গণতন্ত্রে স্বৈরাচারিতার স্থান নেই ---জনগণই জবাব দেবে

লেখক
প্রভাত খাঁ

আজ দীর্ঘবছর হয়ে গেল ভারতের মতো কোটি কোটি মানুষের দেশে চরম আর্থিক ও সামাজিক দিকে আকাশ পাতাল বৈষম্য  অদ্যাবধি কিছুটা নিরসন হল না তার সদুত্তর যাঁরাই শাসনে আসছে তাঁরাই দিতে সক্ষম হচ্ছে না কেন? এর উত্তর খুঁজতে হবে সেই অতীতকালে যখন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয় সেই সময় থেকে অদ্যাবধি যাঁরা শাসনে এসেছেন তাঁদের বিষয়ে নিরপেক্ষ সমীক্ষা করা৷ এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত হয় সেই অখণ্ড বাংলায় যার রেস সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে৷

এদেশে দেখা যায় সেই মধ্যযুগ থেকে যে বিদেশী আক্রমন হয়েছে তাকে প্রতিহত করার শক্তি যে এদেশের শাসকদের ছিল না তা নয়, কিন্তু দেশীয় রাজাদের কলহ শত্রুতা দেশকে রক্ষায় এক হয়নি সেই কারণের সঙ্গে ধর্মন্ধতার মতো অভিশাপ ক্ষতি করে৷ যার  জন্য পৃথ্বীরাজ ২য় তরাইনের যুদ্ধ হেরে যান ১১৯২ খ্রীঃ৷ সেদিন যুদ্ধ  ছিল মাটির ওপর বিশাল রণক্ষেত্রে, সেখানে গরুর পালকে  সামনে এনে  ভারতীয় সৈন্যদের গোহত্যা করা থেকে বিরত করে বিদেশী মুসলমান আক্রমণকারীরা জয়লাভ করে৷ দিল্লির সিংহাসন চলে যায় মুসলিমদের হাতে৷ মুসলমান রাজত্ব আরম্ভ হয়৷ এই যুদ্ধের নায়ক ছিলেন মহম্মদ ঘোরী৷ মহম্মদ ঘোরী কুতুবউদ্দিন আইবকের  হাতে শাসনভার দিয়ে দেশে ফেরেন৷ ইনি ভারতে দাস বংশের প্রতিষ্ঠা করেন৷

এই দাসবংশের সুলতানগণ দিল্লি শাসন করেন৷ তাঁদের পর খলজী ও তুঘলক বংশের সুলতানগণ দিল্লি শাসন করেন৷ কিন্তু এই শাসনে হিন্দুদের প্রতি তেমন ব্যবহার ভালো ছিল না৷ তাই তারা রাজত্ব হারায় তৈমুরলঙের বংশোধরদের কাছে৷ ১৫২৬ খ্রীঃ তৈমুরের বংশোধর পাণিপথের যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদীকে পরাজিত করে দিল্লি অধিকার করেন জহিরুদ্দিন মহম্মদ বাবর৷ ইনি বাদশাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা৷

এই বাবরের বংশোধরগণ দীর্ঘবছর দিল্লি শাসন করেন৷ এঁরা রাজত্বকে সারা ভারতে বাড়িয়ে দেন৷ এই মুসলমান আমলে মারাঠা ও শিখ সম্প্রদায় আন্দোলন করেন৷ শিবাজী ও তেগবাহাদুর শিখ নেতা স্মরণীয়৷ কিন্তু ২য় বাহাদুর শাহ হলেন মোগল সাম্রাজ্যর শেষ বাদশাহ৷ ইংরেজ সিপাহী বিদ্রোহের সময় এঁনাকে ব্রহ্মদেশে চালান করেন৷ রেঙ্গুঁনে  বন্দী থাকেন৷ সিপাহী বিদ্রোহ হয় ১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দে৷ কিন্তু ইংরেজ এদেশের শাসনে ছিল ১৯৪৭ এর ১৫ই অগাষ্ট পর্যন্ত৷

স্মরণে রাখতে হবে সাধারণ মানুষ সংঘ বদ্ধ ছিল না আর রাজনৈতিক সচেতনটাও সকলের মধ্যে ছিল না৷ বিদেশী ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের শাসন ছিল৷ কিন্তু ইংরেজ আমলে পৃথিবীর এগিয়ে যায় শিক্ষায়, জ্ঞানবিজ্ঞানে৷ এদেশের বুকে ইংরেজ রাজত্ব করে ও একটা আধুনিক সাম্রাজ্য গড়ে তোলে সারা ভারতবর্ষে৷ শিক্ষার বিস্তার হয়৷ পৃথিবীর অন্যদেশের সঙ্গে এদেশের বিজ্ঞানের উন্নতিতে সম্পর্ক ও  যোগাযোগ বাড়ে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে সারা পৃথিবী থেকে ধাপে ধাপে বিদেশী শাসন ধবংস হয়৷ ভারতবর্ষের বুকে  স্বদেশী আন্দোলন অহিংস সহিংস প্রায় পাশাপাশি চলে৷ শেষ ইংরেজ হিন্দুও মুসলমানদের মধ্যে দেশকে ভাগ করে স্বাধীনতা দেয় সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে৷ তাতে দেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়৷ দেশের রাজনৈতিক দল কংগ্রেস মুসলীমলীগ পাকিস্তান ও ভারত যুক্তরাষ্ট্র হিসাবে ভারতবষর্কে খণ্ডিত করে দেয়৷ কিন্তু দেশভাগের কুফলে ভারত  চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ হয় বাঙলার পূর্বাঞ্চলে৷ আর ভগ্ণ খণ্ড রাজ্য হিসাবে রহে যায় পশ্চিমবাঙলা৷ নেতাজী চেয়েছিলেন ইংরেজকে যুদ্ধে পরাজিত করে ভারতবর্ষ থেকে তাড়াতে  ও দেশের পূর্ণস্বাধীনতা৷ তা ভাগ্যে জোটেনি আমাদের৷ মনে রাখা দরকার ইংরেজ চলে যায়, কিন্তু রেখে গেল তাদের শাসন পদ্ধতি  ও আইন কানুন৷ তাতে কিছু সংস্কার হয়েছে মাত্র৷ আমাদের  সংবিধান তৈরী হয় ও ১৯৫০ এর ২৬শে জানুয়ারী বলবৎ হয়৷ বিনা রক্তপাতে আমরা স্বাধীন হইনি৷ তবে সে রক্তপাত ছিল সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে হিন্দু ও অমুসলমান বিতাড়ন পাকিস্তান থেকে৷ সেই কোটি কোটি বিতাড়িতরাই উদ্বাস্তু বিতাড়িত বাঙালীরা ভারত যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী বাঙালী বলে অসমে আশপাশে নির্যাতিত হচ্ছে মহান (?) ভারতে! আজ এদেশে যে শাসন চলছে সেগুলির অধিকাংশই হলো পুরাতন রাজনৈতিক দলের দলছুট দল যেমন সোনিয়া কংগ্রেস, কমিউনিষ্ট দলের দলছুট সিপিএম,জনতাদলের দলছুট বিজেপি, এছাড়া আরো অনেক দল আঞ্চলিকক্ষেত্রে রয়েছে৷ নামবৃদ্ধি করলুম না৷ তবে ভারতের ঐক্য সংহতি রক্ষায় সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলেই ভারতের যুক্তরাষ্ট্রকে ঘোষিত করে গেছেন সংবিধান প্রণেতারা৷ তবে সেই বিষাক্ত সাম্প্রদায়িকতা থেকে বেরুতে পারেনি অধিকাংশ আঞ্চলিক ও দল ছুট দলগুলো৷ তাইতো ৭২ বছর পরে এতে এসে এদেশের গণতন্ত্র একটা চরম ব্যর্থ সরকারের অন্তর্গত হয়েই প্রতিভাত হচ্ছে৷ দেশ আজ চরম মন্দার শিকার, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের দিকে সরকারের দৃষ্টি নেই! সারা দেশে আই শৃঙ্খলার  চরম অবণতি৷ নারী নির্যাতন চরমে! গদীর মোহে রাজনৈতিক দলগুলো সদাব্যস্ত৷ বর্ত্তমানে শাসকদল গদীলাভে ঘোড়া বেচা কেনাতে ওস্তাদ আর নির্বাচনের ক্ষেত্রেও দুর্নীতিটা বাদ যায় কি?

ধীরে ধীরে দেশের গরিব মানুষ চরম শোষণের ধাক্কায় করের বোঝায় একেবারে ধরাশায়ী৷ কিন্তু সরকারের রাজকর্মচারীরাই  মনে হয় একমাত্র দেশের নাগরিক, কারণ তাদের বেতন মাসে মাসে বেড়েই চলেছে৷

সাধারণ মানুষ কিন্তু অর্দ্ধাহারে অনাহারে যে কাতরতার উপর সি.এ.এ বিলপাশ অনেক উপজাতি বঞ্চিত, আর মুসলমানগণ অবহেলিত কারণ তারা বিলে উল্লেখিতই নয়৷ এরফলে সংবিধান বিরোধী বিলের আইনের স্বীকৃতিতে তারা মানসিক দিক থেকে ক্ষুব্ধ৷

মোদ্দা কথা হতভাগ্য মানুষ কি করে বাঁচবে তার সমস্যা সমাধান  না করে সরকারের প্রধান কাজ হলো নাগরিক আইন সংস্কার করা! এই বিলতো আগের সরকার করে গেছেন৷

তাহলে আবার কি কারণে সংস্কার? কাজের কাজ কিছু নেই কেবল ফালতু কাজে ব্যস্ত! এই বিল সংশোধনে ইউ.এন.ও আর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র যারা গণতান্ত্রিক এর ধারক তারাও ক্ষুদ্ধ৷

সুপ্রিমকোর্টে জনস্বার্থ মামলা জমা পড়ছে কয়েকগণ্ডা! এতো তাড়াতাড়ি বিল পাশও তাতে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরও হয়ে গেছে৷ সব ব্যাপারে কিছুটা চিন্তাভাবনা করাটা দরকার কারণ এসব মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা৷ এদিকে শোণা যাবে পশ্চিম বঙ্গে  আমাদের রাজ্যপাল কয়েকটি বিলে স্বাক্ষর করতে ভেবেই নাকি চলেছেন৷ কেন্দ্রেরও রাজ্যের এতো তফাৎ! রাষ্ট্রপতি কিন্তু সি.এবিতে স্বাক্ষর এসবের আসল কারণটা যে কি সেটা কিন্তু জনগণের মাথায় আসে না! কারণ তাদের তো আজ যে দশা তাতে মাথায় মাথা নেই৷

মনে পড়ে সেই রাশিয়ার নেতাদের উক্তি---স্বাধীনতার জন্য তারা সন্তানদের হারিয়েছেন! কিন্তু ভারতেরযে সাম্প্রদায়িকতার  ভিত্তিতে ইংরেজের স্বাধীনতা দেওয়া তার অনেক তফাৎ! যাঁরা শাসনে এসেছেন তাঁদের অনেকেরই জন্ম অনেক পরে৷ তাঁদের মনে হয় গদীর স্বার্থটা বেশী, তাই তাঁরা যা ইচ্ছা তাই করে চলেছেন কারণ সংবিধানে নাগরিকদের ‘‘রিকল’’ বা রেফারেন্স ডাক এর অধিকার বোটারদের দেওয়া হয়নি৷ পাঁচবছর তাঁরা বোটে জিতে যা ইচ্ছা তাই করেছে৷ জনগণ হাঁ করে চেয়ে থাকে৷ দেশবাসীর সমস্যা সমাধান দরকার বলে মনে করে না৷  তবে  শাসনে যাঁরাই এসেছেন তাঁদের কেউই সমালোচনার ঊধের্ব নন৷ প্রবীণরা সবই জানেন ও দেখেছেন৷

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মাননীয় প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন---‘‘আসনের সংখ্যা গরিষ্ঠতার জোরে দেশের মূল কাঠামোকে পাল্টানো যায় না৷’’

কে কার কথা শোণে? এটাতো একধরণের স্বৈরাচারিতা৷