স্বাধীনতার ৭৩ বছরে ভারতীয় হয়ে বাঙালী কী পেল

লেখক
এইচ এন মাহাত

ভারতের আর একটি স্বাধীনতার দিবস না বলে ক্ষমতা হস্তান্তর দিবস পালিত হলো বলাই ইংরেজ বিদায়ের সঠিক মূল্যায়ন সারা ভারতে করোনা ভাইরাসের জেরে কিছুটা হলেও তেমনভাবে ঢাক-ঢোল না বাজিয়ে নমোনমো করে পালিত হলো দিনটি

এবার ভারতীয় হয়ে ভারতের স্বাধীনতার ৭৪ বছর পর আমরা বাঙালীরা কী পেলাম স্বাধীন দেশের নাগরিকদের কতটা শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে! শুরুতেই  বলা দরকার ভারতের সংবিধানে বাক স্বাধীনতা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে কিন্তু শাসকদলের  রক্তচক্ষুতে সেই অধিকার আমজনতার নাগালের বাইরে আমজনতার বাক স্বাধীনতা নির্ভর করে সরকার জনগণের পক্ষে না বিপক্ষে তার ওপর! বাক স্বাধীনতার  অভাব, পঁুথিগত শিক্ষায় শিক্ষিতের হার বাড়লেও মানবিক শিক্ষার মান তলানি তাই মানুষ আজও চেতনালুপ্ত তাই ভারতের প্রাচীন ও ঐতিহ্যশালী ভারত তথা রাষ্ট্রসংঘের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত, পৃথিবীর মধুরতম যে ভাষার জুড়ি পাওয়া যায় না সেই বাংলা ভাষাকে ভারতের সরকার ধ্রুপদী ভাষা স্বীকার করতে অস্বীকার করে তারা সহজাতভাবে ভারতের ৪৪টি ভাষা সহ সংসৃকতিকে বিলুপ্তির পথে ঠেলে দিচ্ছে, কারণ যেকোনো ভাষা সেই দেশের নাগরিকদের সাহিত্য ও সংসৃকতির কত উন্নত তার মানদণ্ড ভারতের বর্তমান কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের জালবিছাতে গিয়ে ভারতীয়দের ভাষা ও সংসৃকতিকে হয় বিকৃত করছে নতুবা অবলুপ্ত করছে কারণ সীমাহীন শোষণের বিরুদ্ধে কেউ যেন মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে না পারে

ভারত ভূমি থেকে প্রতিবাদী কন্ঠস্বরকে স্তব্ধ করাই শোষকের একমাত্র উদ্দেশ্য নোটবন্ধী, জিএসটি, রাজনৈতিক নেতাদের বেচা কেনায় বেশী করে  মনঃসংযোগ ও অর্থের, সম্পদের নানাভাবে বর্হীস্রোত, তৎসহ ভারতের কয়েকজন পূঁজিবাদীর কাছে অর্থ ও সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার ভারতের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ আজ ভঙ্গুর হয়ে গেছে যার পরিণতি ভারতের কর্মসংস্থানের নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তির হয় দিশেহারা নয়তো  পূঁজিবাদের করাল  গ্রাসে স্তব্ধ  হয়ে আছে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলি সরকারের তাঁবেদারী করতে ব্যস্ত, নাগরিকদের নৈতিক মান নেতা ও টাকা সর্বস্ব হওয়ায় আদর্শ বলে কিছু নেই বিচার ব্যবস্থা কেন ধনীর দ্বারা পরিচালিত (বিচারপতির কথায়), বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে ভারতীয় আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য আজ ভূলুন্ঠিত, রাজ্যগুলি ভৌগোলিক ও রাজনৈতিকভাবে ভারতীয় ঐতিহ্যের পরিপন্থী, যার ফলে পরিকল্পনা ও পরিকাঠামো গতভাবে আর্থিক উন্নতিতে পিছিয়ে পড়েছে, বর্তমান রাজনৈতিক কেন্দ্রীয় দলগুলো দেশের ও নাগরিকদের সুখ সাচ্ছন্দ্যের  প্রতি যতটা না সচেতন তার থেকে বেশী এমএল এম পি কেনার বিনিময়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে ব্যস্ত আর এর প্রভাব পড়ছে  ছোট বড় নেতা উপনেতাদের ওপর তারাও সময় বুঝে আদর্শবিহীন ভাবে অন্যদলের কাছে বিক্রি হয়ে যায় ভারতের দারিদ্রতা নেই বললেই চলে কেননা বর্তমান সরকারের মন্দির মসজিদ চার্চ বা বিভিন্ন ধর্মীয় মতবাদের নামে উঁচু উঁচু ভগবান বা আল্লাহর  বাড়ি তৈরী হচ্ছে প্রতিযোগিতা করে নেতা উপনেতাদের বিশাল মাপের মূর্ত্তি বানাতে কয়েক হাজারো কোটি খরচ করা হয় তবে কীনা ভবিষ্যতের প্রজন্ম তাদের মনে রাখবে! কিন্তু সারা ভারতে কয়েক কোটি মানুষের একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই এখনও এমন মানুষ আছেন তাদের এক বা দুই বেলা কাজে না গেলে সংসারে সকলকে উপবাসে থাকতে হয় অন্যদিকে দেখুন ভারতের ৫২ পরিবার কয়েক  হাজারো কোটি টাকা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিলেও তাদের ওই ঋণ থেকে মুক্ত করেছে, আবার ওই ঋণ অনাদায়ী ব্যষ্টিরা ভারতের সরকারের নেতা মন্ত্রীদের ঈশারায় ভারত ত্যাগ করে আবার সেই নেতা মন্ত্রীদের সন্তুষ্ট রাখতে পার্টি ফাণ্ডে কোটি কোটি টাকা দানও করে যান সরকার সাধারণ মানুষের জন্য নাটক করে বলছেন তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি দেবেন, এ সব ছেলে ভোলানো নাটক ছাড়া  আর কিছুই নয় পাশাপাশি সারা ভারতের ৫০ হাজার বা ১ লাখ টাকার  ব্যাঙ্ক ঋণের দায়ে হাজার হাজার কর্ষক  আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে সেই অভাগা কর্ষকদের পাসে দাঁড়াতে অভুক্ত সমাজের কোন নেতাকে পাওয়া যায় না

এবারের স্বাধীনতার বড় খবর অসম রাজ্যের বাঙালীদের জন্য বিরাট উপহার  উৎসর্গ করতে যাচ্ছে অসম সরকার অতীতে যে ভারত ভূমিতে অসম বলে কোন রাজ্য ছিলো না ব্রিটিশ শুরু থেকেই বাঙালী ও বাঙালীস্তান বিদ্বেষী হওয়ার ফলে মঙ্গোলিয়ান বংশধরদের বাঙালীস্তানে উত্তর পূর্বাঞ্চলের অসমতল স্থানটিকে নিয়ে অসম নামে একটি নতুন রাজ্য তৈরী করলেন বলা হয়ে ছিলো ওই অঞ্চলের ভাষা সংসৃকতি সহ বাঙালীদের সকল প্রকার মৌলিক অধিকারের ব্যবস্থা থাকবে অথচ সেই মঙ্গোলিয়ানদের দেখুন ভারতের স্বাধীনতায় তাদের কোন অবদানই নেই যে বাঙালীর রক্তের বিনিময় ভারত আজ স্বাধীনতা পেয়েছে সেই বাঙালীরা ভারতের মাটিতে ২৩ নং নাগরিক এখানেই ভারতের সংবিধানকে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদীরা কতটা বাঙালী ও বাংলা বিদ্বেষী হয়ে ব্যবহার করছেন, সারা ভারতে জুড়ে এর কোনো প্রতিবাদ নেই কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের মত বাঙালী বিদ্বেষী কালো আইন ব্যবহার  করতে প্রস্তুত অসমের বাঙালীরা আজ ভারতের  মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে চলেছে এমনকী ৫০৫৫ বছর বসবাস করার পরও বাঙালীরা বিদেশী যে আইনের বলে, মানে বিজেপি সরকার এক দেশ এক আইনে  নানা ধরনের আইন বিলোপ করছেন  তবে কেন বাঙালী সারা ভারতে যে অঞ্চলে বাস করছে তাদের জন্য বাঙালী বিদ্বেষী কালো আইন বিলোপ করবেন না এতেই প্রমানিত  হয় হিন্দি সাম্রাজবাদীরা বাঙালী জাতিসত্তা, ভাষা ও সংসৃকতিরকে চিরতরে ভারত থেকে মুছে দিতে চাইছে ভারতের প্রত্যেকটি কেন্দ্রীয় সরকারের একটি চিন্তা বাঙালী গণচেতনা, বৈপ্লবিক কর্মতৎপরতা ও সৃজনশীলতাকে ভয়ের চোখে দেখে তাই বাঙালীস্তান কেটে বিদেশী গোর্খাদের গোর্র্খল্যাণ্ড যারা ব্রিটিশ ভারত থেকেই বাঙালী বিদ্বেষী, অসম, ত্রিপুরা সহ সারা উত্তর পূর্বাঞ্চাল জুড়ে বাঙালীর অস্তিত্বকে শেষ করতে নানা কালো আইনের নামে ভারতভূমিকে বাঙালী মুক্ত করতে চলেছে আগামীতে ফল ভয়াবহ রূপ নেবে বাঙালী তাঁর হৃতগৌরব পুনঃ প্রতিষ্ঠা করবে ও সামাজিক অর্থনৈতিক দর্শন প্রাউটের (প্রগতিশীল উপযোগী তত্ত্ব) মাধ্যমে শোষণ মুক্ত বাঙালীস্তান গড়বেই গড়বে বাঙালী জাতিসত্তা ভারতের সংবিধান ৩ নং ধারায় বাঙালীস্তান গড়তে বদ্ধপরিকর