সময়োচিত কিছু কথা

লেখক
বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়

বাঙলা কেন ভারতের কোনও রাজ্যেই একশ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থানের (শুধুমাত্র চাকরি নয়) ব্যবস্থা হয়নি৷ এর অন্যতম কারণ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যে ধরনের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার  ছিল তা নেওয়া হয়নি৷ সেটা অজ্ঞতার কারণেও হতে পারে, আবার রাজনৈতিক ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ছিল তা ইচ্ছে করেই করা হয়নি৷ ভারতের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুই অনুভব করেছিলেন দেশবাসীর হাতে অর্থনৈতিক ক্ষমতা না এলে রাজনৈতিক স্বাধীনতা মূল্যহীন হয়ে যাবে৷ তিনি বুঝেছিলেন অর্থনৈতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত নাহলে ব্রিটিশদের শোষণ বন্ধ হয়ে শুরু হবে দেশীয় পুঁজিপতিদের শোষণ৷ আজ তারই চরম পরিণতি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে ভারতের সর্বত্র৷ দেশে অনেক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, এখনও হচ্ছে, কিন্তু একশ শতাংশ মানুষের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করা আজও সম্ভব হয় নি৷

রাজ্যে প্রত্যেক মানুষ নিজ উদ্যোগে রোজগার করার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ সরকারি বা বেসরকারি চাকরির জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বাঙলার অনেক যুবক যুবতীকেই দেখা যায় স্বাধীনতাভাবে কোনও ব্যবসা করতে বা উদ্যোগে গ্রহণ করতে৷ এক্ষেত্রে কেউ কেউ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পায়, কেউ  আবার বাড়ির জমানো সামান্য পুঁজি লাগিয়েই শুরু করে৷ সাধারণভাবে ছোটো খাটো ব্যবসা করতে গিয়ে কেউ কেউ লাভবান হচ্ছে, আবার বেশিরভাগক্ষেত্রেই দেখা যায় বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে লড়াইয়ে এঁটে উঠতে পারছে না৷ তাদের মধ্যে অনেকে আবার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে না পেরে হতাশায় ডুবে যাচ্ছে৷ অনেকক্ষেত্রে আত্মহননের পথ ও বেছে  নিচ্ছে কেউ কেউ৷ রাজ্যবাসী হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে বলে মনে হয়৷ একটু খুলে বললে সকলের কাছেই বিষয়টা পরিস্কার হয়ে যাবে৷ বাঙলার বিভিন্ন এলাকায় (পাড়ায় পাড়ায়) অনেক কর্মহীন যুবক যুবতী নিজ চেষ্টায় বা যৌথ উদ্যোগে নিত্য প্রয়োজনীয় নানান ধরনের  জিনিস তৈরি করছে৷ আবার কেউ কেউ খাবার দোকান চালাচ্ছে৷ দোকান খুলে অনেকে আবার ক্রেতাদের কাছে টানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ হয়তো তারা ঝাঁচকচকে চোখ ঝলসানো দোকান ঘর বানাতে পারেনি৷ বা ‘‘ফ্রি’’ এর প্রলোভন দেখিয়ে খদ্দের টানতে পারছে না৷ কিন্তু তারা এক বুক স্বপ্ণ নিয়ে নিজের ও পরিবারের বেঁচে থাকার রসদ জোগাড়ের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ রাজ্যের অর্থনৈতিক প্রগতির কথা ভেবে তাদের পাশে রাজ্যবাসীর দাঁড়ানো নৈতিক কর্তব্য বলেই মনে হয়৷ স্থানীয় মানুষদের উচিত এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য তাদেরকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করা৷  নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পাড়ার বা স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনলে তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হতে কিছুটা সাহায্য করা হবে বলেই আশা করা যায়৷ স্থানীয় অর্থনীতিতেও এর ভালো প্রভাব পড়তে বাধ্য৷ এই বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষ গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে দেখেন না বলেই ছোট ছোট দোকানদার বা ক্ষুদ্র উদ্যোগপতিরা পিছিয়ে পড়ছে৷ অনেকে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে৷ অথচ এদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো৷ তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারলে লাভবান কেবল তারাই হবে না৷ লাভ হবে রাজ্যের অর্থনীতিরও৷