কেন্দ্রীয় নব্য শিক্ষাব্যবস্থা-শিক্ষার দলীয়করণ ছাড়া আর কিছুই নয়

লেখক
এইচ এন মাহাত

আমরা ছোটবেলা থেকেই জেনে এসেছি শিক্ষা নাকি জাতির  মেরুদণ্ড সারাদেশে আক্ষরিক শিক্ষার হার দেখে আমাদের গর্বে বুক ভরে যায় সমাজে শিক্ষিতের সংখ্যা তত্ত্ব বিচার করলে আমরা কেন যে মনে হয় সমাজে অসামাজিক কার্যকলাপে ও বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে অমানবিকতার সংখ্যা এত বেশী কেন এর কারণগুলি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই শিক্ষা বা জ্ঞান শব্দের অর্থে দুইপ্রকারের উপলদ্ধি তৈরী হয় একটি পরা জ্ঞান অপরটি অপরা জ্ঞান।

অপরা জ্ঞান যাহা কিতাবি শিক্ষা, মানে কয়েকটি বড় বা ছোট বইকে এপাশ ওপাশ করে পড়া আর সামাজিকভাবে মুখ থুবড়ে পড়া কাগজের  মানপত্র সর্বস্ব আক্ষরিক শিক্ষা থাকলেও বৈবহারিক কাজকর্মের প্রয়োজন শূন্যছাড়া আর কিছুই নয় যার জন্য  বিশ্ববিদ্যালয়, মহা বিশ্ববিদ্যালয়ের  বড়ো বড়ো ডিগ্রিধারীদের একটি চাকরি পাওয়ার জন্যে পায়ের জুতার  অবস্থা কহিল হয়ে যায় বিকাল হলেই রকে বসে বন্ধুদের  সাথে বেকারত্ব বিষয়ে জ্বালাময়ী একটি ছোটমোটো ভাষণে পরিবেশ গরম না করে কেউ ছাড়ে না বস্তুতান্ত্রিক জগতে এর থেকে  আরকি আশা করা যায় এই ধরনের  শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্র ছাত্রা, শিক্ষক বা অভিভাবকগণ অন্তসার শূন্য হয়ে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে এরসাথে যুক্ত হয়েছে শিক্ষাক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের দাদাগিরি যে রাজনৈতিক দল সরকারের গদীতে আসীন হন তারা তাদের মত সিলেবাস বা পাঠ্যক্রম তৈরী  করে ছাত্রদের গিনিপিগের মত ব্যবহার করে।

বর্তমান বিজেপির  কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা নীতি দেখে মনে হয় ভারতের কৃষ্টি ---সংসৃকতিতে হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্তান ছাড়া আর কিছুই নেই আজ যে পাঠ্যক্রম আমাদের দেশে প্রয়োগ করতে চলেছে সেখানে মাতৃভাষার মূল্যায়নের কোন প্রয়োজন নেই সকলকে  বলপূর্বক হিন্দি শিখতেই হবে অথচ হিন্দি একটি জগাখিচুড়ি মার্র্ক মেরুদণ্ডহীন ভাষা উচ্চশিক্ষায়  এর প্রয়োজনের কোন অস্থিত্ব নেই  মাতৃভাষা মাতৃ দুগ্দ সম কোন একজন সাহিত্যিক তাঁর প্রবন্ধে লিখেছেন বিহার, উত্তর প্রদেশ, মধ্যে প্রদেশের লাগোয়া রাজ্যগুলি থেকে ভালো শিল্পী সাহিত্যিকের বা সাহিত্যের অভাব তিনি বোধ করেছেন, কারন তিনি বলেছেন এক সময়ের অঙ্গিকা, ভোজপুরী, মৈথিলী, মগহী, ছত্রিশগড়ী,বুন্দেলী, বাঘেলী, ব্রজ প্রভৃতি ভাষাগুলি যখন সাহিত্যের আঙ্গিনায় ছিলো তখন ভালো ভালো সাহিত্য সমাজে এসেছে ও তার জন্য  নৈতিকতা সম্পন্ন নাগরিক দেশ  উপহার পেয়েছে যখন থেকে হিন্দি ভাষা আমাদের মধ্যে এসেছে, আমরা সুসাহিত্য থেকে পিছিয়ে পড়েছি শুধু তাই নয়, বর্তমান সাহিত্যিকরা টাকা আয়ের নামে নগ্ণ ও বেলেল্লাপনার সাহিত্য বাজারে আনছে সাহিত্যকে নিজের ভাষা থেকে হিন্দি তরজমা করতে গিয়ে ঠিকঠাক শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করা ভুলেই গেছে।

বর্তমান বিজেপি সরকার বাজারে  এমন শিক্ষা আনতে চলেছে যাহা একদিকে শিক্ষার দলীয়করন , অন্যদিকে শিক্ষার বাজারী করণ অর্থাৎ শিক্ষা ব্যবস্থার দ্বারা রাজনৈতিক নেতারা ছাত্রদের তাবেদার করতে চাইছে যেমন ইংরেজরা ভারতে তৎকালীন আমলে ইংরেজি শিখিয়ে ছিলো অন্যদিকে শিক্ষাকে বেসরকারী করণের ফলে নিম্ন ও মধ্য বিত্ত পরিবারগুলোকে শিক্ষা থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া ছাড়া আর কিছু থাকবে না শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে সরকারের কোন দায়বদ্ধতা থাকবে না নব্য শিক্ষা নীতিতে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে কোন সমন্বয় থাকবে না, এরফলে ভারতের যুক্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে প্রচণ্ড সংঘাত শুরু হবে আজকের বিজেপির শিক্ষা ব্যবস্থায় পুঁথিগত জ্ঞান বা বিদ্যাকে অপরা জ্ঞান বলা হয় সার্বিকভাবে শিক্ষার মাধ্যমে শুরু হবে একনায়কতান্ত্রিক রাজনৈতিক  ও সামাজিক অবদমনের  শাসন ব্যবস্থা, যাহা যাহা আমরা নাৎসি প্রধান হিটলারের মনস্তাত্ত্বিকতার মধ্যে দেখেছি, আজকের ইতিহাস তাই বলে।

এই ধরনের শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন --- ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত অন্তরমুখি অর্থাৎ পরাজ্ঞান বা শিক্ষা যার ভিত্তি হলো মানুষের আক্ষরিক শিক্ষার সাথে সাথে অন্তনির্হিত সাধনা, যাহা ধর্মবোধকে জাগিয়ে তোলে, যার দ্বার মানুষের মধ্যেকার উপধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার মুক্তির অনুপ্রেরণা, নৈতিকতা ও মানব আধারের মিত্রতা বা বিশ্বপ্রেম, অপরের প্রতি ভালবাসা বা বিশ্বভাতৃত্ববোধ জাগানো ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংসৃকতির প্রভাব ভাষা, সংসৃকতি, আচার-আচরণ দৈনন্দিন জীবন সার্থক করতে সাহায্য করবে শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তার শিক্ষা নীতি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বলেছিলেন সা বিদ্যা যা বিমুক্তায়ে অর্থাৎ শিক্ষার মৌলিক তত্ত্ব হলো ত্রিস্তরিয় যেমন শারীরিক সুস্থ থাকা, মানসিক পূর্ণাঙ্গ বিকাশ, আধ্যাত্মিকতার চরম লক্ষ্যে পৌছানোর প্রেরণা তিনি আরো বলেছেন  সেটাই  শিক্ষা যাতে মানুষ অনেক জেনেছে, অনেক শিখেছে, অনেক মনে রেখেছে  ও তাহাকে ব্যষ্টিগত জীবনে ব্যবহার করছে সেটাকেই বলবো শিক্ষা আর যারা এই শিক্ষার বলে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে  চলেছে তারাই যথার্থ শিক্ষিত।