দরিদ্রতম গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনে জয়লাভে লক্ষ লক্ষ টাকা মাঠ ভরাট এতে খরচটা কী সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়?

লেখক
প্রভাত খাঁ

১৩০ কোটি মানুষের বিরাট দেশ ভারত,বর্তমানে  সেখানে চলছে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থায়গণতন্ত্রে নামে জঘন্য, দলতন্ত্র যা দেশবাসীর নাভিশ্বাস তুলছে৷ গত ১৯৪৭ সাল থেকে ইংরেজের বিদেশী শাসনের অবসানের পর   এদেশের রাজনৈতিক নেতারা হাল ধরেছেন৷ দেশে সাধারণ তন্ত্রের শাসন  শুরু হয় ২৬শে জানুয়ারী ১৯৫০ সাল থেকে৷ বর্তমানে সারা ভারতের জাতীয় দল বলতে যা বোঝায়  তার অস্তিত্ব প্রায় নেই বল্লেই চলে৷ সর্বভারতীয় দলগুলি তাদের অস্তিত্ব হারিয়ে  ফেলেছে৷ বাকি দলগুলির অনেকগুলি আঞ্চলিক দল বা জাতীয় দল ভেঙ্গে গড়ে ওঠা ছোট ছোট দল৷ আর জাতীয়  দল হিসাবে অস্তিত্ব বজায় রেখেছে, জাতীয় কংগ্রেস আর বিজেপি৷

এই দুটো  দল অন্যান্য আঞ্চলিক দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কেন্দ্র শাসন চালিয়ে  যাচ্ছে৷ তবে  কংগ্রেস বর্তমানে গদীচ্যুত হয়েছে৷ বিজেপি  কেন্দ্রে শাসনে আছে৷ তার প্রধান গুজরাটের মাননীয় নরেন্দ্রমোদী৷ এই মোদির শাসনে কয়েকটি কারণে সারা দেশের  কোটি কোটি মানুষের  নাভিশ্বাস উঠছে যেমন বড়ো নোট বাতিল, জি.এস.টি চরম বেকার সমস্যা যার কোন  সমাধান হয়নি৷  ধনীদের বাড়বাড়ন্ত, গরীবের  বেঁচে থাকার প্রায় সকল পথই বন্ধ৷ রান্নার গ্যাসের, কে.তেলের  দাম প্রচণ্ড বৃদ্ধি,পেট্রোল ও ডিজেলের  দাম বাড়ার কোন হিসাব নেই৷ তার উপর  এন.আর.সি এর মতো৷ কালা কানুনের আতঙ্ক৷ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষের দামের উপর কোন নিয়ন্ত্রন নেই৷ জীবন দায়ী ওষুধের  দাম এর চরমবৃদ্ধি৷ এছাড়া ধর্মমত নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িকতার বাতাবরণ  এর উঁকিঝঁুকি৷ আরো  অনেক কিছুর  উৎপাত৷ মুখ্যতঃ গণতান্ত্রিক বাতাবরণে উঁকি ঝঁুকি সহ আরো অনেক কিছুর উৎপাত৷ মুখ্যত গণতান্ত্রিক বাতাবরণের অবনতি৷

তার উপর ২০১৯ সাল এতে কেন্দ্রের  সাধারণ নির্বাচন৷ এই নির্বাচনকে ঘিরে আঞ্চলিক দলগুলি এককাট্টা হচ্ছে  নিজেদের  অস্তিত্ব রক্ষার কারণে৷

হতভাগ্য হতদরিদ্র জনগণ বর্তমানে বড়ই অসহায়৷ রাজনৈতিক দলগুলি  সংঘবদ্ধ হচ্ছে৷ যাতে একের বিরুদ্ধে  এক প্রার্থী দাঁড় করিয়ে জনমত গ্রহণ করতে পারা যায়৷ এটা  রাজনৈতিক  দলের নির্বাচনে  রণকৌশল৷ অন্যদিকে  কেন্দ্রের শাসকদল ও তাঁদের  রণকৌশল তৈরী করছে গদী সামলাতে৷

তাই নির্বাচনে পালের হাওয়া বহিছে৷ সবদলই হুংকার ছাড়ছে৷ অদ্যাবধি  যা দেখা গেল তা হলো  রাজনৈতিক দলগুলি  গদীর স্বার্থে লড়াইয়ে তৈরী  হচ্ছে  বোটারদের  আস্থাভাজন হতে, আর কেন্দ্রীয় সরকার ও ব্যস্ত গদী সামলাতে৷ জনগণ কিন্তু জীবন যন্ত্রণায়  কাতর৷  যা হয় প্রতিবার  তাই হচ্ছে কৃষিপ্রধান  ভারতে কৃষিঋণ মকুব করে ও তাদের স্বার্থরক্ষার  নানা প্রতিশ্রুতি  দিয়ে মন ভেজাতে  চাইছেন৷ এতে কোন স্তরের চাষী লাভবান  হচ্ছে সেটাই বড় প্রশ্ণ৷ প্রান্তিক চাষীর  কে কোন সুবিধা  কি হয়েছে  বা হচ্ছে ! যে দল গদীতে আসে তাঁরাই  মায়া কান্না জুড়ে  দিয়ে  বোট বৈতরণী পারের চেষ্টা করে থাকে৷ নজরে আসে সরকার ও বিরোধী পক্ষের রাজসূয যজ্ঞের তোড়জোড়, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে, বড়ো হাট বাজার অচল করে জনসভা, লোক জড়ো  করা, বিরাট প্যাণ্ডেল তৈরী করে বত্তৃণতার  ফুলঝুরি ছোটানো৷ অন্যদিকে রাতারাতি উন্নয়নের  বান বহিয়ে দেওয়া, নোতুন নোতুন শিল্পের প্রতিশ্রুতি দানে সরকারকে কল্পতরু হওয়া৷ নির্বাচন শেষে যদি জয়লাভ  হয় তাহলে কিছু কাজ হয়তো হবে তা না হলে শিলান্যাসের  স্থান জঙ্গলে পূর্ণ হবে৷ ইন্দিরাগান্ধীর আমলের  কতো শিলান্যাস যে পড়ে পড়ে কেঁদেছে তাঁর ইয়ত্তা নেই৷ যে সরকার হেরে যায় তাদের  অনেক  কাজ পরে আসা সরকার  বন্ধ করে দেয়৷ এটাই দলীয় বহুদলীয় শাসকদের  চরিত্রের একটা বিশেষ দিক৷

নির্বাচনটা হলো দলগুলোর নানা ধরনের  ফন্দি ফিকিরের তামাশা করে জনগণকে  ভাঁওতা দেওয়া৷ আর দলগুলির  চরম কর্মব্যস্ততা, রাজনৈতিক কলাকৌশল ও বাকচাতুর্য প্রকাশের মাধ্যমে অভিনয়ের ময়দান বিশেষ৷

কংগ্রেস দল তো বেশী বছর শাসন করেছে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিতে৷ এই দল একটি পুরোপুরি  পরিবার কেন্দ্রিক  দল৷  দেশের  সবচেয়ে  ক্ষতি হয়েছে  সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দেশ ভাগ করে  বিশেষ করে হিন্দুদের  হত্যা, লুন্ঠন,জন্মভূমি থেকে উদ্বাস্তু  ও বিতাড়িত করে তাদের  সবকিছু কেড়ে নিয়ে  পথের ভিখারী করে দেওয়া হয়েছে৷

একথাটি মানবতার  মূর্ত্ত প্রতীক, মহান বিপ্লবী নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু হয়তো উপলদ্ধি করেছিলেন৷ তাই এদেশের নেতাদের বার বার  তিনি অনুরোধ  করেন দেশ ভাগ করে  স্বাধীনতা কখনো নয়, কিন্তু  দুর্ভাগ্য তাঁরা বুঝতে চাননি৷ তাদের গদীর  লোভটা ছিল এতই বড়৷ দেশের সর্বনাশ তারা করে গেছে৷ আর বর্তমানে তাদেরই সাঙ্গ পাঙ্গ আত্মীয়স্বজন গদীর লোভে উন্মত্ত হয়ে দল ভাঙ্গাভাঙ্গি করে দেশের  সর্বনাশ করে চলেছেন৷ সেই ধনতান্ত্রিক  সমাজ ব্যবস্থায় অন্ধ সেবক হয়ে গণতন্ত্র কখনোই সার্থক হবে না, যত দিন  না অর্থনৈতিক স্বনির্ভরশীলতায় দেশের  জনগণকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সুপ্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে৷ তাইতো ভারতের কোটি কোটি জনগণ আজও শুধু শোষনের যাঁতাকলে  শোষিত হচ্ছেন৷

বর্তমানে মাত্র ১ শতাংশ  জনগণের  কাছে  ভারতের  সিংহভাগ  সম্পদ  আটকে  আছে  আর অতি গরিব তারা  যৎসামান্য সম্পদের অধিকারী এই যদি গণতন্ত্রের  করুণ ছবি  হয় তাহলে  দেশ উন্নয়নের পথে এগুবে কি করে? অত্যন্ত লজ্জার  কথা যৎসামান্য ব্যষ্টি যাঁরা  নেতৃত্বে আছেন  তাঁদের  দিকে তাকালে  দেখা যায়  যারা  রাজনৈতিক  নেতা, নেত্রী, শাসন ক্ষমতায়  আছেন  ও ছিলেন তাঁদের  অধিকাংশই কোটি কোটি টাকার  মালিক ও সম্পদের অধিকারী যেখানে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের পেটে অন্ন জোটে না৷ মাথা গোঁজার  ঘর নেই৷ এই ভয়ঙ্কর  বৈষম্য সেটা কবে ঘুচবে?  দেশের শাসকদলও  বিরোধী নেতৃবৃন্দের  সেটা  চিন্তা করার  সুযোগ ও সময় কি আছে?

মহান নেতাজী বলতেন--- ভারতকে যদি প্রকৃতই স্বাধীন  হইতে হয় তবে আমাদের শুধু রাজনৈতিক গণতন্ত্র পাইলেই চলিবে না, সামাজিক গণতন্ত্র  চাই, অর্থনৈতিক গণতন্ত্রও চাই৷ সেই নেতা আজ কোথায়? বর্তমান রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের স্মরণ আছে কী? না শুধু  গদীর লড়াই যে ব্যস্ত৷

তাই মনে হয়  নির্বাচনের  প্রাক্কালে শাসক ও বিরোধী  দলের প্রথম  ও প্রধান  কর্ত্তব্য জনগণকে  জানানো, তাঁরা জয়লাভ করে জনগণের জন্যে ও  দেশের কল্যাণে কি কি করবেন? সেইরূপ কাজের আন্তরিক হওয়া৷ গণতন্ত্রে জাত-পাত ধর্মমতের  ভেদাভেদ দূরে রাখা৷ নরনারী নির্বিশেষের সকল মানুষের  অধিকার  এক হওয়া৷ কিন্তু  এইসব তো কিছুই নেতাদের  কর্মপ্রচেষ্টায় লক্ষ্য করা যায় না৷ কেবল পরস্পরের প্রতি কুৎসা, কটূক্তি, উত্তেজনামূলক  বক্তব্য যা সংবাদ পত্র  টিভিতে   প্রায়ই জনসমক্ষে আসে৷ গণতন্ত্রে এতো কিসের উত্তেজনা  নেতানেত্রীদের  কথাবার্র্ত্তয়  ধৈর্য্য, সংযম ও মানবিকতার স্পর্শ না থাকলে দেশ উন্নত ও শিক্ষিত হবে কি করে?