পুষ্টিকর খাবার জোগানোর জোগাড় করতে পারছেন না বাবা-মা৷ ফলে, প্রত্যেক দিন পাঁচ-ছয়ঘন্টার প্রশিক্ষণের পর এশীয় বয়সভিত্তিক সাঁতারে চার-চারটি পদক জেতা সাঁতারুর জোটে শুধুই রুটি-তরকারি৷ বাংলার কোথাও আন্তর্জাতিক সুইমিং পুলে সাঁতার কাটার সুযোগ নেই৷ বালি গ্রামাঞ্চলের ঘোলা জলে সাঁতার কাটতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে প্রতিনিয়ত৷ ঠিকমতো এগোনো যায় না, সেখানে অনুশীলন করেই দেশের সেরা হয়েছেন জুনিয়র বিভাগে৷ সামনে কোনও জাতীয় শিবির নেই৷ ফলে আন্তর্জাতিক কোচের কাছে শিক্ষা নেওয়া ও সুইমিং পুলে প্রশিক্ষণের সুযোগ নেই৷ রাজ্য সংস্থার কর্তাদের কাছে সাহায্য চেয়েও পাননি৷ ফলে চূড়ান্ত উপেক্ষা আর অবহেলার জেরে শেষ হয়ে যেতে বসেছে দেশের ও রাজ্যের অন্যতম সাঁতারু চোদ্দো বছরের সাহিল লস্করের খেলোয়াড় জীবন৷
সাব-জুনিয়র, জুনিয়র , এশীয় মিট মিলিয়ে যাঁর ভাড়াবাড়ির ভাঙাচোরা আলমারিতে রয়েছে প্রায় ষোলোটি পদক, সেই সাহিল সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছে ‘‘কীভাবে সাঁতার কাটব জানি না৷ বাবা রং মিস্ত্রি৷ কোনও দিন কাজ থাকে, কোনও দিন থাকে না৷ খাবারই জোটে না৷ অনুশীলনের পর যে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন যে প্রোটিনের প্রয়োজন তার এক আনাও জোটে না৷ জাতীয় শিবিরে থাকলে এগুলো পাই৷ এখানে কে দেবে? বাড়িতে রুটি-তরকারি করে দেয় মা৷ চোখে জল এলেও কিছু করার নেই কী করে সাঁতার চালিয়ে যাব , জানি না৷ চোখের সামনে জগৎটাকে বড় অন্ধকার মনে হয়, জানি কীভাবে এই অন্ধকার কী ভাবে কাটাব!
সুইমিং এর দিক থেকে শাহিল একেবারে তুফান৷ যখন সুইমিং পুলে নামে তখন ঝড় তোলে সুইমিং পুলে৷ তাঁর কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য জানিয়েছেন বাংলায় এত ভাল সাঁতারু দেখিনি৷ দারুণ প্রতিভা কিন্তু ছেলেটার জন্য কিছুই করতে পারছি না৷ যতবার নেমেছে , ততবাই সোনা-রূপা জিতেছে৷ কিন্তু গতদ সেপ্ঢেম্বরে বেঙ্গালুরুতে এশীয় বয়সভিত্তিক সাঁতারে হইচই ফেলে দেয় ক্যানিংয়ের ছেলে সাহিল৷ আঠারোটি দেশের সাঁতারুদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুটি রুপো ও ব্রোঞ্জ জেতে সে৷ ৫০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে রুপো, ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে ব্রোঞ্জ ছাড়াও দুটি রিলে দলের সদস্য হয়ে রুপো ও ব্রোঞ্জ জেতে সে৷ এতকিছুর পরও কোনও সুযোগও পায়নি সাহিল৷ ভাগ্যটাই তার খারাপ কারণ না হলে মারধর খেয়ে যেভাবে আমাকে বেঙ্গালুরুর নিহার আমিনের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসতে হয়েছিল, তা সাহিল কোনওদিনও ভুলতে পারবে না বলে জানিয়েছে এখন প্রশ্ণ একটা বাঙালী বলেই এমন প্রতিভা সুযোগ পাচ্ছে না, রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার কী এ বিষয় নির্বাক বাঙলার ঘরে ঘরে এমন প্রতিভাদের কী ! দিনের পর দিন এমনভাবেই গুমরে গুমরে মরতে হবে৷ কারা এগিয়ে আসবে এই প্রতিভাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য?