শারদ শুভেচ্ছা নয়   শারদ শপথ

লেখক
মনোজ দেব

প্রথা মেনে শারদ শুভেচ্ছা নয় ---প্রথা ভেঙে শারদ শপথ---আন্তরিকতার সঙ্গে মেঘালয়ের হতভাগ্য বাঙালীদের কথা ভেবে অসমের ডিটেনশনক্যাম্পের মৃত্যু পথ যাত্রী, অসহায় বাঙালীদের কথা ভেবে, বরাক বাঙলা ও  মিজো সীমান্তের নির্যাতিত বাঙালীদের কথা ভেবে---বাঙালীর প্রিয় উৎসবের দিনগুলিতেও যারা আতঙ্ক অনাহার ও অনিদ্রায় জীবন কাটাচ্ছে৷

বিদেশী শ্বেতাঙ্গ সাম্রাজ্যবাদী ও স্বদেশী বাদামী শাসক-শোষক সকলের লক্ষ্য একটাই---বাংলার অবলুপ্তি, বাঙালীর বিনাস, শুধু বাঙলার ভৌগোলিক সীমানা চায় সম্পদের অবাধ লুন্ঠনের জন্য৷

দীর্ঘ ৭৩ বছর ধরে স্বাধীন ভারতে বাঙালীর ওপর যে অত্যাচার নির্যাতন হচ্ছে,  বাঙালী যেভাবে অন্যায় অবিচারের শিকার হচ্ছে ১৯০ বছরের বিদেশী শাসনে তা হয়নি৷ বাঙলার এক কবি ক্ষোভের সঙ্গে লিখলেন---

‘‘পদ্মাপাড়ে মার খেলি তুই গঙ্গাপাড়েও খেলি,

ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে এসে রক্তে ভেসে গেলি৷

বৈতরণীর পাড়ে তোদের হবে কি রে হাল

তাই তো বসে মহাশূন্যে ভাবছে মহাকাল৷’’

সাল১৯২২, এক যুব সম্মেলনীতে সুভাষচন্দ্র বললেন---‘যেখানে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের উৎসগুলি প্রাচুর্যে আমাদের ভাণ্ডারে উপচে পড়ত, যেখানে জলে সুধা, ফলে অমৃত, শস্যে অনন্ত প্রাণদায়িনী শক্তি ছিল সে আজ বিরাট শ্মশান খাঁ খাঁ করছে৷ প্রেতের ছায়া দেখে অর্ধমৃত প্রাণ শিউরে উঠছে, চুলি দাউ দাউ করে জ্বলে যাচ্ছে--- একবিন্দু জল নাই এতটুকু জীবন নাই৷ ওই সভায় দাঁড়িয়ে আর এক বাঙালী বিজ্ঞানী মেঘনাথ সাহা বললেন--- ‘একদিকে বিদেশীরা বাংলাদেশকে অধিকার করেছে, অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য করায়ত্ত করে অবাঙালী ব্যবসায়ীরা   বাঙলার বৈষয়িক সম্পদ গ্রাস করেছে৷ বড় বড় বাঙালী ব্যবসায়ী পরিবার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কৃপায় জমিদার হয়ে জড় বিলাসীতে রূপান্তরিত হয়েছে, আর মধ্যবিত্ত বাঙালী হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রীতদাস দেশী-বিদেশী ব্যবসায়ীদের৷

দুই বিখ্যাত বাঙালীর কথাগুলো আজ  একশো বছর পরেও চরমভাবে সত্য৷ দেশী বিদেশী ব্যবসায়ী তো আছেই, জমিদারের জায়গা দখল করেছে নেতা মন্ত্রীরা৷

পরিশেষে আবার বলি---আজ শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা নয়, বাঙালীর ঘরে শুভ বিজয়া সেইদিন আসবে যেদিন আর একটা নবজাগরণের ডাকে বাঙালী চেতনা সব ভেদ বিদ্বেষ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বজ্রকন্ঠে আওয়াজ তুলবে ---

‘অখণ্ড বাঙলা বাঙালীর স্বর্গ

আমরা বাঙালী বাঙলার গর্ব৷

সেই স্বর্গ গড়ার শপথ নেবার দিন আজ৷ বাংলা নয় বাঙালী নয়, লুপ্ত হবে হাজার হাজার বছরের শোষণ শাসন অত্যাচার নিপীড়ণে৷ শুধু বাঙলা নয়, বাঙলার পথ ধরে এই নবজাগরণের ঢেউ পৌঁছে যাবে বিশ্বের আঙিনায় ৷ বাঙালী জাতিয়তাবাদ রূপান্তরিত হবে বিশ্ব ভাতৃত্ববোধে, বিশ্বমানবতায়৷ সর্বগ্লানী মুক্ত, সর্ব কলুষমুক্ত এক নির্মল পৃথিবীর বাসিন্দা হবে মানুষ৷ সেই শুভদিনের আশায় সকলের জন্য রইল আগাম শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা৷