দেশনায়কের কৈশোর-ভাবনা

লেখক
পথিক বর

পনেরো ষোল বছরের এক কিশোর ছাত্র বাঙালী প্রসঙ্গে তার মাকে এক চিঠিতে লিখেছেন---‘‘আমি প্রায় ভাবি বাঙালী কবে মানুষ হইবে, কবে ছার টাকার লোভ ছাড়িয়া উচ্চ বিষয়ে ভাবিতে শিখিবে, কবে সকল বিষয়ে নিজের পায়ের ওপর দাঁড়াইতে শিখিবে--- কবে একত্র শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করিতে শিখিবে--- কবে অন্যান্য জাতির ন্যায় নিজের পায়ের ওপর দাঁড়াইয়া নিজেকে মানুষ বলিয়া পরিচয় দিতে পারিবে, আজকাল বাঙালীদিগের মধ্যে অনেকে পাশ্চাত্য শিক্ষা পাইয়া নাস্তিক ও বিধর্মী হইয়া যায়, দেখিলে বড় কষ্ট হয়৷

আজকাল বাঙালীরা জাতীয় পরিচ্ছদকে ঘৃণা করিতে শিখিয়াছে--- দেখিলে বড় কষ্ট হয়--- বাঙালীরা আজকাল হইয়াছে বিলাসিতা প্রিয়, পরচর্র্চকারী, কুটিল হৃদয়, পরসুখদ্বেষী ও মনুষত্ববিহীন--- যা ভাবিলে বড় কষ্ট হয়---মা বাঙালী কী কখনও মানুষ হইতে পারিবে?’’

স্কুলের গণ্ডী না পেরোনো এক কিশোর কি গভীর অন্তর দৃষ্টি দিয়ে সেই সময়কার বাঙালী সমাজকে দেখেছিলেন৷ এমনকি পাশ্চাত্য শিক্ষায়  শিক্ষিত মানুষগুলোর আচরণও তাঁর দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি৷ যা দেখে তিনি মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছিলেন, তথাকথিত শিক্ষিত একশ্রেণীর মানুষের নাস্তিক সুলভ আচরণও তাঁর অন্তর্দৃষ্টিতে ধরা পড়েছিল ও তাঁকে আঘাত দিয়েছিল৷ তাঁর সেই মর্ম বেদনার কথা চিঠিতে মায়ের কাছে প্রকাশ করেছেন৷

তবে এখানেই শেষ নয়, আর এক চিঠিতে মাকে লিখেছেন---‘‘জন্ম মৃত্যু লইয়া এ জীবন তাহাতে একমাত্র সার জিনিস--- হরি নাম৷ এখন চাই কেবল বিশ্বাস, অন্ধবিশ্বাস, শুধু হরি আছেন এই বিশ্বাস৷’’

ষোল বছরের এক কিশোর ছাত্র মাকে চিঠি লিখছেন৷ সে চিঠিতে নেই কোনো জাগতিক চাওয়া পাওয়ার কথা, নেই ব্যষ্টিগত প্রয়োজনের কথা৷ সে চিঠির ছত্রে ছত্রে আছে দেশ, সমাজ ও ধর্মের কথা৷ বয়সে তিনি কিশোর ছাত্র হলেও  ভাবনায় চিন্তায় সামাজিক দৃষ্টিতে একজন পূর্ণ অভিজ্ঞ মানুষ৷ জীবন সম্পর্কে এই বোধই তাঁর সকল শক্তির উৎস ছিল৷ যা পরবর্তীকালে সকল  সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে তুচ্ছ করতে শিখিয়েছিল, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আপষহীন সংগ্রামের প্রেরণা ও মানসিক দৃঢ়তা জুগিয়েছিল৷ এই কিশোর আর কেউ নন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অতন্দ্র প্রহরী নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু৷