বাঙালী জনগোষ্ঠী  বিশ্বৈকতাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিশ্বকল্যাণে কাজে নামুক

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারতবর্ষের অন্তর্গত বাঙলা--- অতীতের সেই বৃহত্তম বাঙলা যেটি ছিল পূর্বভারতের অন্তর্গত বাঙালী জনগোষ্ঠীর নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতি, ভাষা, সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের পরিপূর্ণতায় পুষ্ট একটি বৃহৎ অংশ৷ যে জনগোষ্ঠীর সঙ্গে উত্তর ভারতবর্ষের মিলমিশ ছিল না৷ এটিকে বলাই হতো পাণ্ডব বর্জিত দেশ৷ বরং দক্ষিণ ভারতবর্ষের দ্রাবিড়দের সঙ্গে কিছুটা মিল ছিল৷ কেরালিয়ানদের সঙ্গে কিছুটা মিল আছে৷

বাংলা ও বাঙালী এক স্বকীয়তায় পুষ্ট জনগোষ্ঠী৷ এটি  তন্ত্র সাধনার পীঠ চিরকালই৷ এই জনগোষ্ঠী মাতৃতান্ত্রিক চিন্তাধারায় পুষ্ট৷ তাই মাতৃপূজা এদের মধ্যে প্রবল৷ জাত-পাতের ভেদাভেদটা বাঙলায় তেমন কোনদিনই দেখা যায় নি৷ এই বাঙালী জনগোষ্ঠী বর্ণ সংকর হওয়াতে এদের মধ্যে বিভিন্ন বর্ণের ও আকৃতির নারী পুরুষ দেখা যায়৷ বাঙালী জনগোষ্ঠী হিন্দু ও মুসলমান, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, বিভিন্ন ধর্মমতের মানুষের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সহ অবস্থান করেই চলে৷ সকলের সঙ্গে এই রাজ্যের মানুষের একাত্মতা আছে৷ মোদ্দাকথা উদারতা হলো এই প্রদেশের মানুষের চরিত্রের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য৷ তাই শ্রী চৈতন্যের মতো চরম মানবতাবাদী মহামানবের আবির্ভাব ঘটে৷ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, রামমোহন রায় এদেশের অমূল্য সম্পদ৷ তাই  বাঙলা ভারতের গৌরব৷ শ্রী রামকৃষ্ণ এক বিস্ময়৷ অত্যাধুনিক যুগে মহান দার্শনিক শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার  তথা শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী সারা বিশ্বের এক বিস্ময়৷ তিনি বিশ্বৈকতাবাদের উদগাতা৷ পৃথিবীর সকল সৃষ্ট প্রাণী, গাছপালা, জীবজন্তুকে রক্ষার এক মহামুক্তির পথের সন্ধান দিয়ে গেছেন৷ আনন্দমার্গের ৩৬০ ডিগ্রী দর্শন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন দর্শন৷ তাই বাঙালী জনগোষ্ঠী কোনদিনই সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেয়নি৷ তবে সৃষ্টি তত্ত্বেই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য সেটাকে অবশ্যই মান্যতা দিয়ে থাকে৷

এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার সকলেরই আছে৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় খণ্ড ক্ষুদ্র স্বার্থে শাসকগণ কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতাকে ইনধন দিয়ে পৃথিবীকে নরকে পরিণত করে চরম নির্যাতন করে চলেছে নিছক দ্বিচারিতাও ভণ্ডামী করে৷ এরই প্রতিকার জরুরী৷ লজ্জার কথা মহান ভারতবর্ষকে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে টুকরো টুকরো করে মানবিকমূল্যবোধটাক্ ধবংস করেছে৷ রাম রহিমে ভেদাভেদ করে জীবনহানী ঘটাচ্ছে৷ যা জল তাই পাণি, তাই নিয়ে হানাহানি! এ কেমন মানুষের  সমাজ? সেই  সমাজকেই শাসকদল ধবংস করেছে জাত-পাতের নোংরামী করে৷ তাই সমাজকে রক্ষার দায় নীতিবাদী মানুষেরই৷ সমাজগুলি ধবংসপ্রাপ্ত হয়েছে৷ তাই নোংরা রাজনৈতিক দলাদলি নয়৷ আজ প্রকৃত নীতিবাদী সৎ সমাজসেবীর অতি প্রয়োজন৷ দেশে নেতাজীর মতো মহান তাই আজ নীতিবাদী সৎ মানুষের দরকার দেশে৷ সৎ মানুষ তৈরী করার যে পথ  সেই পথ সকলের জন্য৷ সেইপথ হলো যম-নিয়মে প্রতিষ্ঠিত অষ্টাঙ্গিক যোগমার্গ৷ প্রত্যেক মানুষ নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই সেই পরমপুরুষ ঈশ্বরের সন্তান৷ কেউ ছোট নয় বা বড় নয়৷ সৎ মানুষ যদি না তৈরী হয় তা হলে পৃথিবীতে কখনো শান্তি আসবে না৷ সারা পৃথিবী হয়ে যাবে শোষণের কারখানা৷  মানুষের মধ্যে যে লোভ, হিংসা দ্বেষ আছে সেইগুলি জগৎকে করে তুলছে নরক৷

স্মরণে রাখতে হবে এই জগতের একমাত্র অভিভাবক সেই পরমপুরুষ যিনি সেই ঈশ্বর, আল্লাহ, গড, যে নামেই ডাকা হোক না কেন৷ সেই মহান এক অদ্বিতীয়৷ কিন্তু এই পৃথিবীতে যা হচ্ছে তা কিন্তু মোটেই কাম্য নয়৷ স্মরণে রাখতে হবে সবাই এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার যেন সুযোগ পায়৷ শ্রদ্ধেয় পি.আর. সরকার পৃথিবীর কল্যাণে প্রগতিশীল উপযোগতত্ত্ব দিয়েছেন সেই মহান উদ্দেশ্য সফল করতে যাতে সবাই বেঁচে থাকতে পারে ও অন্যকে বেঁচে থাকার সুযোগ দেয়৷ তাই বলা হয় ‘বাঁচ ও অন্যকে বাঁচতে দাও৷ সকলেরই এই জগতে সার্বিক বিকাশ ঘটে৷ সেই পরম পুরুষ মহা প্রকৃতির দ্বারাই কাজ করে চলেন৷ সেই যে শক্তি তা হলো সেই পরমপুরুষেরই ইচ্ছাশক্তিরই প্রকাশ৷ তাই পুরুষ ও প্রকৃতি কাগজের  এপিঠ ও পিঠ৷ তফাৎ কিছু নেই৷ তাই বাস্তব জগতে নারী ও পুরুষ সমান মর্য্যাদার ও সম্মানের অধিকারী৷ নারী ও পুরুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে যেতে হবে৷ জীবনটা হলো কর্ম মুখর৷ তাই অন্যায় অবিচার ও শোষণের  বিরুদ্ধে  সংগ্রাম  করে যাওয়াটাই জীবন৷ যদি সঠিক বিচার করা হয় তা হলে দেখা যাবে এই ভৌতিক জগতে মহিলাদের অবদান পুরুষদের চেয়ে কম নয়৷ বরং অনেক বেশী৷ তাই নারী জাতিকে মাতৃজ্ঞানে শ্রদ্ধা করতে শিখতে হবে৷ যেটি বাস্তবে দেখা যায় সেটির বড়ো অভাব এই হতভাগ্য দেশে৷ সারা পৃথিবীই আজ শোষকদের অত্যাচারের ক্লান্ত৷

তাই শোষণহীন সমাজ গড়তে হবে কারণ সমাজগুলিকেই আজ ধান্দাবাজ রাজনৈতিক নেতারা ধবংস করে নানা দল উপ দলে ভাগ করে  ফেলেছে গদীর স্বার্থে৷ স্মরণে অবশ্যই রাখতে হবে বাঙালী জনগোষ্ঠীকে তা হলো এই জনগোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে সমগ্র জগতের প্রতিটি সমাজকে জাগ্রত করে এই পৃথিবী গ্রহটিকে এর স্বয়ংসম্পূর্ণ বিশ্বৈকতাবোধে গড়ে তুলে সেই পরম পুরুষের সৃষ্টিকে সার্থক করে তোলা৷ সেই কারণে প্রাউটের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালী সমাজকে সারা পৃথিবীতে এক নবজাগরণের বাতাবরণ তৈরী করতে হবে৷ তাই এই ভারতে যে ৪৪টি  সমাজ আছে তাকে প্রথম সার্থক করে তুলে সারা পৃথিবীতে  যে ২৪৫টি সমাজ আছে সেখানে প্রদীপ প্রজ্বলন করা যাতে  করে সেই এক মানবসমাজ এই মহান সত্যটি সার্থক হয়৷

তাই বলি, কবি সত্যেন্দ্রনাথের ভাষায় আমরা কবিতার শেষ পঙক্তি--- মিলনের মহামন্ত্রে মানবে দীক্ষিত করি ধীরে মুক্ত হইব দেব ঋণে মোরা মুক্তবেণীর তীরে৷ অর্থাৎ এই বাঙলায়৷ তাই বাঙালী জনগোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে এক মহান ব্রত উদ্‌যাপনে৷ এই জনগোষ্ঠী কোনদিন কোন স্বার্র্থন্বেষী ধান্দাবাজদের গোলামে পরিণত হতে আসেনি৷ এই জনগোষ্ঠী সারা বিশ্বকে মুক্তির পথ দেখাতে এসেছে৷ সেই কারণেই এ বাঙালী জনগোষ্ঠী হলো চির বিদ্রোহী ও বিপ্লবী৷

তাই যারা ধান্দাবাজ তারা সোনার বাংলা গড়ার প্রলোভন দেখায় তারা মিথ্যাচারী৷ তাদের থেকে বাঙালী জনগোষ্ঠী যেন সচেতন হয়৷ দিল্লির তাবেদার বাঙালী জনগোষ্ঠী কোনদিন হয়নি ও হবে না৷ বাঙালী রক্তেই রয়ে গেছে বিপ্লবী চিন্তাধারা তাই পূর্ব পাকিস্তান হয়েছে বাংলাদেশ৷ এই ভারতের অন্তর্গত বাঙলাকে কিন্তু মহান বিশ্বৈকতাবোধে জাগ্রত করতে হবে সারাবিশ্বকে৷ এটাই পরমপুরুষের নির্দেশ,এটাই প্রাউটের আদর্শ৷ বিশ্বের প্রতিটি নিরন্ন বুবুক্ষু মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে হবে, মুখে ভাষা জোগাতে হবে পরণে বস্ত্র দিতে হবে, মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই দিতে হবে, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে হবে প্রতিটি মানুষের ঘরে৷ তবেই ভারতও মহান হবে পৃথিবী গ্রহে৷