স্বাধীনতার ৭২ বছর পরে আমরা কোথায় আছি?

লেখক
সত্যসন্ধ দেব

ভারতের স্বাধীনতার পর ৭২ বছর অতিক্রান্ত হ’ল, এখন আমাদের দেশ কোথায় রয়েছে? এ ব্যপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এখনো আমাদের দেশে ক্যানসার, এইড্স প্রভৃতি মারাত্মক রোগ, বা বন্যা,খরা, ভূমিকম্প প্রভৃতির কারণে যত মৃত্যু হয় তুলনামূলক ভাবে খাদ্যের অভাবে– অনাহারে, অর্দ্ধাহারের ফলে মৃত্যুর সংখ্যা সবার শীর্ষে৷ নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ্ অমর্ত্য সেনের মন্তব্য, স্বাধীনতার লাভের সময় ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল খাদ্যাভাবে দরিদ্র জনসাধারণের মৃত্যুর সমস্যা, আজও সেই সমস্যা বর্তমান৷ যে কোনো স্বাধীন দেশের সরকারের সর্ব প্রথম কাজই হ’ল ক্ষুধার তাড়নায় মৃত্যু থেকে মানুষকে বাঁচানো, অথচ এ দেশের সরকার এই প্রাথমিক সমস্যাটাই সমাধান করতে পারল না৷ তাহলে প্রশ্ণ ওঠে, কোন্ স্বাধীনতা আমরা লাভ করলুম৷

কয়েক বছর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই সমীক্ষায় প্রকাশ, সারা পৃথিবীতে ক্ষুধার শিকার ৮২ কোটি মানুষ৷ আর তার এক তৃতীয়াংশ ভারতেই৷ ২০ কোটি মানুষ এখনও প্রতিদিন রাতে ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে যায়৷ বছরে প্রায় ২ কোটি মানুষের মৃত্যুর মূল কারণই ক্ষুধা৷

ভারতের প্ল্যানিং কমিশনের রিপোর্টও বলছে, দেশের ২৬.৮ কোটি মানুষ পেট ভরে খেতে পায় না৷ ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সের মেয়েদের অর্দ্ধেক অংশ ও শিশুদের তিন চতুর্থাংশ রক্তাল্পতাতে ভোগে৷ ভারতের শিশু জনসংখ্যার (শিশুদের) এক তৃতীয়াংশ (১৬ বছরের ভেতর) পারিবারিক অভাবের কারণে বাধ্য হয়ে শ্রমিকের কাজ করে৷ যদিও আইনতঃ দেশে শিশুশ্রমিক নিষিদ্ধ৷ আরো জানা যায়, ভারতে ১৩.৫ কোটি মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত, ২২.৬কোটি মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় জল পায় না৷

বিশ্বব্যাঙ্কের সমীক্ষকরা দেখেছেন, দেশের ৪৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমারেখার নীচে বাস করছে৷ গ্রামাঞ্চলে এদের আয় দৈনিক ১৪ টাকা ৩০ পয়সার কম, আর শহরাঞ্চলে ২১ টাকা ৩০ পয়সার কম৷

সরকার নানান্ সময় দৈনিক কম পক্ষে কত টাকা আয় হ’লে তাকে দারিদ্র্য বলা যাবে, সেই হিসাবের কারচুপি করে দারিদ্র্য সীমারেখার নীচের মানুষের সংখ্যা কমিয়ে কৃতিত্ব দেখানোর চেষ্টা করছে৷ সংখ্যাতত্ত্বের ভেলকি দেখিয়ে যতই বিপিএল সংখ্যার হেরফের করা যাক্ না কেন, ভুক্তভোগী ও তথ্যাভিজ্ঞমহল সবাই জানে গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র মানুষের কী অসহনীয় অবস্থা৷ দেশের কোটি কোটি মানুষের নূ্যনতম চাহিদা পূরণের  ব্যবস্থা এ দেশের সরকার এখনও পর্যন্ত করতে পারল না৷ এজন্যে কেবল নেতাদেরই দোষ দিয়েই এই ব্যর্থতার মূল কারণ নির্ধারণ করা যাবে না৷ এর জন্যে প্রকৃতপক্ষে দায়ী আজকের পূঁজিবাদী ব্যবস্থা৷ এ দেশের প্রায় সমস্ত বড় বড় রাজনৈতিক পার্টি ও তাদের নেতাদের মাথা কিনে রেখেছে দেশের ধনকুবের পূঁজিবাদিগোষ্ঠী, যারা জনগণকে শোষণ করেই তাদের পূঁজির পাহাড় জমাচ্ছে৷ এই সমস্ত রাজনৈতিক দলের নীতি নির্ধারণের মূল চাবিকাঠি রয়েছে ওই শোষক ধনিক শ্রেণীর হাতে৷ আর এই কারণেই দেশে ধনী আরোও ধনী হওয়ার সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে ৷ পুঁজিপতি গোষ্ঠী ও কম্যুনিজমও ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে৷ এই অবস্থায় স্বাধীনতার ৭২ বছর পরও দেশের অর্থনীতিবিদরা পথ হাতড়ে মরছে, নয়তো ধনিক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত৷ এই দুর্বিষহ পরিবেশ থেকে সমাজকে মুক্ত করতে আজ পুঁজিবাদ ও সাম্যবাদের (কম্যুনিজম) বিকল্প পথের সন্ধান করতে হবে৷