করোনা কালে অতীতের ক্রীড়া জগতের স্মৃতিচারণা

সংবাদদাতা
ক্রীড়াপ্রতিনিধি
সময়

করোনার আবহে আজ সব ম্লান হয়ে রয়েছে চারিদিক, যেন কোন কিছুতেই জীবন নেই, তেমনই অবস্থা ক্রীড়াজগতেরও হয়েছে৷ আজ একরকম অস্তিত্বহীন হলেও তার কর্মধারা ইতিহাসের পাতায় চির উজ্জ্বল৷

পুরোনো কাগজপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে হাতে পড়ে গেল উয়াড়ি ক্লাবের কথা লেখা কয়েকটি পাতা৷ জানা গেল এই উয়াড়ি ক্লাব কলকাতায় বহু ফুটবলার, ক্রিকেটারকে জন্ম দিয়েছে, তাদের লালন-পালন করেছে৷ সেই রকম অনেক ক্রীড়াবিদ নিশ্চয়ই এখনও সশরীরে রয়েছেন৷ কৈশোর-যৌবনে তাঁরা উয়াড়ি ক্লাবের হাত ধরে একদিন ময়দানে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন, এমনকি দুই বাঙলার মিলনসেতু গড়ার কাজে নিজেদেরকে উজাড় করে দিয়ে অনেক আনন্দ পেয়েছেন আর অনেক অনেক আনন্দ বিলিয়েওছেন৷ আজ খেলার পাতায় গোল, রান, উইকেট, পদক নয়---খেলোয়াড় গড়ার একটি কারখানার রোমন্থন করতে মন বড়ই ব্যাকুল হয়ে পড়েছে৷

১৯১১ সালে মোহনবাগানের আই এফ এ শীল্ড জয় ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা ঘটনা৷ সেই সময় মোহনবাগানের হয়ে খেলতে এসেছিলেন ওপার বাঙলার উয়াড়ি ক্লাবের কয়েকজন খেলোয়াড়৷ যদুনাথ রায়, মনু রায় ও কানু রায় মোহনবাগানের হয়ে খেলেওছিলেন৷ সেই উয়াড়ি ক্লাবের শাখা কলকাতায় পত্তন হয় দেশভাগের পর৷ সেনাবাহিনীর জায়গায় তাঁবু খাটিয়ে যাত্রা শুরু হয়৷ কলকাতার একমাত্র ক্লাব এই উয়াড়ির সাইনবোর্ড সবসময় বাংলা ভাষায় শোভা পেত৷ ইতিহাস বলে দীনেশ দত্ত, সন্ধ্যা দত্ত, প্রতুল সেন, পরেশ মুখার্জি, শ্যাম গাঙ্গুলী, পরিতোষ রায় প্রমুখরা ওপার থেকে কলকাতায় এসে উয়াড়ি ক্লাবের হাল ধরেন৷ তখন ঢাকায় উয়াড়ি ক্লাবের দারুণ নামডাক৷ ঢাকা শহরে এই ক্লাবের জন্ম হয় ১৮৯৮ সালে৷ প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রায় বাহাদুর সুরেন্দ্রনাথ রায়৷ কলকাতায় তখন মোহনবাগান, ইষ্টবেঙ্গল, মহামেডান স্পোর্টিং, এরিয়ান, ভবানীপুর---এই সব বড় বড় ক্লাব৷ সেই সময় উয়াড়ি ক্লাবকে সাহায্যের জন্যে এগিয়ে আসেন বাঘা সোম, পঙ্কজ গুপ্ত, পাখী সেন, মোহিনী ব্যানার্জীর মত তৎকালীন স্বণামধন্য ক্রীড়াবিদরা৷ এইভাবে ১৯৪৯ সালে কলকাতায় আত্মপ্রকাশ ঘটে উয়াড়ি এ্যাথলেটিক্স ক্লাবের৷ সভাপতি দ্বিজেন দত্ত, সম্পাদক নীরদ গুপ্ত৷ বিশ্বায়নের এই ধাক্কায় অভিন্ন বাঙলার শতাধিক বৎসরের ও পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চাশোধর্ব বৎসরের এই ক্লাব দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আজকের প্রজন্মের কাছে হয়ত অপরিচিত৷  কিন্তু অতীতে ফুটবলার, ক্রিকেটার ও হকি খেলোয়াড় তৈরীতে যে সাফল্য দেখিয়েছে এই ওয়াড়ি এ্যাথলেটিক্স তার স্মৃতি আজও অমলিন৷ ওপার বাঙলার অনেক খেলোয়াড় কলকাতার এই উয়াড়ি ক্লাবে এসে লালিত-পালিত হয়ে কলকাতা তথা সারা ভারতবর্ষে নিজেদের ক্রীড়ানৈপুন্য প্রদর্শন করেছেন৷ আজ কলকাতার সেনাবাহিনীর ইষ্টার্ণ কম্যাণ্ডের সদর দপ্তরের পাশে কাঠ আর টিনের যে চালাগুলো সেখানেই উয়াড়ি এ্যাথলেটিক্সের একটি চালা ছিল৷ ভীড়ের জঙ্গলে হয়ত তার খোঁজ বর্তমানের খবরে মেলে না৷ যদিও একসময় ইষ্ট-মোহন-মহামেডানের মতই ক্রীড়াক্ষেত্রের নক্ষত্র স্বরূপ ছিল উয়াড়ি ক্লাব৷ কত-শত স্বপ্ণের বাস্তব রূপায়নের এই উয়াড়ি হয়তো বা নেই তুমি, তবু আছ৷ স্মৃতিতে আছ, ক্রীড়াপ্রেমীদের প্রাণেই বেঁচে থেকো৷