বঙ্গ বন্ধু  মুজিবুর রহমান

লেখক
কণিকা দেবনাথ

 মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন অবশেষে জন্ম দিল স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের৷ ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট দেশ স্বাধীনতার আগে ভারত ভেঙে ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের বাংলাদেশে ও পঞ্জাবের অংশ নিয়ে তৈরী হয় পাকিস্তান রাষ্ট্র৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল পূর্বপাকিস্তানের বাঙালী জনগোষ্ঠী৷ কিন্তু ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি উর্দু শাসকদের হাতে৷ তারা ক্ষমতার জোরে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করতে চেয়েছিল৷ প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালী জনগোষ্ঠী৷ উর্দুকে কিছুতেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা মানবে না৷ দ্বিজাতি তত্ত্বের দোহাই দিয়ে দেশভাগের কয়েক মাস পরেই ধর্মান্ধ জাতের উর্দ্ধে উঠে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালী জনগোষ্ঠী মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লো৷ ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী ঐতিহাসিক স্মরণীয় দিন৷ রাষ্ট্রসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ভাষা দিবস৷ ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী ঢাকার রাজপথে নেমে এসেছিল লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবীতে৷ সেই আন্দোলনকে দমন করতে পশ্চিম পাকিস্তানি উর্দু সাম্রাজ্যবাদী শাসক সেনা নামিয়ে ঢাকার রাজপথে পাঁচজন তরুণ ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করে৷ তাতে অবশ্য আন্দোলন দমে যায়নি৷ সেই আন্দোলনের শেষ পরিণতি স্বাধীন বাংলাদেশ৷ মুজিবর রহমান ছিলেন এই আন্দোলনের অন্যতম নেতা৷

১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ অবিভক্ত ভারতের বাঙলাদেশে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্ম শেখ মুজিবর রহমানের৷ পিতার নাম ছিল লুতফার রহমান৷ মাতার নাম সেয়ারা বেগম৷ শিক্ষার শুরু গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে৷ সেখান থেকে  মাদারিপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল৷ ১৯৪২ সালে গোপালগঞ্জ মিশনারী স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন৷ ১৯৪৭ সালে বি.এ পাশ করেন মৌলানা আজাদ কলেজ থেকে৷ দেশভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়তে ভর্তি হয়েও পড়া শেষ করতে পারেন নি৷ এক আন্দোলনে জড়িয়ে কলেজ থেকে বহিষৃকত হন৷

১৯৪৩ সালে ব্রিটিশ ভারতে মুসলিমলীগে যোগ দেন৷ ১৯৪৮ সালেই উর্দুকে রাষ্ট্রভাসা করার বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন শেখ মুজিবর রহমান৷ ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আওয়ামি লীগ৷ মুজিবুর রহমান মুসলিমলীগ ছেড়ে আওয়ামি লীগে যোগ দেন৷ বাংলাদেশ ভাষা আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন৷ ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলন শুরু হয় তাঁরই নেতৃত্বে৷ ১৯৭১সালে ৭ই মার্চ ঢাকা রেসকোর্স ময়দান থেকে এক ঐতিহাসিক ভাষনে স্বাধীনতার ডাক দেন শেখ মুজিবুর রহমান৷ ওই বছরেই ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনারা জল্লাদের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলাদেশের নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের ওপর৷ অপারেশন সার্চলাইট নাম দিয়ে ইতিহাসের নৃশংসতম ও জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড চালায় উর্দু সাম্রাজ্যবাদী হানাদারের দল৷ অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ ভারত বাংলাদেশ মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী৷ মুজিবুর তখনও পাকিস্তান জেলে আটক ছিলেন৷ ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারী পাকিস্তানি জেল থেকে মুক্তি পেয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন৷  বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে ‘জাতির জনক’ আখ্যায়  ভূষিত করেন৷ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট মধ্যরাতে একদল উচ্চাকাঙ্ক্ষী বিপথগামী সেনার অকস্মাৎ আক্রমণে শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন৷ বর্তমানে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী৷