মহিষাসুরমর্দিনী  দুর্গা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের  মিলিত শক্তির  প্রতীক

লেখক
মোহন সরকার

 প্রাচীনকালে ৪ ধরনের সাহিত্য গ্রন্থ লেখা হত ৷ কাব্য, ইতিবৃত্ত, ইতিহাস পূরাণ৷ বাক্যং রসাত্মক কাব্যং--- ছন্দ, উপমা  প্রভৃতি দিয়ে রসাত্মক কাব্যরচনার নাম কাব্য৷ সমাজে যা ঘটছে--- তার  হুবুহু পঞ্জীকরণ হ’ল ইতিবৃত্ত৷ কোনো এক রাজন, তাঁর ৪ ছেলে৷ তাদের ছেলে-পুলে তাদের রাজ্য বিস্তার  বা জীবনযাত্রার কাহিনী--- এসব ঘটনাপঞ্জীর বিবরণ হ’ল ইতিবৃত্ত৷ ইতিবৃত্ত কিন্তু ‘ইতিহাস’ নয়৷ ইতিবৃত্তের  মধ্যে যে অংশ শিক্ষাপ্রদ---সে অংশটাই  হল ‘ইতিহাস’৷  আর পুরাণ হ’ল--- লোকশিক্ষার্থে রচিত কল্পিত কাহিনী৷  পুরাণের ঘটনাগুলো কাল্পনিক হলেও তার মাধ্যমে মানুষকে নানান্ শিক্ষা দেওয়া হয়৷ যেমন বলা হয়েছে, 

‘‘অষ্টাদশ পুরাণেষু / ব্যাসস্য  বচনদ্বয়ম্৷

পরোপকারঃ পুণ্যায়/পাপায় পর পীড়ণম্৷৷

 অর্থাৎ অষ্টাদশ  পুরাণে ব্যাসদেবের  মূল বক্তব্য হ’ল,, পরোপকার হ’ল পুন্য,  আর পরপীড়নই হল পাপকাজ৷’’

তেমনি এই যে  মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গাপূজা করা হয়, এই দুর্গার  কাহিনী অনেকেরই অজানা৷ দেবতারা  অসুরদের  দ্বারা পরাজিত হয়ে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হন৷ এ অবস্থায় সমস্ত  দেবতাদের  দেহ থেকে এক জ্যোতি বেরিয়ে এল,আর সেই জ্যোতি দুর্গার রূপ নিল৷ বিভিন্ন  দেবতা তাদের  অস্ত্র দিয়ে দুর্গাদেবীকে সজ্জিত  করলেন৷ দুর্গাদেবী  তখন  অত্যাচারী মহিষাসুরের সঙ্গে  সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে মহিষাসুরকে বধ করলেন৷  দেবতারা স্বর্গরাজ্য ফিরে পেল৷

এ পৌরাণিক  কাহিনীর মাধ্যমে  শিক্ষানীয়  বক্তব্যটি  খুবই  পরিষ্কার৷ এখানে আগে বলা উচিত, স্বর্গ বলে আলাদা কোনো স্থান নেই বা নরক  বলেও আলাদা কোনো স্থান নেই৷

‘‘কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক

কে বলে তা বহুদূর

মানুষেরই মাঝে স্বর্গ নরক

মানুষেতে  সুরাসুর৷’’

শুভবুদ্ধি  সম্পন্ন  মানুষগুলিই হ’ল দেব, আর পাপাচারী মানুষগুলি হল অসুরের প্রতীক৷ যুগে যুগেই এভাবে কখনো  কখনো ভাল মানুষেরা  পাপাচারী মানুষদের কাছে পরাভূত হয়৷ আবার ভাল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষরা সুসংঘটিত  হলে তাদের মিলিত শক্তির  কাছে অশুভশক্তি  পরাভূত হয়৷

এই শুভবুদ্ধি  সম্পন্ন  মানুষদের  মিলিত শক্তি হ’ল দুর্গার  প্রতীক৷ তখন জ্ঞান (বিদ্যা), ধনসম্পদ,সবকিছু তাঁদের  সহায় হয়৷ শুভ -অশুভের সংগ্রামে অশুভ শক্তির পরাভব ঘটে৷

দুর্গতিনাশিনী দুর্গার  কাহিনীর  মধ্যেই এটাই শিক্ষণীয়৷ এটাই বোঝারও  উপলদ্ধি করার৷ এই পুরাণকাহিনী বলছে, দেশে  সমাজে অশুভ শক্তির  প্রাবল্য হলে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সমস্ত  ব্যষ্টি ঐক্যবদ্ধ হোক৷ তাদের মিলিত শক্তির কাছে অসুরশক্তির ধবংস অনিবার্য৷