এন আর সি-র থাবা

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

এক--- ধীরাজ চন্দ্র৷ সেনাবাহিনীর চাকরী থেকে অবসর নিয়ে এখন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দমকল বিভাগে কর্মরত৷ থাকেন উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কাঁচরাপাড়ায়৷ ধীরাজবাবুর পিতা  অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক৷ তিনি অসমে সরকারী স্কুলের শিক্ষক ছিলেন৷ আদি বাসিন্দা অসমের মারিগাঁাও জেলায়৷ ধীরাজের ঠাকুরদা ১৯৫৪ সালের কেনা জমির দলিল, ১৯৬৫ সালের ভোটার লিস্টে থাকা নামের তালিকা, ধীরাজের বাবার স্কুল-কলেজের নথি, ধীরাজের উচ্চ মাধ্যমিক পাশ ও স্নাতক হওয়া সবই ১৯৭০ সালের আগে৷ সেনাবাহিনীর চাকরী সহ সমস্ত নথি জমা দিয়েও ধীরাজ ও তার পরিবার আজ বিদেশী৷

দুই---অপরূপা মুখোপাধ্যায়৷ পিতা পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক---নাম অপূর্ব মুখোপাধ্যায়৷ অপরূপা দেবীর মা অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় দুর্গাপুর পুরসভার ডেপুটি মেয়র৷ অপরূপা দেবীর ঠাকুরদা প্রয়াত আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায় ছিলেন কংগ্রেসের সাংসদ৷ অপরূপা দেবী এন আর সি-র কোপে পড়ে আজ বিদেশী৷ কারণ বিবাহ সূত্রে তিনি অসমের গুয়াহাটীর বাসিন্দা৷ যদিও তাঁর স্বামী হিমাংশু বর্মন এন আর সি-তে নাম নথিভুক্ত হয়েছে৷ তবু অপরূপ দেবী ও তাঁর ছেলে বিদেশী৷ আজব এন আর সি!

তিন--- অবিনাশ চন্দ্র দেব৷ অসমের তেজপুরের বাসিন্দা৷ ১৯৭০ সালের মে মাসে বায়ূসেনায় যোগ দিয়েছিলেন৷ সাহসিকতার সঙ্গে সংগ্রামের জন্যে তিনটি পদকও পেয়েছিলেন৷ সেই দেব পরিবার এখন বিদেশী৷ দেওয়ালে ঝোলানো পদকগুলো এন আর সি-র কোপের ক্ষততে নূনের ছিটে দিচ্ছে৷ দেব পরিবার পদক ফিরিয়ে দেবার কথা ভাবছেন৷

চার--- অসমের জোরহাটের বাসিন্দা চিত্তরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়৷ ১৯৪৮ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে পরেই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন৷ সেই চিত্তরঞ্জন বাবুর পরিবারও আজ বিদেশী৷

পাঁচ--- বিদেশী ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করে অসমে প্রাণ দিয়েছিলেন মদন মল্লিক, মৃণাল ভৌমিকরা৷ অসম সরকার তাদের জাতীয় শহীদের মর্যাদাও দিয়েছিলেন৷ তাদের পরিবারের হাতে পাঁচ লক্ষ টাকা ও স্মারকপত্রও দিয়েছেন৷ সেই পরিবারগুলোও আজ বিদেশী৷

তালিকা আরও অনেক দীর্ঘ৷ সেই তালিকা না বাড়িয়ে একটি প্রশ্ণ---দেশ নেতারা বড়ো গলা করে চিৎকার করে বলছেন ’৭১ সাল ভিত্তি বর্ষ৷ কিন্তু উপরের উল্লিখিত সবার কাছেই ’৭১ সালের আগে থেকে বসবাসের নথিপত্র আছে৷ তারপরেও তাঁরা বিদেশী৷ তাহলে ভিত্তি বর্ষ কি সাল না একটি জনগোষ্ঠী? তবে অসমের মন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা হিন্দুদের আশ্বাস দিয়েছেন মোদী, অমিত শা আছেন---চিন্তা করবেন না!