চিন ও নেপালের যুদ্ধং দেহি মনোভাব ভারতের জনগণকে টলাতে পারবে না

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারতের দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল ও চিনভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে৷ শুধু তাই নয়, গত ১৬ই জুন সংবাদে  প্রকাশ লাদাখে ভারত ও চীন সেনা সংঘর্ষ হয়৷ এতে ভারতের প্রায় ২০ জন সেনা ও অফিসার প্রাণ দিয়েছেন ও আহত হয়েছেন অনেকে ৷ অন্যদিকে চীনের বেশ কিছু সেনা প্রাণ দিয়েছেন ও আহত হয়েছেন৷ এই ঘটনার মূল কারণ হলো গালওয়ান উপতক্যা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলা কালে গত সোমবার রাতে সেনাদের মধ্যে লড়াই হয়৷ মনে পড়ে ১৯৬২ সালে চিন হঠাৎ ভারত আক্রমন করে,তাতে ভারতের  অনেক সেনা নিহত ও আহত হন৷  ১৯৭৫ সালে আবার চীন ভারত সংঘর্ষ হয় তাতে  দু’পক্ষের সেনা নিহত হন ও আহত হন৷ এবার ২০২০ সালে ১৫ই জুন লাদাখে ভারতীয় সেনা নিহত হন৷ এতে চিনের কিছু  সেনা নিহত ও আহত হন৷ ভারত ও চিন সীমান্ত ৩,৪৮৮ কিমি রয়েছে৷ দেখা  যায়নি চীন-এর আগ্রাসী মনোভাবটা এই দুর্র্ভগ্যজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে৷ লাদাখ তো ভারতের অংশ তবু চীন সীমান্ত রেখা অতিক্রম করে উত্তেজনা সৃষ্টি করে চলেছে৷ শুধু তাই নয় চিন হুমকি দিয়েছে  ভারতকে৷ আমরা দেখছি চিন ভারতের ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে চলেছে নেফা এলাকায় ও দীর্ঘ সীমান্ত অঞ্চলে৷ জোর যার মুলুক তার এইনীতি নিয়েই প্রতিবেশীদের সঙ্গে সে আচরণ করে চলেছে৷ চীনের আগ্রাসী ভূমিকায় পাকিস্তান যে উল্লসিত তা অস্বীকার করা যায় না৷ কারণ চীন পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে একনাগাড়ে মদৎ দিয়ে চলেছে চীন পাকিস্তান সড়ক নির্র্মণের লক্ষ্যে৷ আগে ডোকালামে গণ্ডগোল করে চীনা সৈন্য দিয়ে৷ ভারত চিরকাল শান্তিপ্রিয় রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত কিন্তু চীন-এর আগ্রাসী মনোভাবটার দৃষ্টান্ততো সারা এশিয়ার সীমান্ত এলাকাগুলিতে ছড়িয়ে রয়েছে৷

চীনের রাষ্ট্রনীতি চিরকালের, বিশেষ করে কমিউনিষ্ট চীনের৷ এতো গেল সীমান্তে সৈন্যদের উষ্কানী দিয়ে চীনের একটা নোংরা রাজনৈতিক পরিকল্পনা৷ অন্যদিকে চীন গাড়ী সংস্থার উন্নতির জন্য মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে ১০০ কোটি ডলার অর্থাৎ প্রায় ৭৬১১ কোটি টাকার মত স্বাক্ষর করেছেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরের সঙ্গে৷ চুক্তির শর্ত হলো পুনের কাছে তেলেগাঁওয়ে মোটর কারখানায়৷ ভারতের আর্থিক সংকট চলছে তাই সাম্রাজ্যবাদী কমিউনিষ্ট চীন কি বণিকের ছদ্মবেশে ভারতে লগ্ণি করতে উদ্যত্ত?

এটা কিন্তু এদেশের জনগণ মেনে নিতে পারবেন বলে মনে  হয় না৷ এছাড়া যুদ্ধের আবহাওয়ার  মধ্যে দিল্লি মিরাট সুড়ঙ্গ নির্মাণে বরাত পেয়েছে এক চীনা সংস্থা৷

তবে চীন যেন মনে রাখে ভারত এতোটা দুর্বল নয়  চিনের দু’মুখো নীতিকে হজম করবে৷ তাই ধান্দা বাজিটা চীন বন্ধ করুক৷ ভারতের সীমান্তকে অতি সত্বর সে যেন হটে যায়৷  চীন আগ্রাসী মনোভাব ত্যাগ করুক৷ শোষিত নিপীড়িত জনগণের কথা ভাবুক৷ তা না হলে চীনের মধ্যেই আগুন জ্বলবে তাদের মিথ্যাচারিতার জন্য৷ মানবিক মূল্যবোধকে মর্যাদা দিতে শিক্ষা নিক বেজিং৷ এ তো গেল চিনের দিক৷ এবার নেপালের কাণ্ডটা ভারতীয়দের ভাবতে হবে ১৩৩ কোটি জনগণকে৷ এই ১৩৩ কোটি জনগণের মধ্যে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় নেপালি ভাই ও বোন আছেন৷ নেপাল চিরকালই ভারতের অবিচ্ছেদ্য বন্ধু রাষ্ট্র৷  বর্ত্তমানে নেপাল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র৷ এই রাষ্ট্রটি হলো একটি হিন্দু রাষ্ট্র৷ ভারত কিন্তু হিন্দু ধর্মমতাম্বলী জনসংখ্যাগরিষ্ট হয়েও ধর্মমত নিরপেক্ষ রাষ্ট্র৷ কিন্তু নেপালে  অবস্থিত হিন্দু মন্দিরগুলিতে ভারতের লক্ষ লক্ষ হিন্দু ভক্তগণ যান ও নেপালকে তাঁরা নিজের দেশ বলেই মনে করেন৷ নেপালীরাও ভারতকে নিজের দেশ বলে মনে করেন ও ভাগ্যান্বেষণে ভারতে আগমন করেন বন্ধুরাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে৷ হঠাৎ দেখা গেল নেপাল সরকার ভারতের বেশ কিছু এলাকাকে নতুন মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে৷ সেই মানচিত্রকে নেপালের সরকার ভোটাভুটিতে পাশ করিয়ে নিয়ে বসেছেন৷ ভারতের প্রতিবাদের কোন গুরুত্বই সরকার দেননি কারণ বর্ত্তমানে চীনের মদতে নাকি নেপাল চলছে৷ চীন যেমন সীমান্ত বিরোধীকে ইচ্ছাকৃতভাবে উষ্কে দিয়ে সংঘর্ষ করছে শান্তি প্রিয় ভারতের সঙ্গে ঠিক তেমনই নেপাল ভারতের উদারতা ও বন্ধুত্ব অগ্রাহ্য করে ও ঐতিহাসিক সুসর্ম্পকে তুচ্ছজ্ঞান করে সংঘাতের পথে নামছে ভারতের সঙ্গে৷ কয়েকটি এলাকা যেমন অন্তর্ভুক্ত করেছে মানচিত্রে ঠিক তেমনি  নেপাল ভারতের সীমান্তে আরো ১০০ টি  চেক নেপালী ফৌজের গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেদেশের সরকার৷ শুধু তাই নয় এই চেকটি লাগাতার বৃদ্ধি করে ৫০০ করার পরিকল্পনা  নিয়েছেন  সরকার৷ দু’দেশের মধ্যে সীমান্তে যে বর্ডার  পিলার ছিল রহস্যজনভাবে সেগুলি নিখোজ হয়ে গেছে৷ তাঁরা একটা লক্ষ্য নিয়ে রেখা মানচিত্র করেছে যাতে ভারতের এলাকা প্রবেশ করিয়ে নিজেদের দেখাতে চাইছে৷

এ কাজটা বড় কঠিন সীমান্তে যে অধিবাসীরা বাস করছেন তাঁদের রেকর্ডকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না৷ অনেক তীর্থস্থান আছে যেগুলি হাজার বছর ধরে ভারতের বলে স্বীকৃত৷ কমিউনিষ্ট আগ্রাসী মানসিকতাকে প্রশ্রয় দিয়ে নেপাল যে কাণ্ড করছেন সেটা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন কাণ্ড৷ যা নেপালকে বাঁচতে পারবে না৷ তাঁদের আত্মীক যোগ আছে ভারতের  সঙ্গে৷ একথাটা যেন স্মরণে থাকে আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন উঠতি শাসকদের৷

মনে রাখা দরকার--- সরকার আজ আছে কাল নেই৷ কিন্তু মাটি পড়ে থাকবে৷ ঝগড়া করেই কেবল মরবে৷