দুঃখের আঁধার পেরিয়ে

লেখক
কনিকা দেবনাথ

সালটা ১৮৮৩, পোল্যাণ্ডের একটি দরিদ্র পরিবার৷ বাড়ীর সকলেই আনন্দে আত্মহারা৷ বাড়ীর সবচেয়ে ছোট্ট মেয়েটি স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় সর্বাধিক নম্বর পেয়ে পাশ করেছে৷ বাড়ীতে আদরের নাম  মানিয়া, স্কুলের খাতায় নাম মারিয়া স্ক্লোভোভস্কি৷ চার বোন ও এক ভাই, মানিয়াই সবার ছোট৷ আনন্দের মাঝে বিষাদ--- এই আনন্দ ভাগ নেবার জন্যে মা আজ আর এই পৃথিবীতে নেই৷ মা ছিলেন গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা৷ বাবা একটি স্কুলের দরজি শিক্ষক৷ যা বেতন তাতে সংসার চলে না৷ একমাত্র ছেলে ডাক্তারী পাশ করে বসে আছে৷ অর্থের অভাবে ডাক্তারখানা খোলা হচ্ছে না৷ কি করবে মানিয়া৷ মেজদি ব্রোনিয়ার সঙ্গে শলা-পরামর্শ হতো, সেও প্যারিস চলে গেছে৷

এই সময় পোল্যাণ্ডের কিছু বিজ্ঞানী একটি ভাসমান বিশ্ববিদ্যালয়ে  বিজ্ঞানচর্র্চ করতেন৷ মানিয়া যুক্ত হলেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ সেখানেই মানিয়ার বিজ্ঞান চর্র্চ শুরু৷ কিছুদিন পর প্যারিস থেকে মেজদি ব্রোনিয়ার চিঠি এলো৷ সে তখন বিয়ে করে প্যারিসে স্থিত হয়েছে৷ ছোট বোনকেও নিয়ে যেতে চায়৷ চিঠি পেয়ে আনন্দে আটখানা মানিয়া৷ প্যারিসের সোরবন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেক স্বপ্ণ দেখে সে, মেজদির চিঠি পেয়েই রওয়ানা দিল প্যারিস, আর ফিরে তাকাতে হয়নি মানিয়াকে৷ সেখানে গিয়ে ভর্ত্তি হলেন তাঁর স্বপ্ণের বিশ্ববিদ্যালয়ে! সেখানেও পরীক্ষায় মানিয়াই প্রথম হলেন৷ বিবাহ করলেন পদার্থ বিজ্ঞানের এক তরুণ অধ্যাপককে৷ শুরু হল বিজ্ঞান সাধনা৷ বিজ্ঞানের গবেষণায় ডুব দিলেন দুজনে৷ আবিষ্কার করলেন তেজষ্ক্রিয় ধাতু মনে পড়ল নিজের জন্মভূমি পরাধীন পোল্যান্ডের কথা৷ ধাতুটির নাম দিলেন পলোনিয়াম নিজের জন্মভূমিকে স্মরণ করে৷ এগিয়ে চলে গবেষণার কাজ৷ এবার আবিষ্কার করলেন রেডিয়াম৷ এই রেডিয়াম বৈজ্ঞানিকদের অনেক ধারণা বদলে দিল৷

১৯০৩ সালে স্বামীর সঙ্গে যৌথভাবে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল  পেলেন বিশ্বের প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী ১৯১৬ সালে আবার রসায়ন বিজ্ঞানে নোবেল পেলেন৷ তার আগেই এক দুর্ঘটনায় স্বামীকে গত হয়েছেন৷ এতক্ষণ পাঠক ভাবছেন কে এই মানিয়া৷ ইনি বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক মাদাম কুরী, স্বামী পিয়ের কুরী৷ পরবর্তী কালে মাদাম কুরীর কন্যা ইরেন কুরী ও জামাতা জোলিও কুরী পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পান, একই পরিবারের চারজন পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল জয়ী৷ মাদাম কুরী দেখিয়েছেন অধ্যবসায় থাকলে দুঃখ-দারিদ্র্য প্রতিভার প্রতিবন্ধক হতে পারে না৷