙালীস্তান বা সুবা বাঙলার অধীনে৷ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালীরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা নেওয়ার জন্য বাঙলার অংশ কেটে অসম নামক একটি রাজ্য পত্তন করে৷ তখন সাতটি রাজ্য তৈরী হয়নি৷ সেই সময় এই অঞ্চলে বিভিন্ন জনজাতির বিভিন্ন ভাষা থাকলেও রাজ্যের প্রধান ভূমিপুত্রদের ভাষা বাংলা ভাষায় সব কাজ করে চলতো৷ সেই সময়কার দলিল দস্তাবেজ আজো তার প্রমাণ৷

অসমের অসমিয়াদের  অসহিষ্ণু মানসিকতা ও বাঙালী ও অন্যান্য জনজাতির ওপর বলপূর্বক নানা প্রকারের প্রতিবন্ধকতা তৈরী করতে গিয়ে আজ সাতটি নতুন রাজ্যের সৃষ্টি হয়৷ ইতিহাস বলে উত্তরপূর্বের নাগারা, মিজোরা, অসমিয়ারা,ত্রিপুরিরা ইত্যাদি মঙ্গোলিয়ান রক্তের বংশজাত হওয়ার ফলে এরা ভারতীয় নয়৷ এরা মূলত বহিরাগত৷ এই অঞ্চলের বাঙালীরাই উত্তরপূর্বাঞ্চলের  বসবাসকারী ভূমিপুত্র৷ কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের সরকার কংগ্রেস, বিজেপি ও সিপিএম এর রাজনৈতিক  নেতাদের অদূরদর্শীতার জন্য সমগ্র উত্তর পূর্বের রাজ্যের বাঙালীদের হেও প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে ও  বহিরাগত জনজাতি নাগরিকদের ভোট ব্যাঙ্ক তৈরী করতে নানা প্রকারের বাঙালী বিদ্বেষী আইন করেছে৷ পাশাপাশি নাগারা, মিজোরাসহ সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চল জুড়ে কেন্দ্রীয় ও  রাজ্যের সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদের তত্ত্বাবধানে উগ্রবাদী সংস্থা তৈরী হয়েছে৷ এই উগ্রবাদী সংস্থাগুলি একদিকে বাঙালীর ওপর নানাভাবে আঘাত, একতরফা গণহত্যা, অগ্ণিসংযোগ, লুটতরাজ করে তাদেরকে আবার উদ্বাস্তু পরিণত করা হচ্ছে৷ অন্যদিকে লক্ষ্য চীনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ভারতের ভূমিকে  চীনের হাতে তুলে দেওয়া৷ বর্তমান বিজেপি দলের ভারত জয়ের নেশায় উত্তর পূর্বাঞ্চলের সকল রাজ্যে দেওয়া৷ বর্তমান বিজেপি দলের ভারত জয়ের নেশায় উত্তর পূর্বাঞ্চলের সকল রাজ্যে ২/১ এম.এল.এ থাকুক না থাকুক উগ্রবাদীদের সঙ্গে আঁতাত করে তাদের মন্ত্রীসভার নামে তলে তলে বাঙালী মুক্ত ভারত গড়ার নেশায় মত্ত হয়েছে৷ তার ফলস্বরূপ এই উগ্রবাদীরা কখনো চীনের সাথে যুক্ত হবার আবার কখনো আলাদা রাষ্ট্র করার হুমকি  দিয়ে চলেছে৷ এমনকি কয়েকটি রাজ্য  নিজস্ব পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত তৈরী করে স্বাধীনতা দিবসে বা নিজেদের অনুষ্ঠানে ব্যবহার শুরু করেছে৷ ভারত সরকার দেখেও  না দেখার ভান করে বসে আছে৷ এর পরিণতিতে ভারতের অখণ্ডতা রক্ষা করা নিয়ে  প্রশ্ণের মুখে পড়েছে৷

ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের উচিৎ দেশের সংবিধান ও অখণ্ডতাকে রক্ষা করতে প্রত্যেকটি ভারতীয়ের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা ও ভাষা সংস্কৃতি ,আচার-আচরণ, পোষাক পরিচ্ছদ, মানবিক মূল্যবোধকে রক্ষা করা ও মিনিমাম চাহিদা পূরণ করা৷ এই মূহুর্তে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের উচিৎ যে আইনের বলে কশ্মিরের অখণ্ডতা রক্ষা করতে আইন সংশোধন করা হয়েছে, ঠিক তদরূপ সমগ্র উত্তর  পূর্বাঞ্চলের  বাঙালী বিদ্বেষী আইনগুলো রদ করে কঠোরভাবে উগ্রবাদীদের দমন করা৷ পাশাপাশি এমন কিছু আইন প্রণয়ন করা যার দ্বারা সকলের কল্যাণ সাধিত হয়৷ তবেই ভারতের অখণ্ডতা রক্ষা পাবে৷ নতুবা অন্ধ বাঙালী বিদ্বেষ দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করবে৷