দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে জেলখানাই বাড়বে

লেখক
প্রবীর সরকার

সংবাদে প্রকাশ বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান মন্ত্রী মিঃ মোদী বলেছেন যে, দুর্নীতিগ্রস্তদের জেলে পোরার ট্রেলার শুরু৷ জনগণের কিন্তু প্রশ্ণটা আরও ব্যাপকতা হ’ল যে দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে৷ সরকার কটি দুর্নীতিগ্রস্তকে জেলে পুড়তে পারবে৷ তাই বলতে হয় সারা দেশটাকে জেলে পরিণত করতে হবে৷

মনে পড়ে এই দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁর শাসনকালে রাতের অন্ধকারে লোকসভাকে না জানিয়ে ১৯৭৫ সালের জুন মাসে রাষ্ট্রপতি ফকিরুদ্দিন আলি আহমেদকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে অভ্যন্তরীর জরুরী অবস্থা জারী করে সারা দেশকে প্রায় জেলখানায় পরিণত করে ছাড়েন৷ সেদিন গণতন্ত্র ছিল না কারণ মিশা, ডি.আই.আর., আইনে থাকে৷ তাকেই জেলে আটক করে রাখে৷ সেই ইন্দিরাও জনগণের সুপ্রিম কোটের বিচারে গদী হারিয়ে পথেই বসে পড়েন৷ এমনকি বিচারে তাঁকেও জেলে যেতে হয়৷ এমনকি মর্মান্তিকভাবে ভাবে তাঁরই প্রহরীর বুলেটে প্রাণ হারান---এটাই নিষ্ঠুর প্রকৃতির বিধান৷ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দীর্ঘ ৭২ বছরের শাসনে যারা শাসনে এসেছেন তাঁরা কবে কোন্ রাজনৈতিক দলের শাসনে দেশের হতভাগ্য কোটি কোটি জনগণ উন্নতির মুখ দেখেছেন তাঁদের শাসনকালে৷ এর সদুত্তর কি কোন শাসক দল দিতে পারেন৷ দুর্নীতিটাই তো এদেশের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় অলঙ্কার, যখন নির্বাচন আসে তখন সব দল প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেয়৷ কিন্তু শাসনে যাওয়ার সবই ভোঁ ভোঁ৷ বর্তমানে দেশ চরম অর্থনৈতিক ম্দায় কাতর, দেশ চরম বেকার সমস্যায় জর্জরিত, বাজার দর আকাশছোঁয়া৷ ঘরে ঘরে শিক্ষিত, অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত তরুণ-তরুণী বেকার৷ সরকার কি রাজ্য আর কি কেন্দ্র শুধু জনগণকে মিথ্যা আশার বাণী শোনাচ্ছেন৷ ওদিকে রেলে, ব্যাঙ্কে, সামরিক বিভাগে, রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনে, শিক্ষা বিভাগে লক্ষ লক্ষ পদ খালি হয়ে পড়ে আছে৷ আর উপযুক্ত কর্মীর অভাবে দেশের সব দফতরই অচল ও অকেজো৷ পুরাতনদের চাকরীর বয়েস বাড়ানো হচ্ছে, নতুন কর্মী নেওয়া হচ্ছে না৷ রাজ্যগুলির অবস্থা শোচনীয়৷ প্রবল বন্যায় দেশ জলমগ্ণ৷ রাস্তাঘাট অচল৷ যান চলাচলে জনগণকে মরণ-ফাঁদে পড়তে হচ্ছে৷ এই সমস্যা সংকূল পশ্চিমবঙ্গে অধিকা৩শ সেতু বিপজ্জনক হয়েপড়েছে৷ মাটির নীচের টিউব রেলপথের ধবংসা নামায় কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বহু বাড়ী ধবসে পড়েছে৷ কেন এমন হ’ল? নামে শাসন আছে কিন্তু সঠিকভাবে দেখাশুনো হচ্ছে না৷ কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর গদীর লক্ষ্যে দলীয় কোন্দল, বোমাবাজিটা, কাটাকাটিটা বন্ধ নেই! এ কেমন গণতান্ত্রিক শাসন? গণতন্ত্রের মূল লক্ষ্যটা হ’ল দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, বেকার সমস্যা দূর করা, নাগরিকদের সেবা দেওয়া, তা না করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বিদেশী তাড়নে এন আর সি-র কালাকানুনটাকে যেটা কংগ্রেসী আমলে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী গত ১৯৮৫ সালে বাঙলাদেশী বিতাড়নের প্রবণতা উসকে দিয়ে এক চুক্তি সম্পাদন করেন৷ অসমেব আঞ্চলিক দলের চাপে৷ এটাকেই পশ্চিমবাঙলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তীব্র সমালোচনা করে বলেন, গান্ধীজী ও নেহেরুর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন রাজীব গান্ধী৷ সেই চুক্তি মোতাবেক বাজপেয়ীর বিজেপি সরকার সুযোগ নেয় গত ২০০৩ সালে ১৪য় ধারাকে সংযোজনের এন আর সি কালাকানুন ঘটনে৷ পরে এটাকে কার্যকরী রূপে পরিণত করে এই মোদী সরকার সুপ্রিম কোর্টের অনুমতিক্রমে৷ আশ্চর্য বিষয় হ’ল তখন সবাই চুপচাপ ছিল৷ এখন এই আইনে সারা দেশে একটা আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে সরকার৷ এতে ইউ এন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতকে ভাল চোখে দেখছেন না৷ মিঃ গ্র্যাণ্ডি ভারতকে অনুরোধ করেছেন কোনও মানুষ যেন নাগরিকত্বহীন না হয়৷ তাই মিঃ মোদীর স্বচ্ছ ভারত ঘটনে এই ধরণের কালাকানুন তো সারা পৃথিবীতে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে না? তিনি ১০০ দিনের কাজের ফিরিস্তি দিয়েছেন কিন্তু গত পাঁচ বছরের কাজের ভারত কতটা আর্থিণ্ডলক ও সামাজিক দিক থেকে এগোতে সক্ষম হয়েছে সেটা তো জনগণই অনুভব করছে৷ এলাকার নাম পাল্টে তো ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে৷ দক্ষিণে টিপুর মত দেশপ্রেমিক শাসককে অসম্মান কি করা হয়নি? যিনি সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজের সঙ্গে সংগ্রাম করে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে গেলেন আর ফরাসীদের সঙ্গে সন্ধি করে এক সাহসী ভারতীয়ের নজির রেখেছিলেন৷ টিপু বহুদিন বহু হিন্দু মন্দির স্থাপনে সাহায্য করেছেন এমনকি অনেক ক্ষেত্রে হিন্দুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ যার নজির দক্ষিণের কর্ণাটক রাজ্য বিদ্যমান৷ ভারত একটি ধর্মমত নিরপেক্ষ রাষ্ট্র৷ এখানে সাম্প্রদায়িকতার স্থান নেই৷ কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে---নির্বাচনে জয় লাভের জন্যে সব দলই কোনও না কোনও ভাবে বিশেষ ধর্মমতের মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছে৷ এটা একটা মারাত্মক  ভুল৷ শাসক দল কোনদিনই বিশেষ করে এদেশে শাসনে জনগণের কাছে নিজেদের ব্যর্থতাকে স্বীকার করেননি৷

আজ এমনই দূরবস্থা---এদেশে ১৩৩ কোটি মানুষের কাঁধে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণের বোঝা৷ বিজেপির কাছে মানুষ অনেক আশা করেছিল৷ কিন্তু আর্থিক মন্দায় চরম বেকার সমস্যায় দেশ আজ পঙ্গু৷ গরীব মানুষের আর্থিক সংকটের সীমা নেই৷ বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে বড় নোট বাতিল, জি.এস.টি.-র মত আইন দেশকে আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে পঙ্গু করে ছেড়েছে৷ কেন্দ্র সরকারের রাজ্যগুলিকে আর্থিক সাহায্যে পরিমাণ বিশেষ করে অবিজেপি রাজ্যগুলি একেবারে যতসামান্য৷ তাতে পশ্চিমবঙ্গের মত সমস্যা সংকূল রাজ্য চরম আর্থিক সংকটে কাতর৷

মোদ্দা কথা হ’ল বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারকে অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের দিকে নজর দিতে হবে৷ ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতগুলি যাতে স্বনির্ভর হয় সেদিকে জরুরী ভিত্তিতে কাজ করতে হবে৷ কৃষিকে শিল্পের মর্যাদা দিতে হবে৷ গ্রামস্তরে কৃষিজাত দ্রব্য যাতে শিল্পের মর্যাদা পায় সেদিকে নজর দিতে হবে৷ রপ্তানি বাড়াতে হবে ভোগ্যপণ্যের৷ কারণ আজ পৃথিবীতে খাদ্যদ্রব্যের অত্যধিক অভাব৷ খনিজ দ্রব্য কোনও অবস্থাতেই বাইরে পাঠানোটা ঠিক নয়৷ ভবিষ্যতে এই খনিজের অভাব দেখা দিলে পরবর্তী প্রজন্ম বেকায়দায় পড়বে৷ রেশনিং ব্যবস্থাকে ন্যায্যমূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় বিশেষ বিশেষ কয়েকটি জিনিস নিম্নমধ্যবিত্তদের ও গরীবদের মধ্যে বণ্টনের ব্যবস্থা করতে হহবে৷ বর্তমানে রেশনিং ব্যবস্থা অপ্রতুল৷ এগুলির দিকে নজর দিতে হবে৷ সারা ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিকে দলমত নির্বিশেষে কৃষিপ্রধান ভারতের কৃষির ওপর সর্বাধিক নজর দিকে হবে৷ ভূমি সংস্কার জরুরী৷ বহু কৃষিজাত জমি রাস্তাঘাট, শিল্পে, নগর স্থাপত্রেন ব্যয় হয়েছে৷  লোকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বাসস্থান ও খাদ্য কর্মসংস্থানের বৃদ্ধি ঘটানো সরকারের ও বেসরকারী স্থানীয় ব্যষ্টিদের দায়িত্ব৷ আর সবচেয়ে জরুরী ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে ও বণ্টনে গ্রাম পর্যন্ত দরকার সমবায়কে অগ্রাধিকার দেওয়া৷ কারণ অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ চাড়া নতুন স্বচ্ছ ভারত গড়াটা সম্ভব নয়৷ এটা নিছক রাজনৈতিক শ্লোগান হয়ে থাকবে৷ নিছক মিথ্যে শ্লোগানে মানুষের অভাব মিটবে না৷ তাই আজ প্রকৃতি সৎ নীতিবাদী সমাজ সেবকদের অতীব প্রয়োজন৷ ভারতের বহু ভাষাভাষীর দেশে সকলের কল্যাণে৷

অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে বলতেই হয় দীর্ঘ ৭২ বছরে এদেশের রাজনৈতিক দল যেগুলি প্রায় সবকয়টি দলছুট দল তারা নিছক গদীর লড়াইয়ে, নিছক দলীয় কোন্দলে দল ভাঙ্গাভাঙ্গিতে ব্যস্ত৷ এটা মোটেই কল্যাণের পথ নয়, বরং এটা দেশকে আরো অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাবে৷ অর্থনৈতিক বিপর্যয়টা ভারতের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক৷ দলগুলি শাসনে চরম ব্যর্থতার নজির সৃষ্টি করেছে৷ ফলে দেশ ডুবতে বসেছে৷ আজ রাজনৈতিক দলের ও দেশের জনগণের উচিত ত্যাগ, সেবা, নিষ্ঠা, সততা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ নেওয়া৷ সেটার কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না৷ তাই সেই মহান ভারত গড়া কীভাবে হবে ভারতের সেই মহান আধ্যাত্মিক ভাবনা আজ কোথায়? এটা বহু মুনিঋষিদের দেশ৷ এটা মিথ্যাচারিতা, লুঠতরাজের দেশ তো নয়৷ এটা মহান ভারতবর্ষেরই খণ্ডাংশ৷ সেই মহান ভারত গড়ার কথা সকলকে ভাবতে হবে---সেবার দ্বারা, নিষ্ঠা ও ত্যাগের দ্বারা৷ ইন্দিরার ‘গরীবি হটাও’তে দারিদ্র্যতা কি দূর হয়েছে৷? স্বচ্ছ ভারত গড়ার শ্লোগানে হবে না৷ তারা আজ কোথায়? যার সত্যই আজ সেই মহান ভারত গড়বেন? নোংরা দলবাজিতে তারা অংশ নেবেন না৷ তাই আজ সৎ নীতিবাদী দেশসেবকদের অতীব প্রয়োজন৷ তারই ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে দেশের প্রকৃত সৎ, নীতিবাদী সমাজ সেবকদেরই৷ এটা বর্তমানের দলছুট নেতা-নেত্রীদের দ্বারা সম্ভব নয়৷