ভারত আমার ভারতবর্ষ

লেখক
মন্ত্র আনন্দ

ভারত নামটা নিয়েই রয়েছে বিতর্ক, কেউ কেউ বলে ভরত নামে কোন রাজার নাম থেকে ভারত নামটা হয়েছে৷ এটা সম্ভব নয়, কারণ ভরত নামে যদি কোন রাজা থেকেও থাকে তিনি ছিলেন ভারতের রাজা ৷ তাই তার নাম থেকে ভারত নাম হয়েছে,এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়৷ ভারত নাম প্রসঙ্গে দার্শনিক ঋষি শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকারের কথাটাই যুক্তিযুক্ত ‘ভারত’ শব্দটি তৈরী হয়েছে ---‘ভর্’ ধাতু থেকে ‘ভার’ এসেছে যার মানে যে বা যিনি ভরণ পোষণ করেন বা যেখানে ভরণ-পোষণের পূর্ণ সুযোগ রয়েছে৷ আর ‘ত’ এসেছে ‘তন্’ ধাতু থেকে যার মানে যেখানে মানসিক বিস্তারের সমস্ত সুবিধা রয়েছে--- সেই স্থান৷

অর্থাৎ এই ভারত সেই দেশ যেখানে ভরণ পোষণ অর্থাৎ জীবিকা নির্বাহ ও মানসিক বিকাশের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে৷ আর্যরা এদেশকে যুগবৎ জীবনধারণের ও মানসিক বিকাশের উপযুক্ত স্থান হিসেবে দেখেছিলো--- তাই তার এর নাম রেখেছিল ভারত৷ ‘বর্ষ মানে দেশ৷ এদেশ ‘‘নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের দেশ’’৷

এখানে আলোচনার বিষয় আজকের ভারত নিয়ে---যে ভারতকে কেউ কেউ ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান’ বানাতে চাইছে৷ এরা এমন ভান করছে যেন এরাই আসল দেশপ্রেমিক৷ আসল কথাটা হ’ল, ভারতবর্ষ মানে না হিন্দু, না হিন্দী, না হিন্দুস্থান, না মুসলিম, না খ্রীষ্টান৷ ভারতবর্ষ নানা ভাষা কৃষ্টি সংসৃকতির একটি যুক্তরাষ্ট্র৷ এখানে কোন একটি ভাষাকে, কোন একটি ধর্মমতকে জোরপূর্বক চাপানোর চেষ্টা হলে, কোন একটি অঞ্চলের নামে গোটা দেশকে পরিচিত করার চেষ্টা হলে তার পরিণতি ভালো হয় না৷ বাংলাদেশ, সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্র, জার্র্মন তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত৷ জোর করে উর্দু চাপানোর পরিণতিতে পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হ’ল৷ আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বাটাভিয়া,লাটাভিয়া প্রভৃতি এগারোটি ভাষা-ভাষী দেশ ছিল সোভিয়েত ইয়ূনিয়নে, জোর করে রাশিয়ান ভাষা সংসৃকতি চাপাতে গিয়ে আজ মানচিত্র থেকে মুছে গেছে সোভিয়েত ইয়ূনিয়ন৷ সেখানে এগারোটি রাষ্ট্র জন্ম নিয়েছে৷ আবার ধনতান্ত্রিক পশ্চিম জার্র্মনি থেকে পৃথক করে তৈরী হয়েছিল কমিউনিষ্ট পূর্ব জার্র্মনি কিন্তু কমিউনিষ্টদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে, সব াধা তুচ্ছ করে বিভেদের বার্লিন প্রাচীর ভেঙ্গে দিয়ে দুই জার্র্মনি মিলে এক হয়ে যায়৷ কারণ ভাষা কৃষ্টি সংসৃকতির দিক দিয়ে তারা ছিল এক৷ ভারতবর্ষকেও এই দৃষ্টিতে বিচার করতে হবে৷ এখানে কোন অকটি ধর্মমত, কোন একটি ভাষা দিয়ে এক করতে গেলে হিতে বিপরীত হবে৷ ভারতবর্ষ মানে বাঙালি, অঙ্গীকা, মৈথিলী , ভোজপুরী , বুন্দেলী, বাঘেলি, পঞ্জাবী, কশ্মীরি ডোগরি, তামিল তেলেগু, মালায়ালাম... ৪৪টা জনগোষ্ঠী সমস্বরে বলবে ‘‘ভারত আমার ভারতবর্ষ৷’’ তাদেই ভারতবর্ষের সংহতি সুদৃঢ় হবে৷ এটাই পথ আর অন্য পথ নাই৷