লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে জনসেবার  ভাবনার দারুণ  অভাব, কেবল দলীয় স্বার্থে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দান

লেখক
প্রভাত খাঁ

রাজনৈতিক দলগুলির যে সকল নির্বাচিত প্রতিনিধি লোকসভায়  বর্তমানে আছেন, তাঁদের মধ্যে যাঁরা পুনরায়  নির্বাচনে  দাঁড়াচ্ছেন, তাঁদের যেটা প্রধান কর্তব্য তা হ’ল, তাঁরা গত  ৫ বছরে কী কী কাজ করেছেন, তার হিসেব দেওয়া ও জয়লাভ করলে কী কী কাজ করবেন তা জানানো৷ নূতন যাঁরা দাঁড়াচ্ছেন, তাঁরাও নির্বাচিত হলে কী কী কাজ করবেন তা  জানাতে হবে৷ কিন্তু এই জিনিসটা কেউ করছেন না৷ অথচ নির্বাচনী  প্রচারে  গিয়ে  এইটাই জানানো তাঁদের  প্রধান কর্তব্য৷ আর তা না করে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বড়ো বড়ো  মাঠ ঘেরা হচ্ছে আর দলের  নেতা-নেত্রীগণ হাজির হয়ে বিরোধী দলের ও বিরোধী দলের প্রার্থীদের আদ্যশ্রাদ্ধ করছেন৷ জনগণের  সমস্যার কী সমাধান  করেছেন  বা করবেন--- তার কোনো কথা নেই৷ গত ৫ বছরে তো দেশের গরীব মানুষেরা চরম কষ্টের  মধ্যে দিন কাটিয়েছেন৷ চরম দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি , বেকার সমস্যা বৃদ্ধি, বড়ো নোট  বাতিলের  ফলে  জনগণের  দুর্গতি  ও নূতন করে বেকারবৃদ্ধি, জি.এস.টি-র মত এক করের ব্যবস্থায়  গরীব নিধনের পাকাপোক্ত  ব্যবস্থা হয়েছে৷  সীমান্তে ভারতের  জওয়ানরা  অকালে প্রাণ হারিয়েছেন  ও এখনও  হারাচ্ছেন৷ এটাই কি বর্তমান বিজেপির সরকারের দেশসেবার নমুনা!

লোকসভায় গ্লামারের দরকার নেই, কাজের লোক চাই৷ বিরোধীরাও  নির্বাচিত হলে কী কী করবেন, সেটাই তাঁরা জনগণকে বুঝিয়ে বলুন৷ কেবল কাদা ছোড়াছুড়ি করে কী হবে?  দেশের মানুষের সেবার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সততাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু বর্তমানে যাঁরা রাজনৈতিক কারবারে ব্যস্ত তারা অনেককিছু গোপন করে চলেন, আর মানুষের নজর কাড়তে ভারী ভারী প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেদের মতলব হাসিল করে নেন৷  কাজের কাজ কিছুই হয়না৷ নোংরা দলবাজি ও কিছু কিছু পাইয়ে দেওয়ার ধান্দা৷ নাগরিকদের সেবা দেবে সরকার৷  সেখানে দ্বি-চারিতা কেন? এখন প্রাণদায়ী ওষুধের দাম  আকাশছোঁয়া ! ডাক্তারদের ভিজিট বা দর্শনীর পরিমাণও আকাশচুম্বী, গরীবরা মারা পড়ছেন৷ এসব ব্যাপারে তো সরকারের নজর থাকা উচিত৷  কলকারখানা প্রায় সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ চরম বেকার সমস্যায় দেশ ধঁুকছে৷ এই অবস্থায়  বোটের নামে বিশাল রাজসূয় যজ্ঞটা  হয় কী করে--- সেটার ভাববার !

তার ওপর এন.আর.সির হুমকি দিচ্ছে বিজেপি নেতারা, অসমে তো ৪০ লক্ষ বাঙালীকে রাষ্ট্রহীন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত৷ এখানে ওরা কি করবে--- এই নিয়ে এখানকার গরিব মানুষরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত! ভারতের প্রকৃত বৈধ নাগরিক হয়েও বিজেপির সরকারের দাবী মত পুরাতন সমস্ত নথিপত্র ও রেকর্ড  সংগ্রহ করা বহু গরীব মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়৷ কেউ যদি বিদেশের নাগরিক হয়ে থাকে তা প্রমাণ করার দায়িত্ব অভিযোগকারীর---এখানে উল্টো নিয়ম৷ এটাতো গরীব নির্যাতনের নামান্তর মাত্র৷ আর ওপার বাংলা থেকে যে সমস্ত হিন্দুরা পরিস্থিতির চাপে পড়ে বিভিন্ন সময়ে প্রাণের দায়ে ভারতে এসেছে--- তারা তো অবিভক্ত ভারতেরই নাগরিক৷ তাছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারেই ঘোষণা ছিল, তাদের জন্যে এদেশের দরজা সব সময় খোলা থাকবে৷ তাহলে এন.আর.সির খড়্গ দেখিয়ে তাড়ানোর হুমকি  কোন অধিকারে দেওয়া হচ্ছে? এটা কি মগের মুল্লুক ? আজ হিন্দুত্ববাদীরা  বলছেন, শরণার্থী হিন্দুদের কোন ভয় নেই৷ তাহলে অসমে ২২ লক্ষ হিন্দু বাঙালীকে  এন.আর.সির তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে কেন? তাহলে বিজেপির কথার কি কোন মূল্যই নেই? এদের না আছে কোন আদর্শ, না আছে কথার মূল্য৷ অসমে উগ্রপন্থী অসমীয়া জাতীয়তাবাদীদের  সন্তুষ্ট করতেই যে এসব করা হচ্ছে  তা বুঝতে কারোর বাকি নেই৷ অর্র্থৎ যেন তেন প্রকারে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতা দখল করার লক্ষ্যে এরা লক্ষ লক্ষ মানুষকে  অন্যায়ভাবে ভিটেমাটি ছাড়া  করতেও  পিছপা নয়৷