দরিদ্র দেশে সকল গরিব মানুষ যেন বাঁচার সুযোগ পায়, জাত-পাতের ভেদাভেদ নয়৷

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারতের বর্তমানে গণতান্ত্রিক যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাজ্যে ও কেন্দ্রে শাসন ব্যবস্থায় অদ্যাবধি যে রূপরেখা  দেখিয়ে এসেছে তাতে দেশের সর্র্বেচ্চ বিচার ব্যবস্থায় যাঁরা জ্ঞানীগুনী ব্যষ্টিগণ আসীন আছেন তাঁরা মাঝে মাঝে যেসব প্রশ্ণ তোলেন ও তার সদুত্তর শাসকগণের কাছে চান তাতে কিন্তু দেশের প্রবীন নাগরিকগণও অনেক সময় সন্তোষ প্রকাশ করে থাকেন এই ভেবে যে প্রাচীন ভারত এখনো মরে যায়নি৷

কিছু দিন আগে সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চ জিজ্ঞাসা করেন সরকারকে সংরক্ষণনীতি আরো কতোদিন চলবে! এমন প্রশ্ণ কেন করা হল সেটা কিন্তু শাসকগণ মনে হয় নিজেরা শাসক হিসাবে একবারও চিন্তা করেছেন বলে মনে হয় না৷ দেখা যাচ্ছে বাস্তবে কিছু কিছু সম্প্রদায় সেই প্রথম থেকেই এই সুবিধা ভোগ করে আসছে৷ ফলে এটা তাঁদের কাছে জন্মগত অধিকার হিসেবেই মনে হয়েছে৷

আবার এমনও দেখা গেছে--- যাদের বিশেষ অনগ্রসর শ্রেণীতে ফেলা হয়েছে তাদের কিন্তু জন্মসূত্রে সেই সুযোগ দেওয়া হয় না কেন তারও সদ্যুত্তর নেই৷ এমনও এই রাজ্যে সম্প্রদায় আছে যাঁদের বাড়িতে আজও লেখাপড়ার তেমন চল নেই, কেউই কোন কাজ পাননি৷ আবার সংরক্ষিত শ্রেণীতে পড়েও কোন সুযোগও পাননি৷ হ্যাঁ, তবে যদি বাড়ির আত্মীয় স্বজন কেউ সেই সংরক্ষিত শ্রেণীরর সরকারী স্বীকৃতি নানা ধরণে ফর্মপূর্ণ করে সাতঘাটের জল খেয়ে পান তাঁর সূত্র ধরে ফর্ম সরকারের ঘরে জমা দিলে হয়তো বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে৷ কিন্তু  প্রার্থীর বাবা বা মা স্বাভাবিকভাবে জন্মসূত্রে স্বীকৃতি পান না বা পাননি৷ এ কেমন ধরণের নীতি!

দেখা গেছে উচ্চবর্ণে জন্ম কিন্তু তাঁর না আছে লেখা পড়া, না আছে মাথা গোঁজার ঘর, আর অন্ন সংস্থানের কোন জমি জমাও নেই৷ সেই বলে না নামে তালপুকুর কিন্তু জলহীন ঘটি ও ডোবে না তাই অবস্থা৷ তাই বলা  হয় এ কেমন উচ্চবর্ণের চিহ্ণিতকরণ?

তাই এই যে সংরক্ষণনীতি এটাকে এক ধরণের শোষণ কি চলছে না? আর অন্যদিকে একধরণের  বঞ্চনার শিকার কি মানুষ হচ্ছেন না? এই সুযোগ সুবিধাগুলি পঞ্চায়েত স্তর থেকে সুনির্দিষ্ট পথে যাঁরা সুযোগ পাবার তাঁদের দিতে হয়৷ তাতে অভাবীগণ সুযোগ পান৷

এই সুযোগ একটি নির্দিষ্ট সময় পর্য্যন্ত ভোগ করার কথা উল্লেখ ছিল৷ আজন্মকাল নয়৷ সেটি পরে বংশোপরম্পরায় হয়ে গেছে৷ তাতে একদিকে বঞ্চনা বেড়েছে৷ আবার উঁচুনীচু জাত-পাতের ভেদাভেদে  হীনমন্যতাও বাড়ে৷ তাতে মানব সমাজের প্রগতি ব্যাহত হয়৷ সকল মানুষ ভাই ভাই, তাতে সমাজ শক্তিশালী হয়, মানুষের হৃদয় বড়ো হয়৷ কুসংস্কার দূর হয়৷ মনে রাখার দরকার সেই কবি চণ্ডীদাসের কথা---শুণরে মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই৷ কারণ মানুষই হলেন৷ সেই নব নারায়ণ৷ গণতন্ত্রে এটাই যদি না হয় তা হলে গণতন্ত্রটার অস্তিত্বটা রহিলো কিসে? জাত কি মানুষের গায়ে লেখা থাকে? আচরণে মানুষ আর অমানুষের পরিচয় পাওয়া যায়৷ গণতন্ত্র তখনই উন্নত ও সার্থক হতে পারে যদি সকল মানুষের সমান সুযোগ থাকে বেঁচে থাকার৷ প্রত্যেক মানুষকে অবশ্যই গণতন্ত্রে ৫টি জিনিস দিতে হবে৷

অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান, সেটা দীর্ঘ বছর গণতান্ত্রিক শাসনে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার দেবার ব্যবস্থা কী করেছেন? কখনোই নয়৷ দরিদ্রদের আরো দরিদ্রতে পরিণত করা হয়েছে শোষণের মাত্রা বাড়িয়ে, বঞ্চনা করে৷ তাই বহুভাসাভাষীর দেশ ভারতবর্ষকে স্বার্থা ন্বেষীরা হিন্দুও মুসলমান নামে টুকরো টুকরো করেছে৷ ভেদাভেদ সৃষ্টি করে রেখেছে৷ তার উপর জাত পাতের  বিভেদ বিশেষ করে হিন্দুদের মধ্যে উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণ এ কেমন কথা! আজও চলবে সেই অতীতের জাত-পাতের কুসংস্কারের অভিশাপ!

এ কেমন গণতন্ত্র! আজকের সমাজে যদিও সমাজকে ধবংস করেছে রাজনৈতিক নেতারা৷ কিন্তু আজও দেবতার আলয়ে সকলের প্রবেশ অধিকার নেই? যে কেমন দেবতা? আর যারা তিলক ফোঁটা কেটে বিধান দিয়ে থাকে তারা কেমন ধরণের মানুষ! তাদের নিয়ে গণতন্ত্র! হায়রে এদেশের গণতন্ত্র আর হায়রে এদেশের  দেশ নেতা! মন্দির, মসজিদ নির্মাণে কোটি কোটি টাকার চাঁদা ওঠে আজকের দিনে, কিন্তু জীবন্ত দেবতা মানুষ, অন্যান্য জীবজন্তু গাছপালা রক্ষার জন্য কারোরই প্রাণ  কাঁদে না৷ এ কেমন সভ্যতা এর জন্য দায়ী কিন্তু গণতন্ত্রের ধবজাধারী শাসকগণ৷ যারা শুধু নিছক দলবাজিতে সদাব্যস্ত৷ তাই মানুষ সচেতন হোন৷