আন্তর্জতিক নারী দিবসের প্রত্যাশা

লেখক
আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূ্ত

আজ  সঙ্গতভাবেই  নোতুন  করে  প্রশ্ণ  উঠছে,  একবিংশ  শতাব্দীতে  মানুষ কি ধীরে ধীরে  বিবর্তনের  উল্টো  পথে  চলে  পশু হয়ে  যাচ্ছে? বর্তমানে  পত্র–পত্রিকায়  যেভাবে  নারী–নিগ্রহ , নারী–পাচার,  নারীর  ওপর  পাশবিক  অত্যাচারের  খবর  বেরুচ্ছে ,  তাতে  প্রতিটি  শুভবুদ্ধিসম্পন্ন  মানুষেরই  মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে৷

সমাজে নারী ও পুরুষ পাখীর  দুটি  ডানার  মতো৷ একটা ডানা  যদি  পঙ্গু হয়,  তা  হলে একটিমাত্র  ডানা  দিয়ে  পাখী  উড়তে  পারে  না৷ ঠিক তেমনি  সমাজে  নারী যদি  অবহেলিত  হয়,  শোষিত  হয়,  নির্যাতিত  হয়,  যা  আজকে  হচ্ছেও,  এ  অবস্থায় সমাজের প্রকৃত প্রগতি  হতে  পারে  না৷ নারী  পুরুষের  জননী৷  এই  সত্য  মদগর্বী  কিছু  পুরুষ  ভুলে  যায়  ও  নারীর  ওপর  নির্যাতন  চালায়৷

বর্তমানে বিভিন্ন  স্থানে,  কিছু  পশুস্বভাবযুক্ত  পুরুষ  যেভাবে  মেয়েদের ওপর  পাশবিক  নির্যাতন  চালাচ্ছে  তা  মানব  সভ্যতার  মুখে  চরমভাবে  কালি  লেপন  করছে৷

তাছাড়া সাধারণভাবেও বলা যায়, বর্তমান  সমাজে (অবশ্য সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া)  মেয়েদের  দ্বিতীয়  শ্রেণীর  নাগরিক  করে  রাখা  হয়েছে৷  দেশের  আইনে  নারী –পুরুষের  সমান  অধিকার  স্বীকৃত৷ কিন্তু  সমাজের  রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমনি  কুসংস্কার, ভাবজড়তা,  অজ্ঞতা  অনুপ্রবিষ্ট  হয়ে  রয়েছে  যে  আইন–প্রশাসনও  সেখানে  প্রবেশের  অধিকার  পাচ্ছে না৷  আর  সেই  জমাট বাঁধা  অন্ধকারে  আজ  বন্দিনী  নারীসমাজ৷

তারপর,  পণপ্রথার জগদ্দল পাষাণের  নিষ্পেষণ  তো  রয়েছে  কত  নারীর  জীবন  যে  এই  পাষাণের  নির্মম  পেষণে  নিপিষ্ট–নিঃশেষিত হয়ে যাচ্ছে – তার কোনো হিসেব  নেই৷ 

সমাজের  কিছু  সংখ্যক  মহিলা  হয়তো  আজ  শিক্ষিত  হয়ে  সমাজের  উচ্চ  প্রশাসনিক  পদে  আসীন বা  সমাজের  বিভিন্ন  ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছেন,  কিন্তু  সমগ্র  নারী  সমাজের  তুলনায়  তাঁদের  সংখ্যা  নগন্য৷

কিছু  নারী  আবার  আধুনিকতার  নামে উচ্ছৃঙ্খলতা,  নগ্ণতা  ও  বেলাল্লাপনাকে  প্রশ্রয়  দিয়ে  দেখাতে  চাইছে,  তারা  পুরুষের  চেয়ে  কোনো  অংশে  কম নয়৷  কিন্তু  প্রকৃত  শিক্ষা, সভ্যতা ও  সমাজ চেতনার  উন্মেষ  তাদের  মধ্যে  কতটা হচ্ছে,  সেটাও  প্রশ্ণের৷ বলতে গেলে তাদের উচ্ছৃঙ্খলতা ও অভব্য আচরণ  এক  শ্রেণীর  পুরুষকে অতিমাত্রায় উচ্ছৃঙ্খল  হয়ে  নারীদের  প্রতি পাশবিক  আচরণে  প্ররোচিত করছে৷ সমাজের  আবহাওয়া তাতে আরও দূষিত হচ্ছে৷ আসলে  এটাও  যে  প্রকৃত  শিক্ষার  অভাব  এতে কোনো  সন্দেহ  নেই৷

সার্বিকভাবে  বলতে  হচ্ছে,  সারা  বিশ্ব  জুড়ে  নারীরা  অবহেলিত,  নির্যাতীত,  শোষিত৷  বলা  বাহুল্য, এর  ফলে  গোটা সমাজ পিছিয়ে পড়ছে৷ এই অবস্থা সারা  পৃথিবীরই৷  এই পরিস্থিতিতে  নারী  নির্যাতন  বন্ধ  করা  ও  নারী  জাতিকে  সামগ্রিকভাবে  এগিয়ে নিয়ে  যাওয়ার ব্যাপারে   সমগ্র বিশ্ববাসীর  মনে  নব চেতনার  জাগরণ কল্পে ১৯৭৫  সালটিকে  রাষ্ট্রসংঘ  আন্তর্জাতিক নারী বর্ষ হিসেবে  পালন  করেছিল৷  আর  সেই  বছর  থেকে  রাষ্ট্রসংঘ  থেকে  ঘোষণা  করা  হয়  প্রতি  বছর  ৮ই মার্চের দিনটিকে আন্তর্জাতিক  নারী দিবস  হিসেবে  পালন  করা  হবে  ও  এইদিনে  বিভিন্ন  সভা–সমিতি  তথা  নানানভাবে  প্রচারের  মাধ্যমে  বিশ্ববাসীকে  নারীর  ন্যায্য  অধিকার সম্পর্কে সচেতন  করা  হবে৷ সেই  থেকে  প্রতি বছর  এই  দিবসটি  পালিত  হয়ে আসছে ও নারী নির্যাতন  বন্ধ  তথা  নারী  প্রগতিতে  গতি  আনার  প্রয়াস  চলছে৷

আজ এই  আন্তর্জাতিক  নারী  দিবসে  মহান  দার্শনকি  ঋষি  শ্রীপ্রভাত  রঞ্জন সরকার  তঁার প্রাউট  দর্শনে  ‘নারী  অধিকার’ সম্পর্কে  যা  বলেছেন, তা সঙ্গত কারণেই তুলে  ধরছি৷  তিনি বলেছেন, ‘‘আজও  পুরুষ  শাসিত  সমাজব্যবস্থায়  নারীর  স্থান  প্রায়  দাসীর  মতই৷ এটা কেবল  মন্দই নয়,  এটা  নিন্দনীয়ও৷ নারীদের  ওপর  এ ধরণের  অবদমন ও ভাবজড়তার (ডগমা) সাহায্যে তাদের  ওপর  এধরনের  মানস–র্থনৈতিক  শোষণের  বিরুদ্ধে তীব্র  ধিক্কার  জানানো উচিত৷’’