বাঙালী জীবনে আঘাত যত বেশী আসবে  বাঙালী জীবনে একতা ততই বৃদ্ধি পাবে

লেখক
গোবিন্দ মজুমদার

বর্তমানে বাঙলার বাঙালীরা একেবারে খাদের কিনারায় এসে গেছে, পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে৷ এর পেছনে রয়েছে ঐতিহাসিক সামাজিক আর্থিক কারণ ও সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্র৷ এগুলির কারণ খঁুজে বের না করতে পারলে তথাকথিত গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে বাঘের পিঠে সওয়ার হতে হবে৷ দুর্বল হবে গণতন্ত্রের ভিত্তি৷ আজ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও ধর্মীয় ফ্যাসীবাদী আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে কারা শত্রু কারা মিত্র৷ আর একাজ করতে হবে মানব সমাজের গভীরের মারণ অসুখকে দূরীভূত করার জন্যে৷

এখন আমাদের আলোচনায় আসতে হবে বাঙালী বলতে আমরা কি বুঝি৷ অনেক শিক্ষিত হিন্দু লোককে আমরা বলতে শুনেছি---আমরা বাঙালী, ওরা মুসলমান৷ তাহলে ইতিহাসে দৌলত কাজী, হাসান রাজা, নজরুল ইসলাম, জমিউদ্দিন, বাংলা ভাষা আন্দোলনের  শহীদ জববার-বরকত-সালাম-রফিকউল ও বাঙলার মুক্তি সূর্য মুজিবর রহমান কী বাঙালী নন? এদের থেকে বড় বাঙালীর উদাহরণ আর কী আছে? আমি বাঙালী তাদেরকেই বলব যাদের মাতৃভাষা বাংলা৷ তারা হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান যে সম্প্রদায়েরই হোক না কেন, তারা বাঙলায় থাকুক আর নাই থাকুক তারাই বাঙালী৷ বাঙালী বলতে আমরা বুঝি একটা ভাষাগোষ্ঠী যাদের সাধারণ সাংসৃকতিক অভিন্নতা আছে ও একই জীবনচর্চায় অভ্যস্ত৷ বিভিন্ন রক্তের সংশ্লেষনে সৃষ্টি এই বাঙালী জাতির৷ রবীন্দ্রনাথ তাঁর ভারতীর্থ কবিতায় উল্লেখ করেছেন---

                                ‘‘হেথায় আর্য হেথা অনার্য হেথায় দ্রাবিড় চীন

                                শক-হুণ দলমোগল পাঠান এক দেহে হল লীন’’৷

যোদ্ধাদের রাজ্য জয়ের মাধ্যমেই এই রক্তের মিশ্রণ ঘটেছে৷ কিন্তু বাস্তব ঘটনা এই যে বর্তমানে ছোট ছোট জনজাতিরাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আঞ্চলিক দল গড়ে তথাকথিত নীতিহীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট বাঁধছে ও বাঙালীর বিরুদ্ধে সহিংস আন্দোলন শুরু করেছে৷ কংগ্রেস,সিপিএম, বিজেপি রাজনৈতিক স্বার্থে সরাসরি এদের মদত দিচ্ছে৷ অপরপক্ষে ঐতিহ্যমণ্ডিত বাঙালীজাতি একতা ও ঐক্যবদ্ধ শক্তির অভাবে কোন রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি আজও আদায় করতে পারেনি৷ অথচ ইচ্ছে করলেই এই রাজনৈতিক দলের স্বীকৃতি আদায় করতে পারে বাঙালী৷ যেমন ত্রিপুরার কথাই যদি আমরা ধরি, তাহলে  ত্রিপুরার ৬০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৪০টি আসন নিয়ে বাঙালীরা নিজেদের সরকার গড়তে পারে যদি ঐক্যবদ্ধ হয়৷ কিন্তু বাঙালীকে ঐক্যবদ্ধ হতে দেওয়া হচ্ছে না৷ হতে দিচ্ছে না তথাকথিত রাজনৈতিক দলগুলি তাদের সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে৷ তাই এখন বাঙালী সংখ্যা গরিষ্ঠ হয়েও সংখ্যালঘুর হাতে মার খাচ্ছে একতার অভাবে৷ এই সুযোগ করে দিয়েছে বাঙালী নিজেই৷ দর্শনের ভাষায়Necessity is the mother of invention.‘‘প্রয়োজনই সৃষ্টির গর্ভধারিনী৷’’ ‘আমরা বাঙালী দলের সৃষ্টি প্রয়োজনের গর্ভেই৷ বহুঘাত প্রতিঘাতের মোকাবিলা করার পর বাঙালী আজও সৌর্য, বীর্য ও সাহসিকতা হারায়নি৷ এখনও অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে৷ তাই পৃথিবী যেকোনো প্রান্তেই বাঙালীরা থাকুন না কেন যে কোনো মুহূর্তে গর্জে উঠতে পারে এই বাঙলার বাঙালীরা৷ কারণ বাঙালীরাই যুগে যুগে মৌলিক পরিবর্তনের অগ্রদূত৷ এই পরিবর্তনের ধারা বাঙালীর রক্তে৷ এই মৌলিক পরিবর্তনের আন্দোলনে আপনিও সামিল হোন৷ একতাই শক্তি ---

                                ‘‘বীর সন্ন্যাসী বিবেকের বাণী ছুটিছে জগৎময়

                                বাঙালীর ছেলে ব্যাঘ্রে-বৃষবে ঘটাবে সমন্বয়৷’’