বিজ্ঞান, দর্শন  ও ঈশ্বর

লেখক
আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত

বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য হ’ল--- যুক্তি প্রমাণ ছাড়া  বিজ্ঞান কোনো কিছুকে  বিশ্বাস  করে না৷ প্রমাণ  আবার তিন প্রকার৷ প্রত্যক্ষ প্রমাণ , অণুমাণ ও শব্দপ্রমাণ৷ প্রত্যক্ষ প্রমাণ  অর্থাৎ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভব করা৷  চোখ দিয়ে দেখা, কান দিয়ে শোণা, নাক দিয়ে গন্ধ  সোঁকা, জিহ্বা দিয়ে  আস্বাদন গ্রহণ করা  ও ত্বক  দিয়ে স্পর্শ করে  অনুভব করা৷

কিন্তু  এমন অনেক কিছু  আছে, যা এভাবে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় অথচ অস্বীকার করবার উপায় নেই৷ বৈজ্ঞানিকরাও অস্বীকার করেন না৷ যেমন পরমাণু (এ্যাটম) ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়, অণুবীক্ষণ দ্বারাও একে দেখা যায় না৷ তার চেয়েও অতি ক্ষুদ্র ইলেকট্রন৷ তাকে তো অণুবীক্ষণ দ্বারা দেখার প্রশ্ণই ওঠে না৷ অথচ  বিজ্ঞান কর্ত্তৃক  স্বীকৃত ৷ এটা স্বীকার করতে হয় যুক্তির  সাহায্যে৷ মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকেও  যুক্তির সাহায্যেই স্বীকার  করতে হয়৷ আধুনিক ভৌতবিজ্ঞানের  এমনি অজস্র জিনিস আছে  তাকে প্রত্যক্ষ করা যায় না৷ যুক্তি দিয়েই মানতে হয়৷ এসব  হচ্ছে অনুমাণ প্রমাণ৷

আর  একধরণের প্রমাণ হচ্ছে শব্দ প্রমাণ৷ আমি  নিজে  দেখিনি, কিন্তু  নির্ভরযোগ্য পুস্তক  পাঠ করে মেনে নিয়েছি৷ যেমন এ্যান্টার্টিকা মহাদেশকে আমি  দেখিনি  কিন্তু  পুস্তক পাঠ করে জেনেছি৷

তাই প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছাড়া কিছু বিশ্বাস করব না যাঁরা বলেন, তাঁরা  সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক ও অযৌক্তিক কথাই বলছেন৷ তিনি  তাঁর ঠাকুরদাদাকে বা তাঁর বাবাকে হয়তো প্রত্যক্ষ করেননি, কিন্তু  অস্বীকার করতে পারবেন কি?

অনেকে বলবেন, বিজ্ঞান  কি ঈশ্বরকে স্বীকার  করেছে? বিজ্ঞান  অবশ্যই সত্যানুসন্ধানে রত৷ হ্যাঁ, এখানে একটা  কথা বলি, বিজ্ঞান মানে প্রকৃতপক্ষে কেবল বস্তুবিজ্ঞান  বা জড়বিজ্ঞান নয়, মনোবিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিক বিজ্ঞানও বিজ্ঞান৷

যাঁরা জড়বস্তু জগতে  সত্যানুসন্ধানে রত তাঁরা  জড় বিজ্ঞানী৷ এমনি করে যাঁরা  মনের জগতে সত্যানুন্ধান করছেন তারা মনোবিজ্ঞানী, আর  আধ্যাত্মিক  জগতে যারা  সত্যানুসন্ধানে রত, তাঁরা হলেন অধ্যাত্মবিজ্ঞানী৷ যোগী -ঋষি-সাধক এঁরা  অধ্যাত্মবিজ্ঞানী৷

 ধরুণ, আমি আলু ব্যবসায়ী৷ আমার কাছে  আলু  বেগুন মাপবার  দাঁড়ি পাল্লা আছে৷ এই দাঁড়িপাল্লা  দিয়ে আমি  আলু-বেগুন  পরিমাপ  করতে পারি৷  কিন্তু  আজকের আবহাওয়ার  তাপমাত্রার পরিমাপ বা বাতাসের  চাপের পরিমাপ করতে পারব কি? পারব না৷ কারণ, ও  সবের পরিমাপের  মানযন্ত্র  পৃথক৷ তেমনি ভৌতিক  Physical) সত্তাকে ধরবার  যন্ত্র ভৌতবিজ্ঞানের  কাছে  আছে৷ তা দিয়ে  মনকে  বা আত্মাকে  ধরা  যাবে কী করে? বিজ্ঞান কি  (সাধারণভাবে ভৌতবিজ্ঞানকেই বিজ্ঞান বলা হয়) মন বা চেতনাকে ধরবার কোনো পরিমাপযন্ত্র আবিস্কার  করতে পেরেছে? পারেনি৷

ঈশ্বর চৈতন্যসত্তা, তাই ভৌতবিজ্ঞানের যন্ত্র দিয়ে তা ধরা সম্ভব হয়নি৷ কিন্তু বিজ্ঞান ঈশ্বরকে  অস্বীকারও করেনি৷ হ্যাভেলস  টেলিস্কোপের  সাহায্যে মহাকাশবিজ্ঞানীরা  বলেছেন এই বিশ্ব ক্রম প্রসারমান৷ বৈজ্ঞানিকরা গবেষণা করে বলছেন, এই  সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড একসময়  একটা বিন্দুর  মতই ছিল৷  বিন্দু মানে  যার দৈর্ঘ্য প্রস্থ-উচ্চতা নেই, কেবল অস্তিত্বই আছে ৷ হ্যাঁ, এই সুবিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এমনি এক বিন্দুর মতই ছিল৷ তারপর ভয়ঙ্কর  এক বিষ্ফোরণ  হয়,যার নাম দিয়েছেন তাঁরা ‘বিগ ব্যাং’ BIG BANG)৷  তা ঘটেছে আজ থেকে ১৩.৮ বিলিয়ন বৎসর পূর্বে৷ তারপর থেকে এই বিশ্ব  ক্রমে প্রসারিত  হয়ে চলেছে৷

অর্থাৎ একটা  বিন্দু থেকে এই বিশাল অকল্পনীয় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের  উৎপত্তি হয়েছে৷ এতবড় বিশ্বব্রহ্মাণ্ড  এক বিন্দুতে  ছিল--- কেমনভাবে?  সে উত্তর বৈজ্ঞানিকদের কাছে নেই৷ তার মানে তো এই হয় যে একটা  কিছু না থেকেই এতবড়  বিশ্বের সৃষ্টি  হয়েছে৷ বিন্দু মানে যার ভর  কিছুই নেই কেবল তার অস্তিত্বকেই মানা হচ্ছে৷

কিন্তু  ‘কিছু না’ থেকে তো কিছু  হতে পারে না৷ নিশ্চয়ই এমন কিছু  ছিল যা  ভৌতবিজ্ঞানের মানদণ্ডে ধরা যাচ্ছে না৷ এখানে বিজ্ঞানী  নিরুত্তর৷ তাহলে এর আগে কী ছিল? এই প্রশ্ণের  উত্তর দিতে  যেমন বৈজ্ঞানিকরা  পারছেন না, আবার কীভাবেই বা বিষ্ফোরণ ঘটল, কী কারণে এই বিষ্ফোরণ ঘটল এ সম্পর্কেও বিজ্ঞানীরা নিরুত্তর৷ তাঁরা এটাকে একটা  আকস্মিক বিস্ফোরণ বলছেন?

আকস্মিকতা বলে তো বিজ্ঞানে  কিছু হয় না৷  বিজ্ঞানীরাই বলেন,আকস্মিকতা  বা দুর্ঘটনা কেবল অজ্ঞতারই নামান্তর অর্র্থৎ যার কারণ  আমি অজ্ঞতার  জন্যে জানিনা, তাকেই বলি ‘এ্যাক্সিডেন্ট’৷  তেমনি এই বিষ্ফোরণটা  একটা আকষ্মিক ঘটনা হতে পারেনা৷ আসলে এর কারণটা আমাদের  জানা নেই তাই আমরা  এটাকে এ্যাক্সিডেন্ট বলছি৷

বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক জেমস জিনস্  স্পষ্টতই বললেন যে তিনি একটা আকস্মিক দুর্ঘটনাকে  বিশ্ব সৃষ্টির কারণ হিসেবে মানতে রাজী নন৷ একবার তাঁর কিছু  বন্ধু  ও সহকর্মীরা তাঁর ল্যাবোরেটরীতে ঢুকে দেখলেন, একটা সুন্দর সৌরজগতের মডেল  রয়েছে৷ সহকর্মীরা জিজ্ঞেস করলেন, এত সুন্দর সৌরজগতের মডেল কে বানিয়েছে? জেমস্ জিনস একটু হেসে বললেন, ল্যাবোরেটরীতে একটা বিষ্ফোরণ ঘটেছিল, তা থেকেই  এই মডেলটি তৈরী হয়ে গেছে৷ একথা  কেউ  মানতে রাজী হলেন না৷ তাঁরা বললেন, একটা বিষ্ফোরণের মাধ্যমে এমনিতেই এত সুন্দর  একটা  সৌরজগতের মডেল  তৈরী হতেই  পারে না, অসম্ভব! তখন জেমস্ জিনস বললেন, কেন হবে না?  যদি একটা বিষ্ফোরণের ফলে এত সুন্দর মহাবিশ্ব হতে পারে, তাহলে  এটা  সম্ভব  নয় কেন?  অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চাইলেন স্রেফ একটা  বিষ্ফোরণকে  মহাবিশ্ব  সৃষ্টির  কারণ বলা মোটেই  যুক্তিযুক্ত নয়৷ তাঁর বক্তব্য এর পেছনে এক চৈতন্যদীপ্ত সত্তা  অর্থাৎ  ঈশ্বর অবশ্যই আছেন৷ কেননা একমাত্র চৈতন্যদীপ্ত  সত্তাই  পারে কোনো  সুশৃঙ্খল  নিয়মবদ্ধ  কোনো কিছু  সৃষ্টি  করতে৷ এই মহাবিশ্ব  যার প্রতিটি  অণু -পরমাণু  থেকে সবকিছুর   ভেতরে  বাইরে একটা নিঁখুত  নিয়ম,  নিঁখুত পরিকল্পনা পরিদৃষ্ট হচ্ছে, তা নিছক  বিষ্ফোরণের  মাধ্যমে  হয়েছে  তা মোটেই  যুক্তিগ্রাহ্য নয়৷

বিরাট চৈতন্যসত্তা  ঈশ্বরের  উপস্থিতি ছাড়া  এধরণের পরিকল্পনা  হতে পারে না৷ তাই জেমস জিনস্ -এর মতো বহু বড় বড় বৈজ্ঞানিক ঈশ্বর  মানতেন৷ পৃথিবীর  অন্যতম  শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক আইন ষ্টাইনও  ঈশ্বর মানতেন ৷ প্রকৃতপক্ষে মহান্ সত্যানুসন্ধানী বৈজ্ঞানিকদের  অধিকাংশই ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেন নি৷ ভৌতবিজ্ঞান যেখানে  তার ভৌতবিজ্ঞানের মাপকাঠি  নিয়ে আর এগুতে  পারেন না, সেখান থেকে অধ্যাত্মবিজ্ঞানীদের তথা দার্শনিকদের যাত্রা শুরু ৷

শ্রীশ্রী আনন্দমূত্তিজী বলছেন, এই পরিদৃশ্যমান ভৌতিক জগৎ, দর্শনের ভাষায় একে বলা হয় পাঞ্চভৌতিক জগৎ,---এই ভৌতিক  জগৎ উদ্ভূত হয়েছে ব্রহ্ম থেকে, যাকে সাধারণভাবে  ঈশ্বর  বলা হয়৷  ‘ব্রহ্ম’ হল  অনাদি অনন্ত  চৈতন্য প্রবাহ৷ শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী তাঁর দর্শনগ্রন্থ ‘আনন্দসূত্রম’-এর প্রথম সূত্রেই বলেছেন ‘শিব শক্ত্যাত্মকম্ ব্রহ্ম’৷ ‘ব্রহ্ম শিব ও শক্তি বা পুরুষ ও প্রকৃতির  সমবায়৷ এখানে ব্রহ্ম, শিব, শক্তি--- ভাবতে যেন কেউ কোনও রূপ বা ঠাকুর দেবতার মূর্ত্তির চিন্তা না করেন৷ ব্রহ্ম বলতে আগেই বলেছি অনাদি অনন্ত চৈতন্য প্রবাহ৷ ব্রহ্মের প্রধানতঃ দুটি  অংশের  একটি  হ’ল শিব,  অপরটি প্রকৃতি৷ শিবকে বলা হয় পুরুষ৷ পুরুষ অর্থাৎ সবকিছু ভেতরে  যিনি শায়িত রয়েছেন৷ আবার প্রকৃতি  মানে প্র-করোতি  ইতি প্রকৃতি  অর্র্থৎ প্রকার সর্জনী ক্ষমতা৷ শিব হ’ল চিতিশক্তি  আর প্রকৃতি  হ’ল ক্রিয়াশক্তি৷  যেমন, একটা মাটির  পুতুল ৷ এর ভেতরে রয়েছে মাটি৷ মাটি হল  এর উপাদান কারণ  এই উপাদান  কারণকে  বলা হয় শিব৷ তা অবশ্য  চৈতন্যসত্তা৷ আর, মাটিকে বিশেষ প্রক্রিয়ার সাহায্যে পুতুলে পরিণত করা হয়, এই যে ‘প্রক্রিয়া’ বা ক্রিয়াশক্তি  বা নিমিত্ত  কারণ--- একেই  বলা হয় প্রকৃতি৷ আনন্দমার্গ দর্শনে  বলা হচ্ছে, প্রকৃতিতে আবার তিনটি  উপাদান রয়েছে--- এদের বলা হয় সত্ত্বগুণ, রজঃগুণ ও তম গুণ৷ এগুলোকে গুণ বলা হয়৷ দার্শনিক অর্থে ‘গুণ’ মানে ‘বন্ধন রজু’ বা বাঁচবার দড়ি৷ যেমন নৌকার  গুণ টানা৷

আদিতে ব্রহ্মে এই তিন গুণ (সত্ত্ব, রজ ওতম) সামাবস্থায় থাকে৷ এই অবস্থায় তারা  ত্রিকোণাকারে ব্রহ্মকে ঘিরে থাকে৷ কিন্তু  ব্রহ্মের ওপর প্রকৃতির  প্রভাব পড়ে না৷ এক্ষেত্রে প্রকৃতি  অর্র্থৎ গুণগুলি নিষ্ক্রিয়া৷ তাই  এই অবস্থাতে ব্রহ্মকে  বলা হয় নির্গুণ ব্রহ্ম৷ যখন প্রকৃতির  ভারসাম্য নষ্ট হয় তখন এই শক্তি ত্রিকোণের  এক কৌণিক  বিন্দু  থেকে সৃষ্টিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়৷  ক্রমান্বয়ে সত্ত্ব রজঃ ও তমগুণের  প্রভাবে ভূমামনের সৃষ্টি হয়৷  ভূমামনের  ওপর তমগুণের  ক্রমবর্ধমান প্রভাবে (চাপে) ধীরে ধীরে  পঞ্চভূতাত্মক  এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হয়৷ ভূমামনে এই তিন গুনের,প্রভাব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিস্তার ঘটতে থাকে ও দর্শনের  ভাষায়  ক্রমশঃ  সূক্ষ্ম থেকে  স্থূলরূপে প্রথমে ব্যোম্, তারপর মরুৎ, তারপর তেজ, তারপর অপ, তারপর ক্ষিতির সৃষ্টি হয়৷

ক্ষিতি মানে সাধারণভাবে কঠিন জড়বস্তু, অপ মানে তরল পদার্থ, তেজ মানে সূর্য বা তারকার মতো জ্যোতিষ্মান পদার্থ  ও মরুৎ মানে বায়বীয় পদার্থ ও ব্যোম্ মানে ইথার৷

এইভাবে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি৷ আনন্দমার্গ দর্শনে সূক্ষ্মতম চৈতন্য সত্তা --- ব্রহ্মা থেকে স্থূলতম কঠিন পদার্থ পর্যন্ত সৃষ্টির এই ধারাকে বলা হয় সঞ্চরধারা৷

সঞ্চরের পর সৃষ্টির অপর ধারা যা স্থূল থেকে সৃষ্টির দিকে  এগিয়ে চলেছে৷ একে বলা হয় প্রতি সঞ্চরধারা৷

আনন্দমার্গের  ‘আনন্দসূত্রম ’ ও ‘ভাব ও ভাবাতীত’ (Idea  & Idiology) গ্রন্থে  এই সমগ্র সৃষ্টিক্রিয়ার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে৷  বলা হয়েছে,  ব্যোম্ থেকে ক্রমান্বয়ে ক্ষিতি সৃষ্টি হওয়ার পর তার ওপর  প্রকৃতির তমোগুণতার শক্তির ক্রমবর্ধমান চাপের প্রতিক্রিয়ায়  বস্তুদেহের  অভ্যন্তরে  অন্তর্মুখী বহির্মুখী শক্তির উদ্ভব হয়৷ এরই পরিণাম বস্তুদেহে প্রাণশক্তির সৃষ্টি হয়৷ এছাড়াও বস্তুদেহের অভ্যন্তরে  শক্তি সংঘর্ষের ফলে বস্তু দেহ চূর্ণীকৃত হয়ে অণুমণের সৃষ্টি হয়৷ এইভাবে এককোশী জীবের সৃষ্টি হয় তা থেকে ক্রমশঃ বিবর্তনের পথ বেয়ে বহুকোশী জীব,  বিভিন্ন উদ্ভিদ ও  প্রাণীর পর সর্বশেষে মানুষের সৃষ্টি হয়, মানুষের মন সম্যকরূপে বিকশিত৷ তাই তারমধ্যে বিচারশীলতা রয়েছে, কর্তব্যাকর্তব্য বোধ রয়েছে৷

 মানুষ যদি তার এই কর্তব্যাকর্তব্যবোধে সদব্যবহার করেন, সাধনা, সেবা ও ত্যাগের মাধ্যমে নিজের মনকে অধিকতর প্রসারিত করে মানবমনের বিবর্তনের সর্বচ্চস্তরের নিয়ে যায়, তখন সে তার আদি উৎস ব্রহ্মের  সঙ্গে  সংযুক্ত হয়ে যথার্থ ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করেন৷

সে তখন উপলদ্ধি করেন ---

আনন্দাধেব খল্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে

আনন্দেন জাতানি জীবন্তি

আনন্দং প্রয়ন্ত্যভিসংবিশন্ত্৷৷

সবাই সেই আনন্দময় ব্রহ্ম থেকে এসেছে, আনন্দের মধ্যে বিস্তৃতি রয়েছে আর সর্বশেষে সে আনন্দময় ব্রহ্মে মিলে মিশে  একাত্ম হয়ে যাবে৷