শিশুদের সর্দি–কাশিতে আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচাতে অভিভাবকদের করণীয়

লেখক
ডাঃ আলমগীর

সর্দি–কাশি কেন হয়? সর্দি–কাশি কেন হয় তা জানতে হলে প্রথমেই কয়েকটি বিষয় জানা প্রয়োজন৷ বিশেষ করে বংশগত ধারা, অ্যালার্জি ও ঋতু পরিবর্ত্তন উল্লেখযোগ্য কারণ৷

ধূলো–বালি, আমিষ জাতীয় খাবার, ফুলের রেণু প্রভৃতিতে অনেক শিশুর অ্যালার্জি হয়৷ আর এই অ্যালার্জি শিশুদের সর্দি–কাশির প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে৷ সুতরাং এগুলি থেকে শিশুদের যাতে দূরে রাখা যায় সে বিষয়ে অভিভাবকদের সর্তক থাকা প্রয়োজন৷ দরকার মনে হলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করা যেতে পারে৷ আবহাওয়া পরিবর্ত্তন সর্দি–কাশির প্রধান কারণ৷ সাধারণত শীতে ও বর্ষায় ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা বাড়ে৷ আবার গরমে ঘাম শরীরে বসে গিয়ে ঠাণ্ডা লাগতে পারে৷ ঠিক ঋতু পরিবর্ত্তনে হঠাৎ ঠাণ্ডা গরম বৃদ্ধি পেলে সর্দি–কাশি হওয়ার সম্ভবনা থেকেই যায়৷ আবহওয়া পরিবর্তনের সময় ঠাণ্ডা লাগার প্রধান কারণ, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণ৷

সর্দি–কাশি হলে কি কি উপসর্গ দেখা যায়? সাধারণ সর্দি–কাশি হলে নাক বন্ধ হয়ে যায় বা নাক থেকে সবসময় জল ঝরতে থাকে, মাথা ভার থাকে, গলা ব্যথা হয়, শরীরে ব্যথা, অস্বস্তি, জ্বর ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ কখনও কখনও বুকে সর্দি বসে গিয়ে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়৷ খুব বেশী ঠাণ্ডা লাগলে বাচ্চাদের নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, ওলাইটিস প্রভৃতি মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে৷ এছাড়া টনসিলের সমস্যা হতে পারে৷ আবার ত্বকের সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে৷

শিশুদের সর্দি–কাশি হলে কি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন? সব ধরনের ব্যাধিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন ও সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করা জরুরী৷ সুতরাং শিশুরা সর্দি–কাশিতে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলা অভিভাবকদের উচিত৷ অবশ্য সচেতন বাবা–মা আগে থেকে  ঠাণ্ডার হাত থেকে রোহাই পেতে তাদের শিশুদের সযত্নে দূরে সরিয়ে রাখেন৷ শীতের সময় শিশুদের ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করতে গরম কাপড় জামা পরান আবার মাথা, কান, গলা বুক ঢেকে রাখেন৷ সেই রকম ঋতু পরিবর্তনের সময় বাচ্চাদের যাতে হঠাৎ করে ঠাণ্ডা না লাগে তার জন্যে প্রয়োজন মতো জামা কাপড় পরান৷ খালি গায়ে শিশুদের না রাখাই উচিত৷ দুপুরে রোদের সময় কিছু সময়ের জন্যে খালি গায়ে থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু বেলা পড়ার সময় কাপড় জামা শিশুকে পরানো দরকার৷ স্নান করাবার সময় কুসুম কুসুম গরম জলে স্নান করানো উচিত৷ টক জাতীয় ফল এই সময় বেশী করে খাওয়াতে পারেন৷ বিশেষ করে নেবু, কমলা নেবু দিতে পারেন৷

যে সব শিশুদের অ্যালার্জির প্রবণতা আছে তাদের ধূলো–বালি থেকে বাঁচানোর জন্যে মাস্ক্ ব্যবহারে অভ্যাস করাতে পারেন৷ অ্যালার্জির কারণ থেকে বাচ্চাদের দূরে সরিয়ে রাখা শ্রেয়৷

আক্রান্ত বাচ্চাকে দ্রুত চিকিৎসা করানো প্রয়োজন৷ সেই জন্যে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান৷ প্রাথমিক ভাবে নাক দিয়ে জল পড়া, হাঁচি, কাশি বন্ধ করতে অ্যান্টি হিস্টামিন, কাফ সিরাপ, ন্যাজল ডিকনজেস্ট্যাণ্ঢ ব্যবহার করা যেতে পারে৷ সর্দি–কাশি ও শ্বাসকষ্ট বেশী বেড়ে গেলে অ্যাণ্ঢিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে৷ মারাত্মক ব্রঙ্কাইটিসের ক্ষেত্রে নেবুলাইজার, ইনহেলার প্রভৃতি ব্যবহার করা জরুরি৷ কিন্তু ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ সব দেওয়া উচিত নয়৷ শিশুদের ক্ষেত্রে হোমিও চিকিৎসায় ভাল উপকার পাওয়া যায়৷ যা কিছু করা হোক না কেন তা যেন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করা হয় আর এ বিষয়ে মা–বাবার সচেতন থাকা দরকার৷