সেই সুদিনের প্রত্যাশায়

লেখক
বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়

শ্রমজীবি মানুষেরা এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কাজের সন্ধানে যেতেন, সে খবর কমবেশি দেশের অধিকাংশ মানুষই জানতেন । কিন্তু সেই সংখ্যাটা যে কত তা সাধারণ মানুষ কেন, সরকারও জানত না, তা বোঝা গেল ।করোনা পরিস্থিতিতে দেশে লকডাউন জারি হওয়ার পর এখন যে ছবি আমাদের চোখের সামনে টিভির মাধ্যমে ভেসে উঠছে,তা দেখে যেকোনো বিবেকবান মানুষ শিউরে উঠবেই । শিশু মহিলা সহ হাজার হাজার মানুষ যেভাবে জাতীয় সড়ক ধরে, কোথাও বা রেললাইন ধরে, কেউ সাইকেল চালিয়ে, আবার কেউ কেউ বাসে বা ট্রাকে গাদাগাদি করে  নিজ বাড়িতে ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে সেই কষ্ট চোখে দেখা যায় না । আজো ট্রেনে করে নিজ রাজ্যে ফেরার স্রোত অব্যাহত । কবে এই ফেরার স্রোত বন্ধ হবে কেউ জানে না । দেশে লকডাউন জারি করার আগে কেন্দ্রীয় সরকারের কী উচিত ছিল না যারা বাইরের রাজ্যে কাজ করছিলেন তারা যাতে তাদের নিজ রাজ্যে ফিরে আসতে পারে তার ব্যবস্থা করে দেওয়া ? চতুর্থ দফা লক ডাউন শুরু হবার পরেও এখন ও বহু শ্রমজীবি মানুষ নিজ রাজ্যে ফিরতে পারেন নি । যে দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে তারা দিন কাটাচ্ছে, তা সভ্য সমাজে শোভা পায় না । এইভাবে নিজ রাজ্য থেকে কাজের সন্ধানে শ্রমজীবি মানুষদের ভিন্ন রাজ্যে যাওয়ার প্র য়োজন হচ্ছে কেন ? এনিয়ে বিভিন্ন দল বিভিন্ন রকম মতামত
প্রকাশ করলেও আসল কারণ থেকে দূরে থাকাই শ্রেয় মনে করেছে তারা । অনেকের মতে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করতে চাওয়াও একটি কারণ । আবার কারো কারো মতে ঐসব রাজ্যে কাজের অভাব । মানুষ নিজের ঘর বাড়ি, পরিচিত জন ও এলাকা ছেড়ে বাধ্য হয়েই ভিন রাজ্যে উপার্জ নের জন্য পাড়ি দিচ্ছে । অচেনা, অজানা জায়গায় মানুষ সাধে কী যায় ? দেশের স্বাধীনতার এত বছর পরেও মানুষের কর্ম সংস্থানের নিশ্চয়তা কোনো সরকার ই দিতে পারেনি । ক্ষমতায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দল এলেও অবস্থার পরিবর্তন হয় নি । কেবল দেখেছি ধনী আর ও ধনী হয়েছে, আর খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হয়ে সরকারের দান দক্ষিণার দিকে তাকিয়ে থাকে । নিম্ন মধ্য বিত্তের কথা আর নাই বা তুললাম ! রাজনৈতিক দলগুলোকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তরজা করতে দেখি,  কিন্তু কোনো দলকেই বলতে শুনলাম না --দেশের প্র তিটি মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা,  চিকিৎসা ও বাসস্থানের গ্যারান্টী আমরা দেব ই । আর এই গ্যারান্টী দিতে হলে মানুষকে ক্রয় ক্ষমতা দিতে হবে । অর্থাৎ কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে ।কিন্তু সেদিকে নজর কোথায় ? উল্টে দিন দিন কর্ম হীনের সংখ্যাই বেড়ে চলেছে । সব দলের ই লক্ষ্য শুধু কথার ফুলঝুরি ছুটিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে ক্ষমতায় টিকে থাকা । আর এজন্য যা যা করা দরকার তাই করে চলেছে এইসব রাজনৈতিক দলগুলি ।
লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবি মানুষের ভিন্  রাজ্যে কাজে যাওয়া ও বর্ত মান দুরবস্থা -- এই দুয়ের জন্য ই রাজনৈতিক দলগুলি প্র ধানত দায়ী । দেশবাসীকে সঠিক দিশা দেখাতে ব্যর্থ তথাকথিত সমস্ত রাজনৈতিক দল। শ্রমজীবি মানুষেরা যখন অবর্ণ ণীয় দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিয়ে চলছে, তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজেদের মধ্যে কাদা ছোঁড়া ছুঁড়িতে ব্যস্ত। মানুষের যন্ত্রণা এদের হৃদয় স্পর্শ করে না । ভোট সর্বস্ব এই রাজনৈতিক দলগুলি সবসময় ঘুঁটি সাজিয়ে চলেছে কী করলে ও কাদের কাদের মনোরঞ্জন করলে ভোটে সুবিধা হবে,  আর সেই হিসেব করেই চলে তাদের রাজনীতি।
সকল মানুষের স্বার্থে কাজ হচ্ছে কিনা, সকল মানুষ সুরক্ষিত কিনা কিংবা সবার উন্নয়ন হচ্ছে কিনা তা দেখার কেউ নেই । ক্ষমতাসীন ও বিরোধী সব দলই একই রাজনীতিতে বিশ্বাসী । ফলে দেশবাসী হতাশ । সবাই তাকিয়ে আছে নোতুন  আদর্শ বাদী নেতৃত্ব,  নোতুন পরিকল্প নার অপেক্ষায় । কবে ঘটবে নোতুন সূর্যোদয় ? ভারতের প্রতিটি অঞ্চলের  শ্রীবৃদ্ধির মাধ্যমে কীভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ উন্নত  ভারত গড়ে উঠে সেই সুদিনের প্রত্যাশায় দেশের অধিকাংশ অধিবাসী ।