কভিড-১৯-এর প্রেক্ষিতে মাইক্রোবাইটাম তত্ত্ব

লেখক
আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূ্ত

বর্তমানের করোনা বাইরাস সারা বিশ্বে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে ভাবে চীনের হুবেই  প্রদেশের উহান শহর থেকে শুরু করে সমগ্র চীন, ইতালি, স্পেন, ইংল্যান্ড, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ইরান , ভারত, পাকিস্তান সহ প্রায় সমস্ত রাষ্ট্রেই ছড়িয়ে  পড়েছে  ও প্রায় সর্বত্রই এর থেকে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে, এই পরিপ্রেক্ষিতে মহাসম্ভূতি ধর্ম গুরু শ্রী শ্রী আনন্দ মূর্ত্তিজী, যিনি মহান দার্শনিক ও যুগান্তকারী 'মাইক্রোবাইটাম' তত্ত্বের উদ্ভাবক শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকার নামেও সমধিক  পরিচিত, তাঁর তত্ত্বের ভিত্তিতে করোনা বাইরাসের মত মারাত্মক রোগজীবানুর হাত থেকে বাঁচার উপায় কী -এর উপর কিছু আলোকপাত করছি।

প্রথম কথা বলি, করোনা বাইরাস কী?

গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে হঠাৎই এই করোনা বাইরাস জনিত নতুন রোগের  (কোভিড-19) ব্যাপক প্রাদুর্ভাব হয়।প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সারা প্রথিবীতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে এই রোগে আক্রান্ত প্রায় ১৬ লক্ষ মানুষ , মৃত  প্রায় ৯৬ হাজার মানুষ।

যত দূর জানা যাচ্ছে, এই করোনা বাইরাসের যে প্রথম উৎস স্থল চীনের উহান শহর, এই শহর বিভিন্ন জীবিত ও মৃত (মাংস), বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী ও সামুদ্রিক খাদ্যের বিশেষ বিক্রয় কেন্দ্র রূপে বিশেষ ভাবে পরিচিত ছিল।এখানে মদের অবাধ ব্যবসা হত।ইন্টারনেট থেকে এ সব তথ্য জানা গেছে।

 এর আগে মুরগি বা বিভিন্ন পাখী থেকে  (বার্ডস ফ্লু), মাছ বা বিভিন্ন পশু মাংস বা বিভিন্ন ধরনের দূষিত পূতিগন্ধময় পরিবেশ থেকেও বিভিন্ন ধরনের বাইরাস ও তজ্জনিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব হয়েছিল বলে মানুষের অভিজ্ঞতা রয়েছে।করোনা বাইরাস এক ধরনের মারাত্মক রোগ সৃষ্টিকারী বাইরাস।

 এখন বাইরাস কী? এই বাইরাস অতি ক্ষুদ্র এক ধরনের রোগ জীবাণু।এগুলো কি জীবিত সত্তা? বৈজ্ঞানিকদের এ পর্যন্ত যা ধারণা, তা হল কার্বন পরমাণু সঙ্গে অন্যান্য কিছু পরমাণু সংযোগ সৃষ্টি DNA, RNA, বিভিন্ন এমিনো এসিড প্রভৃতি নিয়ে তৈরী প্রোটোপ্লাজ্মই (protoplasm) জীবনের প্রাথমিক উৎস। প্রোটোপ্লাজ্ম (protoplasm) সমন্বিত  বিভিন্ন জীবের (ব্যাক্টিরিয়া বা যে কোনো প্রোটোজোয়া বা মেটাজোয়া) প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য-এদের জন্ম সংখ্যা বৃদ্ধি ও মৃত্যু আছে, যা জড়বস্তু র নেই।

   বাইরাস প্রোটোপ্লাজ্ম দিয়ে তৈরী নয়,  তাই বৈজ্ঞানিকরা একে জীবিত সত্তাও বলতে পারছেন না।আবার এদের জন্ম সংখ্যা বৃদ্ধি ও মৃত্যু রয়েছে। তাই এদের পুরোপুরি জড়বস্তকণাও(particle) বলতে পারছেন না। তাই বাইরাসের  প্রকৃত চরিত্র, গতি প্রকৃতি সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিকদের মনে নানান জটিল প্রশ্ন আছে। তাই একে নিয়ন্ত্রণ করা তাঁদের পক্ষে এক কঠিন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ ব্যাপারে মহান দার্শনিক শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকার (শ্রী শ্রী আনন্দ মূর্ত্তিজী)যুগান্তকারী মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বে বলেছেন, এই পৃথিবীতে প্রাণ বা প্রাণীতার আদি উৎস 'প্রোটোপ্লাজম' নয়, কার্বন  অনু বা কার্বন পরমাণু সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।প্রাণের আদি উৎস মাইক্রোবাইটাম।এই 'মাইক্রোবাইটাম' নামটি এই তত্ত্বের উদ্ভাবকেরই দেওয়া, তিনি বলেছেন এর বাংলা হবে' অনুজীবৎ'।মহান দার্শনিক শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকার ১৯৮৬ সালে মাইক্রোবাইটাম তত্ত্ব দেওয়ার সময়ে বলেছিলেন, এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা  হওয়া উচিত। তা হলে মানব সমাজের অনেক কঠিন সমস্যার সমাধান সহজে সম্ভব হবে।মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বে বলা হয়েছে, মাইক্রোবাইটাম মূলতঃ তিন ধরনের।এদের অনেকগুলি স্থূল, অনেকগুলি প্রোটোন , ইলেকট্রনের চেয়েও সূক্ষ্ম , আবার অনেকগুলি এমন মাইক্রোবাইটাম আছে যা চিত্তানুর চেয়েও সূক্ষ্মতর। তাই মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বে বলা হয়েছে, এ গুলি মূলতঃ তিন ধরনের-১) যারা অনুবীক্ষণের আওতায় আসছে। ২) যারা এত সূক্ষ যে অনুবীক্ষণের আওতায় আসছে না।এরা এদের ক্রিয়াগত অভিব্যক্তির দ্বারা, ক্রিয়াগত স্পন্দনের দরুন ইন্দ্রিয়ানুভূতির আওতায় আসবে।যেমন গন্ধের দ্বারা, শব্দ ও স্পর্শের দ্বারা মানুষ এদের উপস্থিতি বুঝতে পারবে।আর ৩) যারা সাধারণ ইন্দ্রিয়ানুভূতির আওতায় আসবে না, কিন্তু বিশেষ ধরনের ইন্দ্রিয়ানুভূতির আওতায় আসবে, যারা মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্তরে যথেষ্ট উন্নতাবস্থা প্রাপ্ত, কেবল মাত্র তাঁদের ইন্দ্রিয়ানুভূতিতেই এদের ধরা যাবে।আরও বলা হয়েছে মাইক্রোবাইটামের মধ্যে, যারা একটু স্থূল ও অনুবীক্ষণের পরিভূতে আসবে, লোকে তাদেরই বাইরাস বলে থাকে।অনেককে বলতে শুনি অমুক রোগটা অমুক বাইরাস সৃষ্ট। কিন্তু বাইরাস একটা অস্পষ্ট ধারণা মাত্র। এর চেয়ে অধিকতর অর্থবহ শব্দ হল মাইক্রোবাইটাম, 'বাইরাস ' নয়।

এ ব্যাপারে আর একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, মানুষের দেহ ও মনের উপর এই মাইক্রোবাইটামের প্রভাবের দৃষ্টিকোণ থেকে এই মাইক্রোবাইটামকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়-১)নেগেটিব মাইক্রোবাইটাম  (ঋণাত্মক অনুজীবৎ) ও ২) পজিটিব  মাইক্রোবাইটাম (ধনাত্মক অনুজীবৎ)।যে সমস্ত স্থূল মাইক্রোবাইটাম  (বাইরাস) রোগের বাহক এদের বলা হবে নেগেটিব মাইক্রোবাইটাম। এরা ছাড়া ও আরও অনেক সূক্ষ্মস্তরের মাইক্রোবাইটাম আছে, যারা মানুষের মনের তথা মানবসমাজের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। আর যারা পজিটিভ মাইক্রোবাইটাম তারা মানুষের দেহ, মন তথা মানবসমাজের পক্ষে কল্যাণকর। পজিটিব মাইক্রোবাইটাম নেগেটিব মাইক্রোবাইটামকে ধ্বংস করে দেয়।দুর্গন্ধ যুক্ত নোংরা পরিবেশ নেগেটিব মাইক্রোবাইটামের আঁতুড়ঘর। যেমন নোংরা জল মশার আঁতুড়ঘর। মানুষের কদর্য,  নিষ্ঠুর কাজকর্ম,  প্রাণধর্ম বিরোধী উচ্ছৃখল জীবনযাত্রা অত্যন্ত নেগেটিব মাইক্রোবাইটামের জন্ম দেয়। অপর দিকে সুন্দর স্বাস্থ্যকর বিশুদ্ধ পরিবেশ, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, মানুষের প্রাণধর্মের অনুকূল  জীবনধারা, সৎ চিন্তা, সেবা ভাবনা, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক অনুশীলন অজস্র  পজিটিব মাইক্রোবাইটামকে আকৃষ্ট করে, যারা সৎমানুষদের সর্বতোভাবে সাহায্য করে। এরা মানবদেহে অভন্তরীন রোগ প্রতিষেধক ব্যবস্থাকে (immune system) সুদৃঢ় করে ও নেগেটিব মাইক্রোবাইটামকে প্রতিহত করে।

বর্তমান করোনা বাইরাস থেকে বাঁচতে কী করনীয়:-

এ ব্যপারে প্রথমে বলব, বর্তমানে এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে করোনা বাইরাসের সংক্রমণ রুখতে সরকার নির্দেশিত দূরত্ব রক্ষা সহ প্রাথমিক ব্যবস্থাদি সবাই মেনে চলুন।