বাঙলা বাঁচলে ভারতও বাঁচবে

লেখক
এইচ. এন. মাহাত

স্বাধীনতার আগে দেশটার নাম ছিল ভারতবর্ষষ হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, মূলত গান্ধী নেহেরু প্যাটেল জিন্নাহ প্রভৃতি নেতারা বৃদ্ধ অবস্থায় এসে সংগ্রামী মানসিকতা হারানোর ফলে গদির লোভ পেয়ে বসে৷ তখন তাদের একটাই লক্ষ্য--- গদি চাই! যে কোনো মূল্যে গদি চাই৷ পরিণতিতে ভিক্ষালব্ধ স্বাধীনতার পরিণাম খণ্ডিত ভারত৷

আমরা দেখেছি এই স্বাধীনতায় যে বাঙালী বেশী মূল্য দিল তাঁরা আজ বিদেশী, বহিরাগত, ঘুসপেটিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি৷ সেই অর্থে পাকিস্তানের পাঞ্জাব, পেশোয়ার, বেলুচিস্তান বা সিন্ধু থেকে যারা এসেছে বা আসছে তারা কেন বিদেশী নয়? ওরাও তো পাকিস্তান বা ভিন্ন দেশ থেকে এসেছিল! এর জবাব দেবে? পাশাপাশি উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির দিকে লক্ষ করুন, বিশেষ করে অসম, ভারতের স্বাধীনতা জন্য এদের কতটুকু অবদান? তার থেকেও বড় কথা হলো সম্পূর্ণ অসম রাজ্যটি তৈরী হয় বাঙালীস্তানের অঙ্গ কেটে৷ আরেকটি কথা হলো অসমীয়ারা নিজেরাই মঙ্গোলীয় দেশ থেকে প্রায় ৪০০/৪৫০ বছর আগে খাদ্যের অভাব ও নানা প্রকার  প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের  জন্য পড়শী দেশ বাঙালীস্তানে এসেছিল বাঁচবার তাগিদে৷ এর প্রমাণ  হলো এই অসমীয়ারা মঙ্গোলীয় শ্রেণীর হওয়ার তাদের গাঁয়ের রং হওয়া উচিত সাদা, নাক বোচা, চুলগুলো খাড়া খাড়া ইত্যাদি ইত্যাদি হওয়া উচিত ছিলো কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের গাঁয়ের রং তামাটে বা ককেশীয় অর্থাৎ বাঙালীদের মত হতে শুরু করেছে৷ কারণ অসম অঞ্চলটি বাঙালীস্তানের৷ আজ তারাই বলছে বাঙালীরা নাকি বহিরাগত! তাই নিয়ে আন্দোলন শুরু করলো বঙাল খেদাও বা বিদেশী খেদাও বলে ৷ আর এঁদের এই বাঙালী বিদ্বেষী আন্দোলনের মূল পাণ্ডাছিলো সেই হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের দালালেরা--- অসমে প্রদেশের আসল শোষক৷

ভারতের একটি আশ্চর্যের বিষয় হিন্দি সাম্রাজ্যবাদীরা ভারতের কোন হিন্দি ভাষা ভাষী মুসলমানদের বহিরাগত বলে না, কিন্তু অসম সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাংলাভাষী মুসলমান নিয়ে কেন প্রশ্ণ উঠে বিদেশী বা বহিরাগত? তারাতো হিন্দু নয়৷ বাংলাভাষী হিন্দু বা মুসলমান সকলেই বাঙালী বলেই এত ঘৃণা! এক সময় বঙাল খেদার নামে অসমে একটি পরিচিত স্লোগান ছিলো--- আমি অসমিয়া তুমি মিঁয়া--- এসো আমরা বঙ্গাল খেদাই মানে বাঙালী হিন্দুদেরকে খেদাই৷ এই করে অসমে বাঙালী জাতিসত্তাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে৷ তারপর কয়েক দশক ধরে শত শত বাঙালীর রক্তে ব্রহ্মপুত্রের জল লালে লাল করে দেয় ব্রহ্মদেশ থেকে আগত বিদেশী অসমীয়ারা৷ সেই সময় অনেক হিন্দুস্থানী বা মনীপুরী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ অসমে বসবাস করতো৷ কেউ সেদিন বাঙালীর পাশে দাঁড়ায় নি৷

আজ সারা ভারতে বাঙালী মানেই বিদেশী৷ অথচ ভারতের টাকায় দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে বাংলা ভাষা, এটা বাঙালীর গর্বের বিষয়৷ কিন্তু হিন্দি সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে ঈর্র্ষর কারণ৷ আমরা বাঙালীরা অসম রাজ্যে আজ স্বভূমিতে পরবাসী৷ কারণ তাদের বাংলা ভাষা বলার বা শিক্ষা গ্রহণের অধিকার নেই, আইন করা হয়েছে জমি বা কোন সরকারি সাহায্য পাওয়ার অধিকারী নয়৷ ব্রিটিশ আমলের ঠিকুজি থাকলেও তাঁরা বিদেশী৷ কারণ তারা স্বদেশী বিপ্লবী তথা প্রতিবাদী৷ এছাড়াও জাতিসত্তার জন্য মাথা নত  সহজেই করে না৷ চরম আঘাতের পর কোন এক মূহূর্তে সিংহ গর্জনে সে তার নিজের পরিচয়ে তাঁর হৃতগৌরব ও হারানো জমি ছিনিয়ে---নেবে এই সৎসাহসটুকু রাখে৷

অপরদিকে নেপালের অবস্থা দেখুন ! ওখানকার  নেপালী বা গোর্খারা  কয়েকজন ভারতীয়কে হত্যা করল, ভারতের জমিকে নিজেদের জমি বলে নেপাল আইনসভার উচ্চ ও নিম্ন  কক্ষে বিল পাস করিয়ে নিল৷ অথচ ভারতের সরকার তাদেরকে তোয়াজ করে চলেছে৷ নেপালীরা বিদেশী হয়েও ভারতের সংবিধানে নাগরিক হয়ে স্থান পাবে, চাকুরী বা সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা উপভোগ করবে৷ গোর্খা রেজিমেন্টে পরাধীন ভারতে বিপ্লবীদের ত্রাসের কারণ ছিল৷ আজও সেই রেজিমেন্টকে রেখে দিয়েছে স্বাধীন দেশের সরকার প্রয়োজনে বাঙালীর বিরুদ্ধে কাজে লাগাবার জন্যে৷ পাশাপাশি বাঙালীদের জন্য স্বাধীন ভারতে কোনো বাঙালী রেজিমেন্ট করা যাবে না৷ পশ্চিমবাঙলায় কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় গোর্খাল্যাণ্ড আন্দোলন হচ্ছে৷ দার্জিলিং সহ বিস্তীর্ণ তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল নিয়ে চীনারা পিছন থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাহায্যে বৃহৎ নেপাল গড়তে চায়, অবশেষে তৈরী হবে বৃহৎ চীন দেশ---গোর্খাল্যাণ্ড তারই প্রথম পদক্ষেপ৷ বিদেশী গোর্খা ও চীনের সেই স্বপ্ণকে সার্থক করতে ভারতের অকালপক্ক সরকার গোর্খাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করছে৷ আর ভারতের মূল বৌদ্ধিক ও ক্ষাত্র শক্তির আধার বাঙালীকে বিনাশ করতে চাইছে ৷ নিজের নাক কেটে দেশের সর্বনাশ করার এই হল পশ্চিমী বেণিয়া বুদ্ধি৷

ভারতের তথা বিশ্বের বাঙালীরা যতশীঘ্রই এই সত্যটাকে বুঝবে যে বাঙালী জাতিসত্তা আজ সবদিক থেকে শোষিত নিপীড়িত তবেই বাঙালীস্তানের মঙ্গল৷ তারা যত তাড়াতাড়ি শোষণ মুক্তির সংগ্রামে শামিল হবে, তত তাড়াতাড়ি বাঙালী ও বাঙলার কল্যাণ, বাঙালীর কল্যাণ মানেই ভারতেরও কল্যাণ৷ বাঙলা বাঁচলে ভারত বাঁচবে৷