ফুটবলে বাঙালীর জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনতে হবে

সংবাদদাতা
ক্রীড়াপ্রতিনিধি
সময়

দু’বছর আগে ভারত অনুধর্ব ১৭-র বিশ্বকাপের আয়োজক দেশের দায়িত্ব নিয়ে সুনামের সঙ্গে তা পালন করেছিল৷ কলকাতার সল্টলেক ষ্টেডিয়ামে এই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলাটি হয়৷ শুধু কলকাতা নয়, সারা বাংলা তখন ফুটবলে মাতোয়ারা৷ বিদেশী খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তারা বাংলার ফুটবলের পরিবেশ, উৎসাহ দেখে প্রশংসা করেছিলেন৷ এর থেকে বোঝা যায় বাংলায় ফুটবলের পরিবেশ এখনও বর্তমান৷

অতীতে বাংলার ফুটবল সারা ভারতের মধ্যে বিশেষ স্থানে ছিল৷ কোন সন্দেহ নেই ষাট-সত্তর-আশি এমনকি নববই দশকেও বাংলার ফুটবল সারা ভারতের অন্যান্য রাজ্যের কাছে ঈর্ষণীয় ছিল৷ কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে বাংলার ফুটবল ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছিল৷ ২০১৭ অনুধর্ব ১৭-র বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা বাংলার ফটবলার ছিল নগন্য৷ এর থেকে অনুমান করা যায় ফটবলে উৎসাহে ভাঁটা না থাকলেও কার্যক্ষেত্রে বাংলা ফুটবলে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে৷ এর কারণ কি? প্রধান কারণ হ’ল কলকাতা ফুটবল ক্লাবগুলোকে বাঙালী ফুটবলারের অভাব৷ পেশাও নেশা হিসেবে বাঙালী আর ফুটবলে পা দিতে তেমনভাবে আগ্রহী নয়৷ কারণ হচ্ছে ফুটবল খেলে নিজের ও পরিবারের সুখ-স্বাচ্ছন্য তথা বেঁচে থাকার জন্য নূন্যতম প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সংগ্রহ করতে পারছে না বাঙালী ফুটবলাররা৷ ইষ্টবেঙ্গল, মোহনবাগন দলের হয়ে নিয়মিত ফুটবল খেলতে পারলে, ইণ্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ  খেলতে পারলে হয়তো আর্থিকভাবে কিছুটা উপকৃত হতে পারেন সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়৷ কিন্তু এতদূর এগোতে পারছে না বাঙালী ফুটবলাররা৷ পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় মনিপুর, কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু থেকে উঠে আসছে ভাল ভাল ফুটবলার৷ অর্থাৎ সেই সব রাজ্যের ফুটবলাররা আর্থিক ভাবে বাঙালী তথা বাংলার ফুটবলারদের থেকে ভাল অবস্থায় আছেন৷ সেই কারণে পশ্চিমবঙ্গের সরকারকে ও বড় ক্লাবগুলোকে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করতে হবে৷ সরকারী ফুটবল একাডেমীর মাধ্যমে ফুটবলারদের সমস্ত রকম সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে৷ উঠতি ফুটবলারদের আর্থিক নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারলে নির্ভবনায় ফুটবল মাঠে ভীর জমাবে ভাঙালী ফুটবলারা৷ এখন দেখা যায় ব্যক্তিগত ইভেণ্ট যেমন অ্যাথলেটিক্স, টেনিসে, দাবার মত খেলাগুলোতে অনেক বাঙালী আন্তর্জাতিক স্তরে ভাল খেলছেন৷ অর্থাৎ বাংলায় প্রতিভার অভাব নেই৷ অভাব ঘটেছে উৎসাহের৷ বাংলায় এমন কোনও ফুটবল দল নেই যেখানে শুধুমাত্র বাঙলী খেলোয়াড় প্রতিনিধিত্ব করছেন৷ বড় দলগুলোতে বাংলার খেলোয়াড়দের থেকে ভিন রাজ্যের ও বিদেশী খেলোয়াড়নদর ভীড় বেশী৷ ক্লাবগুলো ভিন রাজ্যের ও বিদেশী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যে আর্থিক চুক্তি করে তার দশ শতাংশও একজন বাঙালী ফুটবলার অথবা বাংলার ফুটবলারকে দিতে চায় না৷ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কায়দা করে বাঙালীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে কায়দা করে৷ ফুটবলেও বাঙালী খেলোয়াড়দের বঞ্চিত করে বিদেশী খেলোয়াড়দের ও ভিন রাজ্যের খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দেওয়া হয়৷ কলকাতায় বড় ক্লাবে এমন সব বিদেশী খেলোয়াড় প্রতি মরসুমেই খেলেন যাঁরা নিজ নিজে দেশের বাতিল খেলোয়াড়৷ প্রশ্ণ বাংলার ফুটবলের মান কি এতটাই নীচে নেমে গেছে অন্য দেশের বাতিল খেলোয়াড়দের এখানে এনে এই রাজ্যের ফুটবলের মানোন্নয়ন করতে হবে? এর অন্তরালে কি ঘটচে তারখোঁজ নেওয়া দরকার৷ রাজ্যের ক্লাবগুলোকে রাজ্যের সরকার যে সুযোগ সুবিধা দেন তা কি ভিনরাজ্যের খেলোয়াড়, বিদেশী খেলোয়াড়দের এনে ট্রফি জিতে ক্লাবগুলোর আর্থিক উন্নতি ঘটানোর জন্য? যেহেতু এখন ক্লাবগুলো এক-একটা কোম্পানী হয়ে যাচ্ছে তাই দেখা যাচ্ছে সরকারী সাহায্যটা চলে যাচ্ছে কোনও একজন বা মুষ্টিমেয় কয়েকজন পুঁজিপতির হাতে৷ পরোক্ষভাবে পুঁজিপতিদের থাবায় এখন বাংলা ষ্পটতঃই ফুটবলে তার জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করেছে৷ বাঙালী ফুটবলারের সংখ্যা না বাড়াতে পারলে বাংলার ঐতিহ্যপূর্ণ ফুটবল অচিরেই মলিন হয়ে পড়বে৷