বাতরোগ

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

 

লক্ষণ ঃ পেশী বা বিভিন্ন সন্ধিস্থলে স্ফীতি ও আড়ষ্টভাব, ওই সকল স্ফীতিতে তীব্র যন্ত্রণা অথবা স্ফীত স্থান বেঁকে যাওয়া প্রভৃতি এই রোগের লক্ষণ৷

কারণ ঃ রোগটির কারণ হুবহু অম্লরোগের মত অর্থাৎ দেহে অম্লবিষের অধিক্য হেতু বায়ু কূপিত হ’য়ে এই রোগ সৃষ্ট হয়৷

চিকিৎসা ঃ অম্লরোগের অনুরূপ

রোগীর পক্ষে যথেষ্ট জলপান (প্রত্যহ ৪/৫ সের, তবে এক সঙ্গে অধিক নয়) করা উচিত ও স্নানবিধি মেনে চলা উচিত৷ প্রথমে কয়েকবার রোগগ্রস্ত স্থানে ও তৎপরে সর্বশরীরে আতপস্নান করে নেওয়া উচিত৷ আতপ স্নানের যা বিধি অর্থাৎ গ্রীষ্মে ও শীতে নির্দিষ্ট সময়ে অঙ্গবিশেষে বা সর্বাঙ্গে একবারে এক টানা ১৫/২০ মিনিট রোদ লাগিয়ে শরীর বা অঙ্গ বিশেষ উষ্ণ হয়ে যাবার পর ছায়ায় এসে ভিজে গামছা বা তোয়ালে দ্বারা সেই স্থান মুছে ফেলতে হ’বে৷ এইরূপ একাধিক বার করা যেতে পারে৷

পথ্য ঃ শরীরে অম্লদোষের প্রাধান্যই এই রোগের কারণ৷ তাই রোগীর পক্ষে ক্ষারধর্মী খাদ্য যত গ্রহণ করা যায় ততই কল্যাণ৷ খাদ্যের তিন চতুর্থাংশ যদি ক্ষারধর্মী হয় তবে অল্প দিনের মধ্যেই এই রোগ সম্পূর্ণরূপে সেরে যেতে পারে৷ অর্থাৎ রোগীর পক্ষে সব রকমের টক, মিষ্টি ফলমূলই সুপথ্য৷ একাদশী, পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় নেবুর রস সহ স–ম্বু উপবাসবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে৷ রাত্রে ভাতের পরিবর্তে অনেক্ষাকৃত শুকনো জিনিস যেমন রুটি ব্যবহার করাই প্রশস্ত৷ তবে ফলমূল ও তরিতরকারীর ঝোল প্রভৃতি ক্ষারধর্মী খাদ্যের তুলনায় ভাত, রুটি, লুচি প্রভৃতি শ্বেতসার তথা অম্লধর্মী খাদ্যের পরিমাণ যত কম হয় ততই ভাল৷

বিধিনিষেধ ঃ অম্লরোগের অনুরূপ৷ রোগীর কোষ্ঠ পরিষ্কারের দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে৷

কয়েকটি ব্যবস্থা ঃ অম্লরোগের ব্যবস্থাগুলির প্রত্যেকটি এই রোগ সম্বন্ধেও প্রযোজ্য অধিকন্তু,

১) রোগ লক্ষণ প্রকাশ হবার সঙ্গে সঙ্গে মৃদু বিবেচকের ব্যবস্থা নিলে অল্পায়াসেই রোগ সেরে যায়৷

২) বিছুটির কচি পাতা ১০/১২টি ঘিয়ে ভেজে ভাতের সঙ্গে খেলে রোগের প্রথম অবস্থায় সুন্দর ফল পাওয়া যায়৷

৩)   রেড়ির তেল কিঞ্চিৎ লবণ সহ রোগগ্রস্ত স্থানে মালিশ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়৷

৪)   আকন্দের আঠা কিঞ্চিৎ লবণ সহ রোগগ্রস্ত স্থানে মালিশ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়৷

৫) শোজনের আঠা একটু হিং সহ জলে গুলে গরম করে বাতের স্থানে বসিয়ে রাখলে অথবা,

৬) রসুন, আদা ও অপামার্গের মূল একত্রে বেটে রোগ গ্রস্থ স্থানের উপর বসিয়ে রাখলে বাতরোগ নিবৃত্ত হয়৷

৭) শূকরমাংস সরষের তেলে ভেজে সেই তেল,

অথবা,

৮) বাঘের চর্বি মালিশ করলে বাত রোগের ক্লেশ প্রশমিত হয়৷

৯) অনন্তমূলের ক্কাথ মধু সহ,

অথবা,

১০) গুলঞ্জের ক্কাথ শীতল করে প্রত্যহ ভোরে পাচ তোলা পরিমাণ খেলে অল্প দিনের মধ্যে সুফল পাওয়া যায়৷

১১) দু’তোলা ত্রিফলা (তিনটিই সম পরিমাণ) আধ সের জলে সিদ্ধ করে আধ পোয়া থাকতে নাবিয়ে উষ্ণ থাকতে থাকতে তাতে দু’তোলা পরিমাণ আদাররস মিশিয়ে তিন দিন পান করলে বাত জ্বর (শ্লীপদ বা ফাইলোরিয়া যা কিছু সংক্রান্ত হোক নাকেন) অবশ্যই সেরে যায়৷ 

(যৌগিক চিকিৎসা ও দ্রব্যগুণ থেকে)