সময়োচিত কিছু কথা

লেখক
বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়

ভারতের নির্বাচন কমিশন লোকসভা, বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা প্রভৃতি নির্বাচনগুলি পরিচালনা করে থাকে৷ এটি সংবিধান স্বীকৃত স্বশাসিত সংস্থা৷ মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ করে থাকেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মহোদয়৷ নির্বাচন কমিশনের হাতে অনেক ক্ষমতা দেওয়া আছে৷ যদিও সে ব্যাপারে দেশবাসী প্রথম ভালোভাবে তাদের ক্ষমতা বুঝতে পারে যখন টি, এন,শেসন (১৯৯০-১৯৯৬) মুখ্য নির্বাচন  কমিশনার ছিলেন৷ ভোটারদের সচিত্র পরিচয় পত্রের ব্যবহার প্রথম তাঁর আমলেই শুরু হয়েছিল৷ এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল৷ বুথ জ্যাম, রিগিং, নির্বাচনী সন্ত্রাস ইত্যাদি প্রশমনের জন্য কমিশনের ভূমিকা কখনও প্রশংসিত হয়েছে, আবার কখনও তাদের সিদ্ধান্ত দেশে নিন্দিত হয়েছে৷ অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানান জটিলতা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে৷ ই.ভি.এম. না ব্যালট পেপার --- কীভাবে ভোট গ্রহণ করলে ১০০ ভাগ স্বচ্ছতা থাকবে  তা নিয়ে বিস্তর মতপার্থক্য আছে৷ দুয়েরই সুবিধা অসুবিধা আছে৷ আসলে  ভোট পরিচালকদের নিরপেক্ষতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা থাকলেই এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলেই মনে হয়৷ এছাড়াও অনলাইনে ভোটদানের ব্যাপারে কিছু চিন্তা ভাবনা করা যায় কিনা, সেটাও নির্বাচন কমিশন বিবেচনা করে দেখতে পারে৷ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নানান অসদুপায় অবলম্বন করে থাকে৷ এটা কীভাবে  বন্ধ করা যায় নির্বাচন কমিশন কে সে  ব্যাপারে যেমন সতর্ক থাকতে হবে, তেমনি কড়া অবস্থান নিতে হবে৷

লোকসভা বা বিধানসভা--- যেকোন নির্বাচনের আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভোটে জয়লাভ করলে তারা জনগণের  জন্য কী কী  করতে  চায় সেই সব প্রতিশ্রুতি সম্বলিত ইশতেহার প্রকাশ করে থাকে৷ সেসব যেমন ছাপার অক্ষরে থাকে তেমন জনগণের সামনে তুলে ধরা হয় বিভিন্ন সভা বা সমাবেশের মাধ্যমে৷ নেতারা জ্বালাময়ী বত্তৃণতা দিয়ে জনমতকে নিজেদের দিকে টেনে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করে৷ এতে কোন দল সফল হয়, কেউ ব্যর্থ হয়৷ এটা হতেই  পারে৷ কখনও কখনও এমনও হয় ভোটাররা সবদিক বিবেচনা  না করেই নানান ধরনের লোভনীয়  প্রতিশ্রুতিতে আকৃষ্ট হয়ে  একতরফাভাবে কোনো দলকে ভোট দিয়ে দেয়৷ পরে দেখে ঐসব প্রতিশ্রুতি পালন করা হয়নি৷ আসলে আমজনতার  বিরাট একটা অংশ নিজেদের দৈনন্দিন সমস্যার সঙ্গে  লড়াই করে নিজেদের বেঁচে থাকার রসদ জোগাড় করতে করতেই সারাদিন কাটিয়ে দেয়৷ ফলে দেশে কালো টাকা ফিরল কিনা অথবা বছরে দুকোটি করে বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হল কিনা--- এসব নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার সময় থাকে না৷ নতুন নতুন ইস্যু চলে আসে৷ সেসব নিয়েই মানুষ আবার মেতে যায়৷ দুর্বল স্মৃতির কারণেই মানুষ একটু পুরোনো ঘটনাগুলো ধীরে ধীরে  ভুলে যেতে থাকে৷ আর সেটাই চায় যেকোনো ক্ষমতাসীন  দল৷ এটা শুধু এখন বলে নয়, দীঘদিন ধরেই চলে আসছে৷ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির মধ্যে হয়তো দুচারটি পূরণ করল, বাকিগুলোর ক্ষেত্রে নানারকম যুক্তির অবতারণা করে সাধারণ মানুষের মনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়৷ এ জিনিস কীভাবে বন্ধ হতে পারে নির্বাচন কমিশনকে ভেবে দেখতে অনুরোধ করি৷ এ ব্যাপারে আমার অভিমত নির্বাচনের পূর্বে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল লিখিত বা মৌখিকভাবে যেসব প্রতিশ্রুতি দেবে, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পর সেই সব প্রতিশ্রুতি যদি পাঁচ বছরের মধ্যে বাস্তবে রূপায়িত না হয় তাহলে সেই দলকে পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়া৷ এইধরনের কোনো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক দলগুলোর উপর কোনও  আস্থা তৈরী হবে না৷ সম্ভবত নির্বাচন কমিশনের হাতে এই ক্ষমতা এখনও নেই৷ তবে কমিশনের হাতে এই ক্ষমতা থাকা উচিত বলে আমার মত আরও  অনেকেই মনে করেন৷ নির্বাচন কমিশন কীভাবে এই অধিকার  পেতে পারে সে ব্যাপারে এখন থেকেই চিন্তা ভাবনা শুরু হওয়া দরকার৷